Thursday, December 31, 2020

স্কেচ : দুই

যারা আজ আসেনি এলোমেলো বিকেলের আড্ডায় ওরা সবাই কোথায় গেছে তুমি কি জানো?


"ওরা কেউ ফুল তুলতে গেছে বাগানে। কেউ গেছে টাকার খোঁজে আর কেউ নিরুদ্দেশে।"


তুমি গেলে না?


"পথগুলো খুব অচেনা মনে হলো। মনে হলো হারিয়ে যাবো। আর বাড়ি ফিরতে পারবো না"


তোমার বাড়ি? কোথায় তোমার বাড়ি?


"আছে একটা। নদীর ধারে। তোমরা দেখতে পাবে না।"


কে আছে তোমার বাড়ি?


"আমার সবচেয়ে পুরোনো বন্ধুরা। তোমরা চিনবে না।"


তবে চিনিয়ে দিলেই পারো


"আচ্ছা। সময় আসুক, পরিচয় করিয়ে দেবো একদিন। এখন আসি।"


এখন কোথায় যাচ্ছো?


"নদীর ধারে। কিছু বুনো ফুল, পাতা আর ঘাস লাগাবো বাড়িটার চারদিকে। আকাশেও নীল রংটা একটু বাড়াতে হবে আর তুলি দিয়ে কিছু সাদা মেঘ আঁকবো। নদীর জলে একটা ডিঙ্গি। মাঝিটা গাইতে পারলে ভালো হয়।"


আমাদেরও নিয়ে চলো


"আজ নয়। পরে একদিন। সময় হলে তোমরা নিজেরাই চিনে চিনে চলে এসো।"




স্কেচ : এক

মেয়ে তুমি চাও কোন রং বলো তো?


"আমি ওই নীল চাই 

সবুজ গোলাপি হলুদও চাই

বিমর্ষ ছাই চাই

সাদা চাই

কালো ভীষণ একাকী কালোও চাই"


মেয়ে তুমি কোথায় যাবে ঠিক করেছো?


"যেখানে ঝুম বৃষ্টি নামে আর মাটি খুব নরম

যেখানে সূর্যের খুব তেজ

যেখানে পাহাড়গুলো নীল মনে হয়

যেখানে গাছেরা মানুষের মতো কথা বলে"


মেয়ে তুমি স্নান করো ঠিকঠাক?


"হুম করি

যখন জোছনা নামে কিংবা বৃষ্টি হয়

জানো তো আমার জন‍্য অপেক্ষায় থাকে সমুদ্র"


গান জানো? নাচ জানো? 


"আমি গান বাঁধি মনে মনে

আর গাই আত্মাদের কানে কানে

ঘুরে ঘুরে নাচি তার আর তালের যাদুতে

তখন একদম পা ফেলিনা মাটিতে"


মেয়ে তুমি স্বপ্নে কি দেখো?


একটা ছোট আলো সুড়ঙ্গের শেষে

আর দেখি পড়ছি অনেক উঁচু কোনো আকাশ থেকে


ঘুমাও তুমি? খাবার খাও?


"আমি ঘুমিয়ে পড়ি যখন যেখানে ইচ্ছে হয়

আর যখন খিদে পায় খাবার ঠিক পেয়ে যাই"


আর কি ভালোবাসো তুমি মেয়ে?


"একটা করুন সুর ভালোবাসি

আবছা মনে পড়ে আবার পড়ে না

ওই সুরে আছে অপূর্ব সত‍্য"


মেয়ে তুমি খুব বোকা না কি?


"আমি বোকা সেজে থাকি

আর একেবারে বোকাই হয়ে যেতে চাই

বোকা হলে ঠিক জানি মনে পড়বে সুরটা"





টুকরো কথা : বাতি

আজ সন্ধ‍্যায় বেরিয়েছিলাম। বিজয় নগরের বাতির দোকানগুলো সব ঘুরলাম। এতো সুন্দর সুন্দর বাতির মিছিল বাতির ঝাড়। চোখ একদম ধাঁধিয়ে যাবার জোগাড়। টাকা থাকলে হয়তো কেনার কথা ভাবতাম কোন একটা আধুনিক যাদুকরী ঝাড়বাতি। কিংবা হয়তো ভাবতামই না। কিনে লাগাবোটা কোথায়? এতো ঝকঝকে দামি বাতি এই ঘরে বড় বেমানান লাগবে। একটা সময় ভাবতাম যেদিন টাকা হবে অনেক এটা কিনবো ওটা কিনবো। এখন আর ভাবিনা। বরং টাকা না থাকাটা উপভোগ করি কারন ওটা না থাকলেই সব চাহিদার উর্ধ্বে থাকা যায়। বাবার কথা, রুপার কথা মনে পড়ে। ওরা খুব অল্পতে খুশি ছিল। বাবা বলতো "মাগো আমার সব আছে, কেন শুধু শুধু পয়সা নষ্ট করবে? অপচয় করে না মা।" বাবাকে তাও মাঝে মাঝে কিছু ট্রেন্ডি জিনিস কিনে দিতাম। সবাই হাসতো বলতো আমি নাকি পাগল এসব বাবা কোনোদিন পরবে না। কিন্তু বাবা ঠিক পরতো আর মিটমিট হাসতো। সবাই তখন অবাক হয়ে ভাবতো এই ষাটোর্ধো জীর্ণশীর্ণ প্রচন্ড অসুস্থ লোকটা যেকোনো পোশাকই এতো ভালো carry করে কি করে। বাবা ছিল একটা RealDude, সে যখন খুব অভাবে ছিল প্রথমজীবনে তখনও আর যখন আমি ওকে সাজাতে পেরেছি তখনও। সারাজীবন। এতো আলো ছিল তোমার বাবা... এতো আলো! তোমার চারদিকে কি অলৌকিক আলো ছড়িয়ে থাকতো। এখনো থাকে, যখন তুমি আমাকে ঘুমের ভেতর দেখা দিয়ে যাও, সাহায‍্য করতে আসো।

ছোট ছোট কিছু বাতি কিনেছি নীল আর সাদা। গানের ঘরে নীল আর কালো দেয়ালগুলোতে লাগাবো। কিছু নীল গান বানাতে চাই। কয়েকটা কালো আর কয়েকটা অন‍্য রঙেরও। কিংবা পরতে পরতে কয়েক রঙা ছবির মতো কিছু দুঃখের কিংবা আনন্দের গান। আগে থেকে বলাটা মুশকিল। শেষে সবকিছুর কেমন একটা অন‍্য মানে যেন দাঁড়ায়। বাবা মনে আছে তুমি বলতে "মাগো, তুমি আমার ছেলের চেয়ে বেশি। এমন মেয়ে পেলে ছেলের কি দরকার?" সময় সমাজ প্রতিমূহুর্তে আমায় আস্তাকুঁড়ে ছুঁড়ে  ছুঁড়ে দিয়ে সারাজীবন জানাতে চেয়েছে আমার সত‍্যিকারের অবস্থানটা কোথায়। মুখ থুবড়ে শুধু পড়ে থেকেছি আবর্জনায় অন্ধকারে। প্রতিবার তুমিই শুধু হাতে একটা বাতি নিয়ে আমার কাছে আসো। যখন বেঁচে ছিলে তখনও আর এখনও। 

শোয়া থেকে উঠতে ইচ্ছে করেনা। তার চেয়েও মনে হয় যেন পারি না। তাও আরেকবার চেষ্টা করবো। বারবার করবো। শুধু নীল বাতিগুলোয় চলবে না। তুমিতো আছো বাবা। আলো অন্ধকারে সারাজীবন আছো। জানি আমি।

https://soundcloud.com/krisbowers/hope?ref=clipboard&p=a&c=0



Wednesday, December 30, 2020

গল্প : পাঁচ : এখনো সারেঙ্গীটা বাজছে

যে বুড়িটা থাকতো পাহাড়ের একদম চুড়ায় পুরোনো সেই কাঠের বাড়িটায়, তার সত‍্যি বলতে কি বয়সের কোনো গাছ পাথর ছিল না। তার চুলগুলো ছিল শনের মতো রুক্ষ আর শরতের মেঘের মতো সাদা ও হালকা। হালের সান্তাদের মতোই ওর মুখে কোনো বলিরেখা ছিল না। রুপকথার ডাইনিদের মতো ওর কোন ঝাড়ু তো ছিলনা কিন্তু ওর ছিল বেশ বড়সড় একটা ড্রোন। বুড়িটা ছোটখাটো ছিল তাই সহজেই ড্রোনটার পিঠে বেশ আয়েস করেই বসতে পারতো আর ওর হাতে থাকতো রিমোট কন্ট্রোল আর একটা মনিটর যেটা ওর কোলে নয় বরং বাতাসেই ঝুলে থাকতো। ড্রোনটার মতো মনিটরটাও ওর সব কথা বুঝতে পারতো আর শুনতে বাধ‍্য ছিল। ওদের দুজনকেই সে একেবারে জাপান থেকে স্পেশাল কাস্টোমাইজড অর্ডার করে আনিয়েছিল। ওরা সব কথা বুঝলেও বুড়িটা রিমোট কন্ট্রোলটা ব‍্যাবহার করতেই বেশি পছন্দ করতো, কারন সে চাইতো ড্রোনটা এবং মনিটরটা সবসময় নিজেদের শুধুমাত্র যন্ত্র ভেবেই একটা নচ্ছার হীণমন্যতায় ভুগুক। বুড়িটা বলার অপেক্ষা রাখে না একদমই যে একটা আস্ত হাড় বজ্জাত ছিল। 


বুড়ি ঘুম থেকে উঠতো বেলা বারোটার পর তারপর দরজা খুলে বেরিয়ে দীর্ঘ‍্যদিন না মাজা দাঁতগুলো বের করে দগদগে সূর্যটার দিকে তাকিয়ে হাসতো আর দুহাতে কাঁচকলা দেখিয়ে বলতো 


"আজকেও পারিসনি

তোকে ভালোবাসিনি

থাকবো আমি কাঠের ঘর

পশ্চিমে তুই ডুবে মর"


ডুমুর গাছের ছটফটে কিন্তু নীরিহ ধুসর আর কমলা রঙের কাঠবিড়ালিগুলো ভীষন ভয় পেয়ে যেতো বুড়ির অমন ফ‍্যাসফ‍্যাসে ঠান্ডা মেজাজের  গলায় ছড়া কাটা শুনে। আর ছুপুত ঝুপুত করে পাতার নিচে লুকিয়ে পড়তো। টের পেয়ে বুড়ি গম্ভীর গলায় বলতো


"হ‍্যাঁরে বলি ছটফটেরা

লুকাস ক‍েনো হতচ্ছাড়া?

দেখলি হলো কত্তো বেলা?

খেয়ে নিলি সব একলা?

গোটা কয় পাকনা বেছে

নিয়ে আয়তো আমার কাছে"


কাঠবিড়ালিদের নেতা বৃহৎকেশ, সবাই ওকে শ্রদ্ধা করে ডাকতো বিগঅ‍্যাস (BIGASS), যার ছিল সবচেয়ে বড় এবং সবচেয়ে মোটা, কালো আর কমলা রঙের ডোরাকাটা লেজ, কাচুমাচু করে পাতার আড়াল থেকে বেরিয়ে নিচের দিকের একটা ন‍্যাড়া ডালে দুইপায়ে ভর দিয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়াতো আর সামনের দুটো পা কচলাতে কচলাতে বলতো "আসলে ম‍্যাডাম, হয়েছে কি রাত বিরেতে চামচিকেদের বড্ডো উৎপাত বেড়েছে আজকাল, ব‍্যাটারা চোখে তো দেখতে পায়না কিন্তু এলোপাথাড়ি এমন তান্ডব চালায় যে খাওয়ার চেয়ে নষ্ট করে বেশী। কোয়ালিটি কন্ট্রোলের একেবারে যাচ্ছে তাই অবস্থা। আর..."


এতোটুকু শুনেই বুড়ি বিরক্ত হয়ে পড়তো আর ঝাড়ি মেরে বলে উঠতো


"স্টপ ইন্ট্রোডাকশান পাজির পা ঝাড়া

আসল কথা বল ভনিতা ছাড়া"


বিগঅ‍্যাস একটু ভয় পেয়ে যেতো। তারপরও বুকে থুতু দিয়ে ঢোক গিলে আমতা আমতা করে বলে যেতে থাকতো "ইয়ে মানে আর তাছাড়া কাকগুলো তো আছেই, দু একটা ফিনিশড প্রোডাক্ট তারপরও যা বের করি তা ওরা দলবেঁধে এসে আমাদের ঠোকরাতে ঠোকরাতে কেড়ে নেয়। এখন আপনার সাহায‍্য খুব প্রয়োজন ম‍্যাডাম। এই পাহাড়ের জিডিপি ভীষণ হুমকির মুখে আর জনসংখ‍্যা যে হারে বাড়ছে তাতে পার ক‍্যাপিটা... এতটুকু বলে বিগঅ‍্যাস বুঝতে পারতো সে বুড়ির ধৈর্যের সীমা অতিক্রম করে ফেলেছে প্রায়। তাই নিজেকে সামলে গড়গড় করে বলতে থাকতো "তবে আজকের জন‍্য কটা পেয়ারা... যদিও তেমন একটা পাকা..."


কথা শেষ করবার আগেই বুড়ি বিকট হুঙ্কার দিয়ে বিগঅ‍্যাস এর দিকে তর্জনী নির্দেশ করে বলতো


"চোর ছ‍্যাঁচ্চড় নিপাত যাক

গুয়ের মাছি হয়ে যাক"


বিগঅ‍্যাস ভয়ে দুচোখ বন্ধ করলেও এতে তার শুধু একটু পেটে শুড়শুড়িই লাগতো মাত্র আর ইচ্ছে না থাকা সত্ত্বেও হেহে হেহে করে হেসে উঠতো। বুড়ি রাগে গজগজ করতে করতে ঘরে ঢুকে পড়তো। মনটা ভীষন খারাপ হয়ে যেতো তার। সবকটা একেকটা চোর বদমাস। যে ব‍্যাটাকেই দায়িত্ব দেয় দুদিন পরই ডাকাত হয়ে যায়! সে কি জানে না যে এই পাহাড়ের যতো খাসাখাসা ডাঁসাডাঁসা সবকিছু শহরের বরফ ঠান্ডা সুপার শপগোলোতে পাচার হয়ে যাচ্ছে আর কি চড়া দামেই না বিকোচ্ছে। নিমকহারামগুলো কি এক ভ‍্যাকসিন নিয়েছিল যে বুড়ির পুরোনো মন্ত্রগুলো আর কোনো কাজই করছিল না এদের ওপর। হতাশ হয়ে বুড়ি বিড়বিড় করে বলছিল


"ভেবেছিলাম আজ থেকে করবো শুরু ডায়েট

মিনিমালিস্ট ভেজিটেরিয়ান লো কার্ব নো ফ‍্যাট"


বুড়ি ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেলে ছাদের দিকে উদাস হয়ে তাকিয়ে থেকেই বললো


"যা তো ড্রোন ছুটে যা

আন বিফ পিৎজা

যাবি আর আসবি

নয় এখনি মরবি"


ড্রোন বলে উঠলো "ইয়ে...হোম ডেলিভারি নিলে হয় না? সময় বাঁচে। অফার থাকে। তাছাড়া প‍্যানডেমিকের সময়। বোঝেনই তো আমার স্টীল বডি। অতো গোসল করলে কলকবজা... আই মিন শরীরে জং পড়ে যাবে না?" বুড়ি চোখদুটো ছোট করে আর ঠোঁটদুটো ছুঁচলো করে ড্রোনের দিকে এক মুহুর্ত তাকিয়ে থাকলো তারপর তাচ্ছিল‍্যভরে রিমোটে 'ওকে' বাটন প্রেস করলো। 


দশ মিনিটের মধ‍্যে পিৎজা এসে হাজির হলো। ডেলিভারি ড্রোন গার্লটা অত‍্যন্ত নিপুনভাবে সোশাল ডিসটেন্সিং এবং হাইজিন ম‍্যানটেইন করে টেবিলে তা পরিবেশনও করে দিল। তারপর ওর গোলাপি এন্টেনা দুটো বাঁকিয়ে সৌজন‍্য দেখিয়ে বেরিয়েও গেল। বুড়ি খেতে বসতেই বুড়ির ড্রোন ছুটে এলো আর হড়বড় করে বললো  "বাইরে কাক চিলের এতো উৎপাত! ম‍্যাডাম,  আমি ওনাকে একটু এগিয়ে দিয়ে আসি। কি বলেন?" বুড়ি এমন ভাব দেখালো যেন কিছু শুনতেই পাচ্ছে না। ড্রোন তড়িঘড়ি বেরিয়ে যেতেই মনিটরটা বুড়ির কানের কাছে এসে কুচুটে গলায় বললো "দেখলেন ম‍্যাডাম ড্রোনটা কত্তো বড় একটা লুইচ্চা লাফাঙ্গা। সব ওর আগে থেকে প্ল‍্যান করা..."। বুড়ি রিমোটকে ইশারা করলো মনিটরটা মিউট করে দিতে। খাওয়া দাওয়ার সময় কানের কাছে আজাইরা কুটনামি ধাঁচের বকবক তার একদম পছন্দ না। আর তাছাড়া নানান ঝামেলায় প্রায় দুপুর একটা বাজতে চললো।


খাবার দাবার খেয়ে ফ্রি কোলাটা গলায় ঢালতে ঢালতে কিছুক্ষণ নেটফ্লিক্সে চোখ রাখলো বুড়ি। কিন্তু এতো এতো সিরিয়ালের ভীড়ে কোনটা দেখবে ঠিক করতে না পেরে শেষে বেচারা ড্রোনকেই ডেকে পাঠালো। সে হন্তদন্ত ছুটে আসতেই ধমক দিয়ে উঠলো 


"কোথায় থাকিস নচ্ছার?

হাওয়া খাবো সাগর পাড়"


বলেই কিছু চিপসের প‍্যাকেট আর বাদামের কৌটো নিয়ে ধপাস করে বসে পড়লো ড্রোনের পিঠে আর রিমোটটা দিয়ে ইন্সট্রাকশান দিতে থাকলো। অন্তত একশো ফুট ওপর দিয়ে ওরা চলতে থকলো শহরের দক্ষিণ দিকে। বুড়ির মেজাজটা ততোক্ষণে বেশ ফুরফুরে হয়ে উঠেছিল। ওর সাদা চুলগুলো পাখির ডানার মতো উড়তে থাকলো, আবেশে যেনো চোখ বন্ধ হয়ে যেতে চাইলো। মনিটরে ড্রোনের হাই ডেফিনেশন ক‍্যামেরায় তোলা নিচের সব ছবি আসতে লাগলো আর কোনোটা গুরুত্বপূর্ণ মনে হলেই মনিটর তার বিস্তারিত জানাতে থাকলো। দুপুর দেড়টা নাগাদ ওরা পৌঁছে গেল একেবারে সমুদ্রের পাড়ে কনক্রিটের ব্লকের ওপরে।


বুড়ি একটা ব্লকের ওপর বসতো। রিমোটটা পাশে রেখে দিত। ড্রোন আর মনিটরও আশেপাশেই থাকতো। ওরা জানতো বুড়ি তখন একদম অন‍্যরকম হয়ে যাবে আর এক মনে বিড়বিড় করতে থাকবে। দিনের এই সময়টাতেই শুধু ড্রোন আর মনিটরকে এমন কি রিমোটকেও একটু মানুষ হিসেবে গণ‍্য করতো বুড়ি। তবে ওরা বুঝতো না এই দুপুর দেড়টার ঠা ঠা রোদ্রে আর কোন পাগল সমূদ্রের হাওয়া খেতে চাইতে  পারে। ড্রোন বেচারা এতো গরম হয়ে উঠতো যে সে সারাক্ষণ তার কলকবজা নিয়ে ভয়ে থাকতো আর মনিটরের এমন চোখ ধাঁধিয়ে যেতো যে মনে হতো এই বুঝি চিরতরে অন্ধ হয়ে গেল। কিন্তু ওদের অপেক্ষা করা ছাড়া আর বুড়ির বিড়বিড় শোনা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকতো না। আর এভাবেই চলতে থাকতো বেলা তিনটে নাগাদ। তারপর বুড়ি আবার বাড়ি ফেরার জন‍্য তড়িঘড়ি শুরু করতো। কেন যে এমন করতো কে জানে? শুধু একদিন জিজ্ঞেস করতেই খেজুর গাছের বুড়ো তক্ষকটা বলেছিল "জানিস কি? তোর ঠ‍্যাং, তোর বাপের ঠ‍্যাং? যাচ্ছে তাই জেনারেশান! বুড়ির যে সূর্যাস্ত দেখতে নেই তাই জানিস না?" ওরা আরও কিছু জানতে চাইলে বুড়োটা খ‍্যাঁক করে উঠেছিল "থুতু মেরে একদম জ্বালিয়ে দেব চকচকের দল আর যদি ত‍্যাক্ত করিস। নিজে নিজে খুঁজে বের কর। সব রেডিমেইড পেয়ে গেলে হয়? একটু ঘাঁট, একটু পড়াশুনা কর ভাই বেরেদার।" নচ্ছার হিংসুটে মারমুখী বুড়ো তক্ষকটাকে ওরা আর কোনোদিন ঘাঁটাতে যায়নি তারপর। কিছু কিছু যা শোনার বুড়ির মুখেই শুনে নিয়েছিল ওরা কোনো প্রশ্ন না করে।


কিছুক্ষণ বসে থাকবার পর বুড়ি বিড়বিড় করতে শুরু করতো


"বুঝলি পাখি? বুঝলি ছায়া?"

(এই সময়টা বুড়ি ড্রোনকে পাখি আর মনিটরকে ছায়া বলে ডাকতো)

"জীবন হলো আজব মায়া

একদিন এত্তোটুকুন ছিলাম

বাবার সাথে সাগর পাড়ে

কত বিকেল ভর খেলতাম

ঝিনুক মালা ঝিনুক দুল

কিনে নিতাম ঝিনুক ফুল

কুশি পেড়ে নকশা কাটা

ফ্রকটা পরে কতো ছুটতাম

তখন কতো পাখি আসতো 

কাঁকড়া কাছিম ছুটে যেতো

আকাশ এতো নীল ছিল

নীল জলে পা ভেজাতাম

যখন আমি বড় হলাম 

এই সাগরে নাইতে এলাম

সাগর পাড়ে হঠাৎ এক 

রাজপুত্তুর দেখতে পেলাম

ভর সন্ধ‍্যায় বালির ওপর 

হাঁটু মুড়ে বসতো সে

বাজিয়ে যেতো সারেঙ্গী

অন্তরীন এক দৃষ্টিতে

এতো করুন সুর বাজাতো

সমূদ্রটা কাঁদতো শুনে

ঢেউগুলো সব আছাড় খেতো

তারাদেরও কান্না গুনে

আমিও তার চারিদিকে

হাওয়ায় ভেসে নাচ করতাম

সুরগুলোকে গায়ে মেখে 

কান্নাগুলো উগড়ে দিতাম

হাতে থাকতো রক্ত গোলাপ

হাতে থাকতো কামিনী

তার কথাই ভেবে ভেবে 

কাটতো দিবস যামিনী

একদিন এতো রাগ হলো

মেহগনির ডাল দিয়ে

দিলাম ক ঘা মাথায় তার 

রক্ত পড়লো গড়িয়ে

সারেঙ্গীটা থেমে গেল

ভিজে গেল রক্ততে

রাজপুত্তুর লুটিয়ে গেল

সূর্যাস্তের সৈকতে

ছুটলাম আমি চারিদিকে

হয়েছিলাম দিশাহারা

সাগর আমায় শাপ দিল

শাপ দিল তারারা

'একলা বেঁচে থাকবি তুই

মরতে কভু চাইবি না

চুলগুলো তোর সাদা হবে

কিন্তু বয়স বাড়বে না

ভালবাসিস যদি নিষ্কাম

দূরের নরম সূর্যকে

মুক্তি পাবি সেদিন তুই

দেখতে পাবি মৃত‍্যুকে'

বুঝলি পাখি? বুঝলি ছায়া?

জীবন হলো আজব মায়া

তারপরে তো কেটে গেছে

দুশো কিংবা তিনশো সন

কাউকে ভালোবাসবো নারে

কাঁদুক আমার সবুজ মন"


এই বলে বুড়ি একদম চুপ করে যেত। বুড়ির কথাগুলো  ড্রোন আর মনিটরের কাছে দূর্বোধ‍্য ধাঁধার মতো মনে হতো। কি আর করবে, ওরা তো আর সত‍্যি সত‍্যি মানুষ নয়। তবে ওরা সত‍্যিই চাইতো বুড়ির গায়ের কাছে ঘেঁষে জড়িয়ে বসে থাকতে কিন্তু ঠিক সাহস করে উঠতে পারতো না।


পরদিন সকাল দশটায় সরকারি ম‍্যাজিস্ট্রেটদের হাঁকডাকে ঘর থেকে বেরুতে হলো বুড়িকে। ওরা খুব ভদ্রভাবেই বুড়ির হাতে সরকারি সমনটা দিল আর মুখেও জানালো যে এই কাঠের বাড়িটাকে সরকার বাসের অযোগ‍্য বলে ঘোষণা করেছে তাই বুড়ি ওখানে আর থাকতে পারবে না। আর তাছাড়া সরকার ঠিক করেছে ওই পাহাড়ে একটা আধুনিক ফাইভস্টার রিসোর্ট বানাবে। তাই যত দ্রুত সম্ভব বাড়ি খালি করতে হবে। বুড়ি সব শুনে বাড়িটার দিকে তাকালো কিছুক্ষণ। দেখলো আরে সত‍্যিই তো বাড়িটাতো আসলেই ভীষণ ঝুরঝুরে হয়ে পড়েছে, জায়গায় জায়গায় তক্তা নেই, একটু যেন বাঁকাও, কোন এক ভুমিকম্পে হয়তো খুঁটি নড়ে গিয়েছিল। বুড়ি ময়লা দাঁতগুলো বের করে হেসে সরকারি ম‍্যাজিস্ট্রেটকে দুহাত জোড় করে ধন‍্যবাদ জানালো। বুড়ির হাসি দেখে ম‍‍্যাজিস্ট্রেটের এমন পিলে চমকে উঠলো সে পড়ি কি মরি করে তাড়াতাড়ি পালিয়ে বাঁচলো। বুড়ি হাঁক দিয়ে উঠলো


"গোলাম আমার কোথায় তোরা

করলে দেরী খাবি গাঁট্টা

গোছগাছ সব নে করে

ছাড়তে হবে শহরটা"


তারপর মাত্র দশ মিনিটের মধ‍্যেই ওরা অন‍্য শহরে রওনা করলো। যেতে যেতে মাঝপথে বুড়ি শুধু একবার মাথার ওপরে তেজী সূর্যটাকে জিভ বের করে কাঁচকলা দেখিয়েছিল।

https://youtu.be/scUSUD-SDvI









আবোলতাবোল : চার

পন্ডিতে কয় পানিভাত

বন্ধুরা কয় দুধভাত

জ‍্যোতিষীরে হাতখান

দেখাইতে চাই


মায় কইছে কালী

দুলাভাইয়ে শালী

আনন্দেতে রাতদিন

কোমর নাচাই


মাইয়ালোক মূর্খ

বুদ্ধি নাই সূক্ষ

যুবকরা ভালোবাসে

গোপনে সানাই


মেট্রো লাইফে

কথা কও মাইপে

কমেন্টের আগে করো

যাচাই বাছাই


কার বাপ ধনী?

কার বাপ ফকিন্নি?

কার পোড়া মুখে

কয় মণ ছাই?


কে গেল ভেগে

কে এলো হেগে

ফেবুতে রাতদিন

ধানাই পানাই


বিড়ি ফোঁকা বিটলা

আজ রুই কাতলা

কাঁচা নোট পাকা নোট

বিনুদোন পাই


মসজিদ মন্দীর

মার্কেটে ধুম ভীড়

কোভিড নাইনটিন

কেয়ার থোড়াই


শক্তের ভক্ত

তেঁতুলের রক্ত

টগবগ ফুটলে

চান্দে পাঠাই


দাড়িওলা শয়তান

গুরুজী আব্বাজান

চোদা দেয় রাতদিন

রাজা বাদশাই


ইস্কাবনের বিবি

মরার আগে ছবি

নিমকহারামের

নিস্তার নাই


শিল্প সংস্কৃতি 

মিনার প্রতিকৃতি 

যাদের ঈমানে লাগে

ধরে লাইত্থাই


শহীদের চেতনা

যারা ধার ধারেনা

তাদের পেছনে চল

আগুন লাগাই


এই দেশ এই মা

হাত দিয়ে দেখনা

ঝাঁটার বাড়িতে কেমন

বীষটা নামাই






Tuesday, December 29, 2020

আবোলতাবোল : তিন

আম পাতা জোড়া জোড়া

বেল গাছ তলে যায় না ন‍্যাড়া

বেল পাকলে কাকের কি?

মসলা কুটে বউ আর ঝি


রান্ধেন বাড়েন খান না কেন?

কোলা ব‍্যাঙের ঘ‍্যাঙর ঘ‍্যাঙ

ষড়যন্ত্রে স্বরযন্ত্র

আবার হবে বিগ ব‍্যাং


বাচ্চালোক তালিয়া বাজাও

ভ‍্যাক্সিন আসছে আসর সাজাও

ব্রেক্সিট ফিক্সিট ব‍্যাংক ডেপোজিট

সামলে রেখো শেয়ারটাও


গড়গড়িয়ে আসছে আশা

একুশ হবে আয়ুষ্মান

সুইসাইড নোট জালি ভোট

ভুগতে হবে কর্মখান


কৃষক শ্রমিক এক হয়না

সাম‍্য গেছে গড়ের মাঠ

নারী থাকবে গোনার বাইরে

কুশিক্ষার সহজ পাঠ


পাট ফলবে পার্টও পাবে

রাজনীতির জয়গান

বঙ্গবন্ধু গুমরে কাঁদে 

আরামে নয় সাবধান


মাথার ভেতর উল্টো পা

মাথার ভেতর গু ভরা

খাচ্ছো দাচ্ছো আর কি চাই

বিলুপ্ত প্রায় শিরদাঁড়া


আবার ওদের হাঙ্কিপাঙ্কি

দেখেও কি ভাই দেখছো না

তোমার ঘরেই কাটবে সিঁদ

বোবা হয়েও বাঁচছোনা


মারছে গুঁতো দিচ্ছে কিল

কালকে আবার ফেলবে লাশ

তোমার আমার পাপেই হবে

বীর বাঙালির সর্বনাশ 


Listen to আবোলতাবোল by Tahmina Aspired on #SoundCloud

https://soundcloud.app.goo.gl/hxsW1




আরেকবার ফিরে এসো (Elaborated)

অনেক রাত তারারাও ঘুমিয়েছে

মেঘেরাও হয়েছে পথহারা

স্তব্ধতা আমাকে ভাবিয়েছে

নির্ঘুম দুচোখ দিশাহারা


আরেকবার ফিরে এসো

আরেকবার ফিরে এসো


(ঢাকা, ২০১৭)



They never told U 

They never knew

M such a mess

A mess beyond explanations n perceptions

I live a hell without demonstration n execution

Stickin in a damn wheel of death n punishment 

From ma first cry in a hate n resentment

When I donnow even what's wrong I did

(Babe) I donnow what did I drag down n what's the sin?

Tired of fightin ma own thoughts n persistence 

Tired of pushin the time n save ma existence

M loosing a hope (babe)

Donnow how to cope (babe)

Ma own words n notes hurt me like hounds from hell

Ma past is followin me like a barg only knows to kill

Can't breath in full (babe)

Can't wake up full (babe)

M in a black hole 

Drowned me in darkness

There's no life here 

Trapped in somethin truly endless

Don't know babe how to live back

Don't see any light to thrive back

M bout to give up 

Give up on me myself (babe)

Gettin closer to the closure

Can't hold all of it by myself (babe)

If U could show up again (babe)

We could call them up (may be)

The angels who bring love to (the earth)

Could help us to live n get old together 

Could breath again with Ur heart beats

Could tell U the wishes I kept alive still

Could hold U with ma true skin (right)

Could make it beautiful in the darkness (of night)

True flashes to flashes

True soul n true ashes

U gonna love me this time (Babe)

M gonna give U ma deepest vibe (babe)

We could make it right (babe)

We could reach on some high (babe)

Just come back 

With all Ur sweats n woe

Just come back

There's still some waitin more

Just come back

with all ur sweats n woe

Just come back

There's still some waitin more


(Elaborated, Dhaka, 2020)


অনেক রাত তারারাও ঘুমিয়েছে

মেঘেরাও হয়েছে পথহারা

স্তব্ধতা আমাকে ভাবিয়েছে

নির্ঘুম দুচোখ দিশাহারা


আরেকবার ফিরে এসো

আরেকবার ফিরে এসো


আরেকবার ফিরে এসো

আরেকবার ফিরে এসো


আরেকবার ফিরে এসো

আরেকবার ফিরে এসো






বারান্দায় ক‍্যান্সার

গাছেরা মন খারাপ করে, কখনো কখনো আত্মহত‍্যাও করে। আজকাল বড় ক্লান্ত লাগে, সারাদিন শুয়ে থাকতে ইচ্ছে করে, শুয়ে থাকিও। ওরা চায় আমি ওদের সকাল সন্ধ‍্যা গান শোনাই, কথা দিয়েছিলাম, রাখতে পারিনি। রাতে ঘুমের মধ‍্যে মাঝে মাঝে যেন নিঃশ্বাস আঁটকে যায়। শুনতে পাই গাছগুলো ঘুমের মধ‍্যেই কেঁদে উঠছে। ওরা ভয়ে ভয়ে থাকে আমাকে নিয়ে। ওরা খাওয়াদাওয়াও বন্ধ করে দেয় মাঝেমাঝে। আমি ওদের কতো বোঝাই, ঠিক যেমন বাবা বোঝাতো বহুদিন আগে। খুব রাগ হয় আজকাল। কিছু করার নেই। যদি ছেড়ে যেতে চায় ওরা, যদি কোনোদিন আমার না হতে চায়, তবে তাই হোক। হাতের বাইরে চলে যাবার আগে জসীমকে বলি কোন একটা উদ‍্যানে কিংবা অন্তত নিচে মাটিতে ওদের নতুন ঘর গড়ে দিতে। ওরা চলে যায় আমি ধীরে ধীরে একদিন ওদের চেহারা গন্ধ সব ভুলে যাই। গাছগুলো ভয়ে ভয়ে দিন কাটায়। বকাঝকা শুনলে ভীষণ অসহায় হয়ে পড়ে। আর এতো অভিমান করে। সেদিন টব বদলে দেবার সময় একটাকে দেখিয়ে বলেছিলাম "এটাকে অন‍্য একটা সাধারন টবে দেব, সুন্দর টবটার জন‍্য ভাল একটা দামী গাছ কিনে আনবো।" জসীমও সায় দিল "ঠিক বলছেন ম‍্যাডাম। তাইলে বালো অইবো।" এইসব শুনে এতো রাগ করলো গাছটা, এতো খাবার দিলাম, পানি দিলাম, এতো রকম করে বোঝালাম, তবু মরে গেল। চার বছর আমার কাছেই ছিল গাছটা, সবুজ, সতেজ, মাঝে মাঝে পানি দিতে ভুলে গেলেও ক্ষমা করে দিতো। 

আজকাল বুকে ব‍্যাথা করে, ওদেরও বুকে ব‍্যাথা করে আমি জানি। শত ভাবলেও শুধু কষ্টের গানগুলোই মনে পড়ে আর কষ্টের গানগুলো শুনতেই ইচ্ছে করে। তেমন রোদ ওঠেনা অনেকদিন। টানা মেঘ আর কুয়াশায় ওরা বিমর্ষ হয়ে পড়তে থাকে আরও। ফুল ফুটিয়ে যায় কিন্তু তবু কি এক গাঢ় বিমর্ষতাই ছেয়ে থাকে বারান্দায়। একটা গোলাপ গাছে ক‍্যান্সার। বেশ কয়েকবার ছেটে দিয়েছিলাম কিন্তু লাভ হচ্ছেনা। কিছুদিন ভাল থাকে, নতুন পাতাও গজায় তারপর আবার ক‍্যান্সারটা ছড়িয়ে পড়তে থাকে। আজকাল আর ছাটিনা। প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে দেখি আর হিসেব করতে চেষ্টা করি পুরোপুরি মরে যেতে আর কতোদিন লাগতে পারে। বুঝি এতোদিনে আমিও  নিষ্ঠুর হতে শিখে গেছি।

আবোলতাবোল : দুই

লড়ে চড়ে গাছের পাতা

কেমন আছো ক‍্যায়া পাতা?

নেই তোমার ঠিকানা

হারিয়েছি নাম্বারটা


ভাল আছি ভাল থেকো

ফেসবুক একটিভ রেখো

রিসেন্ট ছবি আপলোড দিও

মনের কথাও খুলে লিখো


আমরা নই আপনজন

তার আর কি বলো প্রয়োজন?

এই দেহ এই মন

কতক্ষণ আর কতক্ষণ?


ইয়ার তু নে ক‍্যায়া কিয়া?

প‍্যায়ার নেহি ডারনা কিয়া!

আতি পাতি শুধু শুধু

মুন্নিকো বদনাম হুয়া


তা যাক কি আর করা 

ডোবেনা জলে প্রেমে মরা

জলেরও হায় অশুচি

একলা ঘরে সর্বহারা


তখন আমার বয়স কম

নীল শাড়ি নীল টিপ

জীবন মৃত‍্যুর মাঝখানে

এখন আমার ছেঁড়া দ্বীপ 


তোমার আমার ঠিকানা

নয় পদ্মা মেঘনা যমুনা

ওইপারে দেখা হলে

হাত আমার ছেড়োনা


বুকের মাঝে রেখো আমায়

তুমিই হইও সুজন

এই পৃথিবীর দাম মেটাবো

তুমি আমি দুজন





Monday, December 28, 2020

আবোলতাবোল : এক

তুমি এসেছিলে পরশু

সে এসেছিল গতকাল

তুমি আলালের ঘরের দুলাল

সে দালালের ঘরের উলাল


কেটেছিলাম খাল

তাই ঢুকেছিল কুমির

কোনোটা ফকিন্নীর পো

আর কোনোটা আমীর 


জাগো বাহে কুন্ঠে সবাই

শুনেছিলাম হাঁক 

ঘুঘুর ফাঁদে দেখলাম এ কি!

বাসা বাঁধে দাঁড়কাক


সবাই নাচো কুঁদো

কন্ঠ ছাড়ো জোরে

(ও হে বাচ্চালোক, I say REPEAT)

সবাই নাচো কুঁদো

কন্ঠ ছাড়ো জোরে

ধর্মের কল ঠিক একদিন

বাতাসেতে লড়ে



গল্প : চার : তুবা

নগ্নতাকে যদি কোন Passion হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয় তবে হয়তো সবচেয়ে খুশি হতো আমাদের একসময়ের টমবয় তুবা। কলেজে যখন তুবা ছিল অন‍্য সব ছেলে কিংবা মেয়েদের ধরাছোঁয়ার একদম বাইরে আর একই সাথে উত্তোরাধুনিক ও পৌরানিক সকল অবজ্ঞাময় ও ব‍্যাঙ্গাত্মক জীবনযাপন এবং শব্দভান্ডারের কেন্দ্রবিন্দুতে তখন কোন এক আহত যুবক তুবার ক্ষীনদেহ, সমতলপ্রায় বক্ষসৌষ্টব আর ছোটছোট করে কাটা চুলগুলোকে ইঙ্গিত করে বলেছিল "She is only a spoiled chic TomBoy. ওরে নিয়ে ভাবার কি আছে?" সবাই নামটা পছন্দ করেছিল আর কেন যেন আরো ভালবেসেছিল তুবাকে। ওরা সবাই মিলে আগলে রাখতো তুবার মুক্ত ও দ্রোহপূর্ণ অবস্থানটাকে, কেন তা হয়তো ওরা নিজেরাই জানতো না।


তুবার বাবাই ওর নাম রেখেছিল "তুবা", একটি কোরানিক নাম যার অর্থ হলো আনন্দ কিংবা উচ্ছাস। ধারনা করা হয় তুবা একটি গাছ যা শুধু স্বর্গেই জন্মে, যার ডালে বসে গান গায়, বাসা বাঁধে রহস‍্যময় ফিনিক্স পাখি। স্বর্গবাসীরা তুবার সৌরভে মাতোয়ারা হয়, তার ফুলের দর্শনে তাদের হৃদয়ের অহংকার দূর হয় আর আশির্বাদী ফলে তাদের মনোবাঞ্ছা পূর্ণ হয়। আমাদের তুবা একটি উচ্ছসিত গাছের মতোই ছিল কিন্তু ভুল করে পৃথিবীতে জন্মেছিল বলে ও ভীষন ছুটতে পারতো, পাহাড়ে ও গাছে চড়তে পারতো, উদ্দাম নাচতে পারতো, যখন ইচ্ছে কাছে আসতে পারতো আবার দূরে দূরে সরে যেতে পারতো। শহরের সবচেয়ে বড় অভাগা ছিল যে বা যারা তুবার প্রেমে পড়েছিল সে সময়। ওরা মাথায় সুন্দরতম শব্দগুচ্ছ আর হাতে দূর্মূল‍্য উপহার নিয়ে যখনই আত্মপ্রকাশ করতো তখন তুবা, কি জানি বুঝে নাকি না বুঝে, তাদের শহরময় এমন দৌড় করাতো যে শরীরের সমস্ত ঘাম এবং ইচ্ছেশক্তি নিঃশেষ হবার পর ওরা শব্দগুচ্ছ এবং উপহার দুইই ডাস্টবিনে ছুঁড়ে ফেলে দিত এবং মনে মনে প্রতীজ্ঞা করতো আজীবন দূর থেকে ওর ওপর নজর রেখে যাবে। 


তুবার সাথে কারো সত‍্যিকারের শত্রুতা কোনোদিন ছিলনা। সে গলা ছেড়ে গাইতো সুখ, দুঃখ কিংবা জাগরণী গান, আওড়াতো অমোঘ কবিতার লাইন আর এমন সব বাক‍্য বলে উঠতো যে লোকেরা সবচেয়ে ভয়ঙ্কর প্রশ্নটির মুখোমুখি থমকে দাঁড়াতো। খুব সাধারন মানুষটিও ওর গান, কবিতা কিংবা বাক‍্যগুলোর সহজ স্বাভাবিক মানে করতো না কেন সে প্রশ্ন হয়তো তুবাই নিজেকে সবচেয়ে বেশি করেছে আজীবন। কলেজে সেদিন সবাই রীতিমতো আঁতকে উঠেছিল যেদিন তুবা ভর দুপুরে কলেজের মাঝখানে এক এলোমেলো ভীড়ের মধ‍্যে তেমন একটা না চেনাজানা মেয়েকে বললো "You have beautiful lips. Can I kiss you?" মেয়েটা কেন যে খুশি হয়ে উঠেছিল আর আন্তরিকতার সাথে বলেওছিল "Yes"। তারপর ওই অত্তো বৈচিত্রপূর্ণ ভীড়ের মধ‍্যেই ওরা দুজনই দুজনের ঠোঁটে একটা আবেগপূর্ণ ভেজাভেজা চুমু খেয়েছিল অল্প সময় তারপর দুজন দুজনকে "Thanks" বলে উল্টোদিকে হেঁটে চলে গিয়েছিল। ঘটনাটা এতোটাই আকস্মিক ও সততাপূর্ণ ছিল যে ওই তরুনদের মিছিলটা মোহমুগ্ধ হয়ে উঠেছিল কিছুক্ষণের জন‍্য হলেও। পরে ওরা এ নিয়ে কি আলোচনা করেছিল কিংবা বিচার সভা বসাবার কথাও ভেবেছিল কি না তার খবর তুবা কখনো রাখেনি কিংবা ভীড়ের সেই মেয়েটার খবরও আর কোনোদিন রাখেনি। ওর শুধু ঠোঁট দুটো মনে পড়ে আর মনে পড়ে জীবনের প্রথম সেই চুম্বনের কথা আজো। 


না, আমাদের তুবা কোনোদিনই সমকামী ছিল না। সমকামী নারীদের সে চিরকাল ফিরিয়ে দিয়েছে একরকম সীমাবদ্ধতার অপরাধবোধ নিয়েই। চিরকাল অপেক্ষা করেছে তার সেই একমাত্র প্রিয়তম পুরুষের বিশ্বাসী আলিঙ্গন, কামনাগ্রস্ত উত্তাপ, মোহময় গন্ধ আর অপ্রতিরোধ‍্য মিলনের জন‍্য। কিন্তু ওর ভালবাসার পুরুষ ছিল হয়তো ওর কল্পনাতেই বন্দী, ছিল একান্তই নিজের জগতের এক অধরা ভুত, বাস্তবতায় যার অস্তিত্বই থাকবার নয়।  চোখে বিষাদ, হৃদয়ে শুণ‍্যতা, মাথায় বিমূর্ত চেতনা আর ঘাড়ে এক অনিবৃত্ত ক্ষুধা নিয়ে তাই সে ভুতের সাথেই কথা বলে বলে ওর রাতদিন কাটতে থাকে। সময়ের এবং আদর্শের বিবর্তনে কখন যে তুবা হয়ে উঠেছিল সবার বিদ্বেষ  প্রকাশের এবং চর্চাসুখের আধার তা সে জানতোই না। শুধু তাদের চোখে ঘৃণা পড়ে নিত প্রতিদিন আর একলা একলা হেঁটে যেত কোনো ব‍্যস্ত ফুটপাত, ওভার পাস কিংবা কোনো পাইকারি বাজারের ভীড়ের মধ‍্য দিয়েই হয়তো। খেটে খাওয়া সদাব‍্যস্ত ধেয়ে চলা শ্রমিকদের চোখের ক্রোধ, ধিক্কার কিংবা কোনো অপরাধ প্রবনতাকেও এড়িয়ে সে খুঁজতে শুরু করেছিল তার মানবজন্মের সত‍্যিকার মানে। আলোর নিচে অন্ধকার নয় সৌরজগতের গৌরব বেঁচে থাকে প্রতিটি সংগ্রামে এই বিশ্বাসের আঁকুতি নিয়ে ওদের মুখের দিকে চেয়ে থাকতো তুবা। 


বলছিলাম নগ্নতা আর তুবার নগ্নতাপ্রেমের কথা। পরিবারের মেয়েদের মধ‍্যে সবচেয়ে গাঢ় রঙের চামড়া নিয়ে জন্মেছিল তুবা। সকলের সমস্ত উপেক্ষা, দুঃশ্চিন্তা এমন কি ঘৃণাকেও বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে তুবা একটা দিনবদলের বাতাসে ওর পালকের মতো হালকা মন ও দেহটাকে ভাসিয়ে দিয়েছিল যেন। নিজের সাথে তার এতো বন্ধুত্ব হয়ে গিয়েছিল যে আয়নার সামনে নিজের নগ্ন চেহারাটা দেখতে থাকতো প্রতিদিন আর দুহাত ওপরে তুলে এমনভাবে দাঁড়াতো যে ওকে সত‍্যিই স্বর্গের একটা দিনে দিনে বাড়তে থাকা গাছ বলেই মনে হতো। বাতাসে যখন ওর চুলগুলো উড়তো যেন মনে হতো ফিনিক্স পাখি ডানা মেলে গান গাইছে কোনো যার প্রতি স্বরে আছে পৃথিবী আর স্বর্গের চরম কোনো সত‍্য। ছোটবেলায় তুবার চোখদুটো নীল ছিল কিন্তু বড় হতে হতে তা পৌঁছে গিয়েছিল কালোর কাছাকাছি। তবে ওর টলটলে চোখে আকাশ ঠিক তার একাগ্রতার নীল ছায়া ফেলে গেছে চিরকাল, যেমন ছায়া ফেলে যায় পবিত্র নদী কিংবা সমুদ্রের বুকেও, সেই নীল চোখ শুধু প্রেমার্থীরাই দেখতে পায়। প্রেমে পড়লে মানুষ যে ভীষন হাঁদা হয়ে যায় তা তুবা খুব ভালোই জানতো। ও প্রায়শই মন দিয়ে ওদের নানান দূঃখের কথা শুনতো আর কি করে তা থেকে পরিত্রান পাওয়া যায় তা নিয়ে আলোচনা করতো। একজন সহমর্মী বিশ্লেষক এবং আন্তরিক মুশকিল আসানকারী হিসেবে ওর বেশ জনপ্রিয়তা ছিল পরিমন্ডলে। কিন্তু ওই প্রেমার্থীদের কেউ কখনো কখনো যদি ভুলেও ওকে স্পর্শ করতে চাইতো কিংবা কখনো আবেগে দেবী ভিনাসের সাথে তুলনা করে বসতো, ওর ইন্দ্রীয়গুলো সতর্ক হয়ে উঠতো আর মাথার ভেতর "Danger Danger" এলার্ম বাজাতে থাকতো। বহুবার 'বন্ধুদের ভাষায়' অতল খাদের প্রান্ত থেকে ফিরে এসেছিল তুবা। বন্ধুদের বোকা বোকা উৎকন্ঠা দেখে শুনে আকাশ বাতাস ফাটিয়ে হাসতে থাকতো তুবা তারপর আবার কি এক চিন্তায় নিমগ্ন হয়ে পড়তো। বন্ধুরা বুঝতো না বিরক্ত হবে কি না আর ভাবতো কি এমন আছে তুবার ভেতর যার সন্ধানে থাকে এতো লোক? তুবাকে কেউ চটাতো না কারন ওর চোখে কি যেন এক গভীর বোধ ছিল যাতে সবার বুক কেঁপে উঠতো, ওরা যেন দেখতে পেত সেখানে কোন দূর্বাশার সাধনার আগুন আর জলের সহাবস্থান আর তারচেয়েও বড় কথা তুবার ছিল প্রবল ষড়যন্ত্রের দক্ষতা এবং হাত পায়ের ক্ষিপ্রতা। 


আমাদের প্রিয় তুবা কখন যে শান্ত হয়ে গিয়েছিল আর অন্ধকার একটা ঘরে থাকবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তা আমরা কেউ জানতাম না। আমরা তখন  নিজেদের ইঁদুর দৌড়ে তৈরী করতে ব‍্যস্ত আর নিজেদের যাবতীয় জটিল সমীকরণময় অংকগুলো সমাধান করতে প্রাণপাত করে যাচ্ছি। তুবা দিনরাত অন্ধকার দেয়াল বা ছাদের দিকে তাকিয়েই পার করে দিয়েছিল বছরের পর বছর। কিছু যে আসলে ভেবে যেতো এমনও নয়, ও যেন মাথার ভেতর একটা অন্ধকার গোলকধাঁধায় আঁটকে পড়ে গিয়েছিল। বেশ কিছু বছর এভাবেই একটা বিকল বিন্দুতে পড়ে থাকবার পর হঠাৎ একদিন কি মনে করে ময়লা জামা গায়েই বাইরে বেরিয়ে পড়লো আর হাঁটতে শুরু করলো। হাঁটতে হাঁটতে একেবারে শহরের শেষ প্রান্তে পৌঁছে গেল। সমূদ্র আর নদীর যেখানে মোহনা সেখানে লম্বা দেয়ালের ওপর একলা বসে রইলো একটা ভীনগ্রহের প্রাণীর মতো। রাতও নেমে গিয়েছিল ওভাবে বসে থাকতে থাকতে। রাত যখন বেশ আরো গভীর হলো তখন এক উৎসুক বখাটেকে জিজ্ঞেস করলো "I don't know how did I reach here. Can you take me home?"


তুবা জীবন বদলে নিয়েছিল। সে নতুন করে নগ্নতার প্রেমে পড়েছিল। নিজেকে আবার দেখতে শুরু করেছিল আয়নায়। সে আবারো নিজের জগতে মশগুল হয়ে পড়লো। মাথা থেকে ঝেড়ে ফেললো যত অশুচিতার বিশ্বাস। প্রেমার্থীদের সে ছুঁয়ে দেখতে দিল তার কোমল ত্বক আর শুষে নিতে দিল তার যৌবন সুধা। প্রেমার্থীরা জানালো তুবা সত‍্যিই একটা রহস‍্যময়ী সবুজ গাছ। ওদের কথা কতোটা সত‍্যি তা কেউ আমরা জানিনা কিন্তু ওই প্রেমার্থীদের মনোবাঞ্ছা কিভাবে যেন পূরন হয়েছিল। আঘাতপ্রাপ্ত পেয়েছিল শান্তি, অস্পৃশ‍্য পেয়েছিল মর্যাদা, উচ্চাকাঙ্খী পেয়েছিল আত্মবিশ্বাস, শিল্পী পেয়েছিল কল্পনা, দুষ্কৃতী পেয়েছিল নীলনকশা, হতাশাগ্রস্ত পেয়েছিল নবজীবন।


(ক্রমশ...)





Sunday, December 27, 2020

FancyWoman














She fell for a dirty love

Then she became impossible 

Then she left off her precious,

Walked away and disappeared 

She tried to get rid off some old suitcase

So she fell again

And again 

And again 

She got dirtier 

Then the ditriest

She made a joint of all her broken pieces and hit her soul

Therefore she wrote all her songs the purest


Look up look up look up

She writes a song every night on her suicide note

Take up take up take up

She makes a vow every time she gets back to a life

No no 

nobody knows she kisses in air and dances around with an evening strain

No no 

Nobody knows she fights her head and walks herself through the dancing fire

She is a great lier

She is the greatest

In her sleep she whispers the truth while nobody is there and nobody hears

All the songs and musics she plays know She didn't care

To kill herself and expose herself

She has the purest soul beneath every mistake she made by all herself

She never takes it back for the sake of her purest songs and her self respect


So she decides to damn walk alone 

Then she turns off the lights

Then she takes off all her clothes

Walks alone with a feeling high and in an honest skin

Then she holds a glass in her shaky and groovy hand

No she won't mess again

Never again

Never again

She becomes lonelier 

Even the loneliest

She makes a joint of all her broken pieces and hits her soul

Therefore she writes all her songs the purest


Look up look up look up

She writes a song every night on her suicide note

Take up take up take up

She makes a vow every time she gets back to a life

No no

nobody knows she kisses in air and dances around with an evening strain

No no 

Nobody knows she fights her head and walks herself through the dancing fire

She is a great lier

She is the greatest

In her sleep she whispers the truth while nobody is there and nobody hears

All the songs and musics she plays know She didn't care

To kill herself and expose herself

She has the purest soul beneath every mistake she made by all herself

She never takes it back for the sake of her purest songs and her self respect



🖤 প্রিয়তম ঘৃণা 🖤

হায় ঘৃণা !

হায়

এখনো এই নিঃশ্বাসে তিক্ত হয় পৃথিবীর বুক !

হায় ঘৃণা !

হায়


আর কতো হারাবো?

আর কতো হেরে যাবো?


সময়কে হারিয়ে  নিজেকেও হারিয়ে দিন গুনি অন্তিমের

সততার নীল পথ শুরু হয় আর থেমে যায় পরাজয়ে প্রতিবার


প্রতিদিন ক্ষয়ে যাই

প্রতিদিন মরে যাই


আর কতোখানি ক্ষয়ে গেলে পাওয়া যায় হৃদয়ের শুদ্ধতা?

আরও কতোবার মরে গেলে দেখা হয় ঘৃণার উল্টোপাশে?


হায় ঘৃণা !

হায়

শীতের রাতে তুমিই থাক জড়িয়ে চির আদরের ওম

হায় ঘৃণা !

হায়

হায় প্রিয়তম ঘৃণা !!

🖤






গল্প : তিন : রাস্তাফেরি

রাস্তাটা চলে গিয়েছিল কত যে দূরে বাচ্চাগুলোর কেউই জানতোনা। শুধু জানতো ওই রেললাইনগুলো যতদূর পর্যন্ত গেছে রাস্তাটাও গেছে সাথে সাথে। ওরা সবাই পানসিগারেট আর টকমিষ্টি চকলেটের দোকানটার সামনে থেকে "রেডি ওয়ান টু থ্রি গো" বলেই দৌড় শুরু করতো ওয়াচটাওয়ারটা পর্যন্ত আর দেখতো কে কার আগে যেতে পারে। তারপর হাঁপাতে হাঁপাতেই ওয়াচ টাওয়ারের একদম মাথায় উঠে যেতো আর চারদিকে উৎসুক হয়ে গলা উঁচিয়ে দেখতো বেশ অনেক্ষন যদিও একদিনের চেয়ে অন‍্য দিনের দৃশ‍্যে কোনো বলার মতো পার্থক‍্যই থাকতো না। সেইতো সারি সারি রেললাইনগুলো দৃষ্টির এমাথা থেকে ওমাথায় নানান রঙের গাড়ি চলা ব‍্যস্ত ওভার পাসটার নিচ দিয়ে চলে গিয়েছিল। রেললাইনের ওপারে, যেখানে ওদের যাওয়া একেবারেই নিষেধ, ওদিকে তাকালে দেখতে পাওয়া যেতো ঘন হয়ে গায়ের সাথে গা লাগানো ইটের আর টিনের ছোটবড় বাড়িঘরগুলো, কিছু পায়ে হাটা ধীর গতির লোকজন আর একটা সবুজ মসজিদও আলাদা করে চোখে পড়তো। অনেক চেষ্টা করেও ওরা বাজারটা খুঁজে পেতোনা, বড়রা যেখানে প্রতিদিন যেতো আর নিয়ে আসতো মাছ মাংস সবজি ডিম, বাকিতে মাসকাবারি, খাতা কলম রং পেন্সিল, কুড়মুড়ে খাস্তা চানাচুর বিস্কুট জিলিপি সব এমন কি মায়েদের যখন শরীর খারাপ থাকতো তখন সকাল বেলায় খবরের কাগজে মোড়া  যে ডুবো তেলে ভাজা গরমগরম মুচমুচে পরোটা আর মিহিদানা পাওয়া যেতো, যার গন্ধে ওরা তাড়াতাড়ি শোয়া থেকে উঠে পড়তো, তাও নাকি ওই বাজারেই পাওয়া যেতো। মহররমে ওখানে মেলা বসলে ওরা কেউ কেউ গিয়েছিল বাবা মামা চাচা দাদু কিংবা বড় ভাইদের হাত ধরে কিন্তু গেলে কি হবে ওই অত্তো শতশত এলোমেলো চলা পায়েদের ভীড়ে ওরা কিছু ভাল করে দেখতেই যে পায়নি। তবে বাড়িতে ফিরে আঙুলি আর তিলের খাজা খেয়েছিল বেশ মজা করে আর প্লাস্টিকের বাহারি পুতুল গাড়ি হাড়িপাতিল বন্দুক ইয়োইয়ো আর বাবেলারগুলো দিয়ে খেলেছিল অনেকদিন ওগুলো একেবারেই ভেঙে না যাওয়া পর্যন্ত। এপারে ওয়াচ টাওয়ার ঘেঁষে অত্তো উঁচু দেয়ালটাও এমাথা থেকে ওমাথা রেললাইনের পাশে পাশে যেন তৈরী করা হয়েছিল ওদের যত দুরন্তপনাগুলোকে এপারের উঁচু উঁচু গাছ ও তিনতলা বাড়িগুলোর সারি আর তাদের মাঝে এই কোনোদিন শেষ না হওয়া রাস্তাটাতেই আঁটকে রাখতে। এখানে সব ছিল খেলার ছোট বড় মাঠ, অনেক শখের বাগান, অল্প কটা খুবই ছোট ছোট দোকান, বেলুন, আইসক্রিম আর বাদামওলা। ওয়াচ টাওয়ারটার ওপর ওরা বেশ কিছুক্ষণ কাটাতো যদি এরমধ‍্যে কোনো ট্রেনের জোর হুইসেলের শব্দ শোনা যেত, ওরা আরও উৎসুক হয়ে গলা বাড়িয়ে দিত শব্দ বরাবর একটু পরেই দূরের ঝাপসা জায়গাটার ভেতর থেকে ক্রমেই বাড়তে থাকা বিকট ধাতব শব্দ তুলে এক দারুন মজার তালে তালে বাঁশী বাজাতে বাজাতে প্রিয় এক র‍াস্তাফেরি বন্ধুর মতো ট্রেনটা এগিয়ে আসতো। ওরা সবাই আনন্দে লাফিয়ে খিলখিল করে হেসে উঠতো আর ট্রেনটা আর শব্দটা পুরোপুরি মিলিয়ে যাবার আগ পর্যন্ত হাত তুলে তালেতালে নাড়তো আর মুখে "টা টা টা টা" বলে যেত। তারপর শান্ত হয়ে সেদিনকার মতো ওরা ওয়াচ টাওয়ারটা থেকে নেমে আসতো আর রাস্তাটা ধরে হেলেদুলে হাঁটতে হাঁটতে হয়তো একটা রাস্তায় পড়ে থাকা শুড়কিকে অযথাই পা দিয়ে ঠুকতে ঠুকতে ওরা এগোতো। ততোক্ষণে সূর্যটাও পড়ি পড়ি করতো তাই ইচ্ছে না থাকলেও বাড়ি ফেরা ছাড়া ওদের আর উপায় থাকতো না।


ওই রাস্তাটা এতো ছায়াঘেরা ছিল যে লোকে হেঁটেই পার হতো। খুব কম সময়েই একটা দুটা রিকশা বা সাইকেল দেখা যেত। হঠাৎ যদিবা একটা মটর গাড়ি আসতো বাচ্চাগুলোর বিষ্ময়ের শেষ থাকতো না যে কাদের অমন গাড়িওলা আত্মীয় বন্ধু আছে ভেবে। ওখানকার ফ্ল‍্যাটগুলো দু'কামরার খুপরি মতো ছিল আর বাইরে অনেক খেলার জায়গা ছিল। লম্বা দেয়ালটার যেখানে ঘুরতে পারে এমন একটা লোহার ফটক ছিল যেটা দিয়ে একবারে মাত্র একজন লোকই কেবল এদিকে বা ওদিকে আসা যাওয়া করতে পারতো, ওই ফটকটা দিয়েই বড়রা সবাই  বের হতো আর রেললাইনগুলোর ওপারে বাজারে যেতো। তার পাশেই ছিল পান সিগারেটের দোকানটা। দু'তিনটা রিকসাও দাঁড়িয়ে থাকতো। রিক্সাওলাগুলো ঘাম মুছে হাত পা ঝাড়া দিত তারপর খয়ের আর জর্দা দেওয়া পান মুখে নিয়ে বিড়িতে নবাবী সুখটান দিত। কলোনির উঠতি বয়সের মামাগুলো সবসময় থাকতোই ওখানে। থাকেথাকে রাখা ইঁটের ওপর ওরা বসে থাকতো। শীষ দিত আর কখনো হাতে তুড়ি বাজিয়ে গাইতো "ক‍্যায়সা লাগতা হ‍্যায়। আচ্ছা লাগতা হ‍্যায়। প‍্যায়ার কা সাপনা। সাচ্চা লাগতা হ‍্যায়।" আবার কখন আবেগে দুহাত মেলে গেয়ে উঠতো "জানে জিগার জানে মান | মুঝকো হ‍্যায় তেরা কসম"। ওরা বেশ ভাল ছিল আর কাজেরও ছিল। কলোনির সবার খবর রাখতো আর ফুটফরমাসও খাটতো। মাঝেমাঝে বাচ্চাগুলোকে চকলেট আর সুইটবলসও খাওয়াতো। পড়াশুনোয় ওদের তেমন মন ছিলনা বলে কলোনির আঙ্কেল আর দাদুগুলো যতোই ওদের গালমন্দ করুক না কেন দরকারে ওদেরই ডাকতো আর ভালও না বেসে থাকতে পারতো না।


দোকানের মোটা কালো লোকটা ভীষন ব‍্যস্ত থাকলে কি হবে সবসময় তীক্ষ্ম নজর রাখতো যেনো কোনো একটা বাচ্চাও ফটক গলে ওপারে যেতে না পারে। কিন্তু তারপরও ওরা কেউ না কেউ হঠাৎ হঠাৎ সুযোগ বুঝে ঠিক বেরিয়ে পড়তো। ওপারে যাবার জন‍্য নয় রেললাইনের এধারেই যে টুকরো টুকরো রঙিন কাপড়ের পাহাড় বানিয়ে রাখা থাকতো তার ওপর দাপাদাপি করবার জন‍‍্য, রেললাইনের ওপর ভারসাম্য রেখে হাঁটবার জন‍্য, আর ফেরার সময় কিছু নুড়ি পাথর আর রঙিন কাপড়ের টুকরো সাথে করে নিয়ে আসবার জন‍্য। ওগুলো ওদের অনেক কাজে লাগতো ওই টুকরো কাপড়গুলো দিয়ে সহজেই হয়ে যেতো হাতে বানানো ছোট্ট ছোট্ট কাপড়ের পুতুলদের নতুন নতুন জামা বিছানা বালিশ আর ওদের বাক্সঘরের পর্দাও। পাথরগুলো ওরা জমিয়েও রাখতো কেন যেন আর ঢিল ছুঁড়ে আম কুল পেয়ারা আর বেলুম্বি তো পাড়তোই।


দোকানটা বরাবর সামনে যে বাড়িটা ছিল সেটাই ছিল ওখানে বড় মুখ করে বলবার মতো একমাত্র বাড়ি। চারধারে উঁচু দেয়াল দিয়ে ঘেরা, সেই দেয়ালের ওপর আবার ছুঁচোলো ভাঙা কাচের টুকরো গাঁথা ছিল। ওই বাড়িটার ছিল তিনকোনা টুপির মতো গাঢ় লাল রঙের টিনের ছাদ আর পূবে পশ্চিমে বাগান, বাইরে থেকে দেখা যেতো উঁচু দেয়ালটা ছাড়িয়ে সিঁদুরে আম, জাম, কাঁঠাল, কুল, নারকেল আর ডাঁসাডাঁসা পেয়ারার গাছগুলোকে। ভেতরে আরও কত কি গাছ ছিল কে জানে? ওরা মাঝে মাঝে লোভ সামলাতে না পেরে যখন ঢিল ছুড়তো দেয়াল ছাড়িয়ে রাস্তার দিকে ঝুলে পড়া আমগাছটায় তখন ওবাড়ির ঢ‍্যাঙা বুড়িটা চেঁচিয়ে উঠতো "ক‍্যাডা ক‍্যাডা" বলে। সুন্দর দেখতে বউটা শুধু মাঝে মাঝে গেইটে এসে দাঁড়াতো, ওদের আমটা, জামটা, পেয়ারাটা দিত, কখনো বা দিত বিদেশী চকলেট। মাঝেমাঝে আবার মামাগুলোর কাউকে হাত নেড়ে ডাকতো আর এটা ওটা এনে দিতে বলতো দোকান থেকে। বেদেরা যখন আসতো আর চেঁচাতো "চুড়ি লাগবিগো, চুড়ি লাগবিগো" বলে, সুন্দর বউটা ছিল ওদের বাঁধা ক্রেতা। বেদে মেয়েগুলো ওর সরু রোমহীন হাতদুটোয় লাল নীল সবুজ হলুদ রেশমী চুড়িগুলো যত্নে পরিয়ে দিত আর গালে হাত দিয়ে দুষ্টু হেসে বলতো "তুমার খসমের মাথা একদোম ঘুইরে যাবে গো দিদি দেইখো" ওরা আরো বেচতো চুলের ক্লিপ, খোঁপার কাঁটা, গলার মালা আরো কতো কি। ওদের ঝাঁপিতে সাপ থাকতো আর বীণ থাকতো উজ্জল রঙের গামছা দিয়ে মোড়া। ওরা মাথার চুড়োয় খোঁপা বেঁধে ফুলের মালা জড়াতো, হাঁটুর একটু নিচ পর্যন্ত শাড়ি পরতো আর কোমর দুলিয়ে অন‍্যরকম ছন্দে হাটতো। ওদের গায়ে থাকতো আঁশটে গন্ধ। যখন তখন যেমন হেসে গড়িয়ে পড়তো এ ওর গায়ে তেমনি চট করে রেগেও যেত। বাচ্চাগুলো ওদের জিনিস পত্তর ধরতে চাইলে কখনো বা ধমকে উঠে বলতো "ওই বাইচ্চা! একদোম কাইচ্চা বানাই দিবো!" ওরা নাকি অনেক যাদু টোনা জানতো। একদিন চুড়ি বেচে পরদিন ওরা মোড়ের মাথায় সাপ খেলা দেখাতো। বেদে ছেলেরাও আসতো তখন, ওরা মরা মানুষ জীবিত করে দেখাতো, আরো দেখাতো হাত সাফাইয়ের নানান খেলা, সেই সাথে বিক্রি করতো জড়িবুটি। 


বউটার ছোট্ট একটা বাচ্চা ছিল। এতো ছোট যে বসতেও হয়তো শেখেনি। মাঝেমধ‍্যে বাবার কোলে চড়ে রাস্তায় হাওয়া খেতে বেরুতো। ওর বাবাটা এতো চিকন ছিল, মুখটা ছিল আরও চিকন, চোখের নিচে কালি, এতো লম্বা ছিল যে কুঁজো হয়ে হাঁটতো। হঠাৎ হঠাৎ কোনোদিন জোরে জোরে গেইটটা ধাক্কাতো, না খুললে ক্লান্ত হয়ে বাইরেই বসে পড়তো কাঁপতে কাঁপতে আর  নিজেই নিজের ঘাওলা হাতে ইনজেকশন দিত। বাড়িতে ওদের গল্প করলে বাবা মা বলতো যে আর কোনোদিন ওই বাড়ির ধারে কাছে গেলে পিটিয়ে লাল করে দেবে। ওরা বুঝতেই পারতো না ওদের দোষটা কোথায়, যেমন বুঝতোনা কেনো মার খেতো ওই পিচ্ছিল বেলুনগুলো দিয়ে খেললে। যাই হোক, বেশিরভাগ সময় ওরা বাড়ির কাছাকাছিই খেলতো। খেলতো পাতাপাতা, রঙরঙ, কুমিরডাঙা, কানামাছি আরো কতো কি। একটু বড়রাও মাঝে মাঝে ওদের বউচি বা সাতচাড়া খেলায় নিত, তখন ওরা থাকতো দুধভাত। 


ওরা দুধেভাতেই ছিল। দুধওলা আসতো, আসতো ভাঙা ডিমওলা, মাছওলা, তরকারিওলা, সুগন্ধি চালওলা আরও কতজন। বাবারা সব অফিস যেতো সকাল সকাল তারপর  ফেরিওলারা সব রাস্তাটা ধরে হাঁকতে হাঁকতে যেতো। মায়েরা দরদাম করে, ইনিয়ে বিনিয়ে, কিংবা কখনো ঝগড়া করেই কিনে নিত যার যা চাই। শীতের দিনে নতুন ভাজা মুড়ির মোয়া নিয়ে ঘুরতো একটা তাড়াতাড়ি বুড়িয়ে যাওয়া সাদা শাড়ি পরা মাসি। এই এত্তো বড়ো বড়ো মোয়া দুহাত দিয়ে ধরতে হতো আর কামড়াতে বেশ বেগ পেতে হতো। মাসির কাছে আরও থাকতো নারকেল নাড়ু, গজা, প‍্যাড়া আর ঝোলা গুড়। স্কুল থেকে ফেরার পর খেয়ে দেয়ে খেলতে খেলতে কিংবা ছবির বই দেখতে দেখতে যেই না ঘুমঘুম পেতো ওমনি ডাক পাড়তো ছিট কাপড়, তাঁত আর লেসফিতেওলারা। মায়েরা নিজেদের জন‍্য নিত তাঁত আর কাটপিস ছিট কাপড় কিনতো বাচ্চাদের জামা আর ব্লাউজ বানাবার জন‍্য। লেসফিতেওলার কাছে পাওয়া যেতো কানের দুল, সোনার মতো হার, মাথার ব‍্যান্ড, বুড়িদের টারসেল, নেইলপলিশ, লিপস্টিক, রঙিন চশমা আরও এতো কিছু যেন দেখতে দেখতে শেষ হতো না।


বিকেলে সূর্যটা শান্ত হলে ওরা খেলতে যেত নিয়ম করে চুল আঁচড়ে, জুতো পরে। কিন্তু সমস‍্যা হতো যখন আসতো আল্লাসুদা পাগল। কোত্থেকে যে সে আসতো হঠাৎ হঠাৎ! ইয়া বড় বড় চোখ আর কুচকুচে কালো চেহারায় কি ভীষন রেগে রেগে চেঁচাতো "আল্লাসুদা দুইটা বাত দ‍্যান"। ভয় পেয়ে ওরা লুকিয়ে পড়লে কি হবে বড় ভাইয়াগুলো ক্ষেপাতো ওকে "আল্লাসুদা, আ আ আল্লাসুদা" বলে বলে। ভীষন ক্ষেপে গিয়ে এইবড় ইটের টুকরো নিয়ে তাড়া করতো আল্লাসুদা পাগল। কেউ যদি ওকে খেতে কখনো দিত তবে সে দুইহাতে চারিদিকে ছড়িয়ে এতো বিচ্ছিরি করে খেতো আর শুধু ভাতই খেতো, তরকারি ছুঁড়ে ছুঁড়ে ফেলে দিত আর মুখে ভাত নিয়েই মাঝেমাঝে বলে উঠতো "আল্লাসুদা"। ওর চাইতে বার্মিজ বুড়িটা অনেক ভাল ছিল। প্রতি রমজানে অনেক দুকাপড় পরা বার্মিজরা দল বেঁধে আসতো আর ফটকটার উল্টো দিকে সোজা চলে যাওয়া একটু চওড়া রাস্তাটার ধার ধরে ওরা পলিথিন দিয়ে ঘর টাঙিয়ে ঘাঁটি গাঁড়তো। তারপর আবার ঈদের আগে আগে চলেও যেত। কিন্তু ওই বুড়িটা কোথাও আর যেতো না। ওর মাথাটি ছিল পুরো কাকের বাসা, রাতদিন কোথাও একটা বসে থাকতো আর বিড়ি টানতো,  একটা কথাও বলতো না, কেউ খেতে দিলে চুপচাপ লক্ষী হয়ে খেয়ে নিত। 


তা এক রমজানে ভরদুপুরে বিকট শব্দে বোমা ফাটলো রাস্তাটায়। একটা মামার হাত এতো পুড়ে গেল যে, শবেবরাতে রকেটবাজি তারাবাজিতে পোড়ার চাইতে অনেক অনেক বেশি, ওকে হাসপাতালে নিতে হল। তারপর বিকেল অব্দি দুদিক থেকে মামাগলো লাঠি আর হকিস্টিক হাতে তেড়ে এলো আর খুব মারামারি করলো। পুরো সন্ধ‍্যেটা ওরা মিছিল করে গেল "স্বৈরাচার নিপাত যাক", "জুতা মারো তালে তালে" এইসব বলে বলে। বাচ্চাগুলো না শুধু বড়রাও বাইরে যাওয়া বন্ধ করে দিল। রাস্তাটা পুরোপুরি চলে গেল উটকো লোক, পুলিশ, আর সবচেয়ে বেশি মামাগুলোর দখলে। বাবারা নিচুস্বরে কথা বলতো নিজেদের মধ‍্যে আবার বলতো "আস্তে বলেন ভাই, বোঝেনই তো, সরকারি চাকরি, চলে গেলে পথে বসতে হবে"। তারপর একদিন বাবারাও কেউ কেউ মিছিল করতে যেতে লাগলো। একদিন একটা পুলিশের গাড়ি  ইমন মামাকে ধরতে এসে ওর জমজ ভাই সুমন মামাকে ধরে নিয়ে গেল। তার দুদিন পরে ইমন মামাকেও ওর এক বন্ধুর বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে গেল। সেদিন রাতেই ওদের বাবা, যার সাদা সাদা চুল, সবসময় হালকা ছাই রঙের লম্বা পাঞ্জাবি আর সাদা ঢোলা পাজামা পরে থাকতো, ওই দাদুটাকে এম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিল।


এর মধ‍্যে একদিন ইদও চলে এলো। সেদিন কেউ হকিস্টিক হাতে বেরুলো না। মিছিলও করলো না। সব ছেলেরা পাজামা পাঞ্জাবি পরে নামাজে গেলো। বাড়িতে নতুন জামা গায়ে দিয়ে, সেজেগুজে, সেমাই জর্দা খেয়ে বাচ্চারা পায়ে হাত দিয়ে সালাম করলো বড়দের আর বাড়ির সেলামি বুঝে নিয়ে বেরিয়ে পড়লো কলোনির অন‍্য বাড়িগুলো বেড়াতে। খাবার দাবার আর সেলামি পেয়ে পেয়ে ওদের ছোট ছোট পেটগুলো আর পকেটগুলো একদম ভরে উঠলো দুপুর নাগাদ। ওরা তখন আইসক্রিমওলাটাকে খুুঁজছিল, রঙিন আইসক্রিম খেয়ে খেয়ে জিভগুলো সবুজ বা কমলা করতে করতে বাড়ি ফিরবে বলে। ঠিক তখনই ওরা দেখলো অনেকে ছুটে ছুটে পান সিগারেটের দোকানটার দিকে যাচ্ছে। ওরাও ছুটতে লাগলো সেদিকে। বড়রা চোখ লাল করে ওই ইদের দিনেও ওদের ধমকালো বাড়ি ফিরে যাবার জন‍্য। কারও যেন কোন মাথার ঠিক নেই। বারন না শুনে ওরা ছুটে গিয়ে যা দেখলো তা যেন ঠিক ওরা বুঝতে পারছিল না। কয়েকটা মামা আর সুন্দর বউটার বরসহ পাঁচ ছ'জন ওই মামাটাকে যে দুহাত মেলে খুব আবেগে "জানে জিগার জানে মান | মুঝকো হ‍্যায় তেরা কসম" গাইতো তাকে খুব মারছে হাতের কিরিচ, ছুরি আর নান চাকু দিয়ে। ওর সাদা পাঞ্জাবিটায় ছোপ ছোপ রক্ত। ও কিছুতেই পেরে উঠছিল না ওদের সাথে। অতো সুন্দর মামাটা আজ সকালেই তো ওদের প্রত‍্যেককে দোয়েলের ছবিওলা চকচকে নতুন দু'টাকার একটা করে নোট দিয়েছিল। ও চিৎকার করছিল "তোরা কি করতেসস? ভুল করতেসস ভাই তোরা।" কিন্তু একজন ওর আরও কাছে গিয়ে ছুরি দিয়ে ওর তলপেটে দুইবার ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে পোচ দিয়ে ছেড়ে দিল আর পাঁচ ছ'জনই "পালা পালা, ভাগ ভাগ" বলে একসাথে পালালো। সবাই অবাক হয়ে দেখলো। মামাটা ওই দেয়াল ঘেরা বাড়িটার সামনে পেটে হাত চেপে দাঁড়িয়ে "শিরু... শিরু..." বলে চেঁচিয়ে রাস্তার ওপরেই পড়ে গেল। ওর কাটা পেট দিয়ে ছলকে ছলকে রক্ত বেরিয়ে আসছিল। সুন্দর বউটা ছুটে এলো আর চিৎকার করতে লাগলো "কেউ একটা এ‍্যাম্বুলেন্স  ডাকেন" বলে। তারপর বাড়ির ভেতর থেকে বড় এক রোল তুলো এনে মামাটার পেটে চেপে ধরে বড় বড় চোখে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো মামাটার মুখের দিকে। যে বাচ্চাগুলো ওখানে রয়ে গিয়েছিল ওরাও তাকিয়ে ছিল এক দৃষ্টিতে। একটা ট্রেন হুইসেল বাজিয়ে বাজিয়ে পার হচ্ছিল তখন কিন্তু ওরা একটুও শুনতে পাচ্ছিল না।


(ক্রমশ...)


https://youtu.be/DN5u2pxHh_Q




Saturday, December 26, 2020

জুতো

খোকা কি চায়?

জুতো

খুকু কি চায়? 

জুতো

লাল নীল রংধনু

জুতো

আদরে ও আহ্লাদে

জুতো

পুতুলের পায়ে থাকে

জুতো

চামড়ায় ঘা দেয়

জুতো

ফুটবল ক্রিকেটে

জুতো

অলিম্পিকের রেসে

জুতো

রমনায় হাঁটতে

জুতো

প্রতিদিন জিমে যায়

জুতো

সেলিব্রেটি হয়ে যায়

জুতো

ব্র‍্যান্ড ননব্র‍্যান্ডের

জুতো

মোমে আর পালিশে

জুতো

ঝগড়া ও নালিশে

জুতো

ধুলো বালি পাত্থর

জুতো

রাস্তায় জমা পানি

জুতো

বাজারে তে নোংরা 

জুতো

পুরনো বা চ‍্যাংড়া

জুতো

প্রথম ইস্কুল

জুতো

হুড়োহুড়ি ছুটোছুটি

জুতো

ডেটিং ও সেটিং এ

জুতো

ইন্টারভিউতে

জুতো

ভদ্র ও চকচক

জুতো

কর্পোরেট মাঞ্জায়

জুতো 

সাইকেল প‍্যাডেলে

জুতো

এক্সিলেরেটরে

জুতো

বিয়েবাড়ি ধিনচাক

জুতো

নেচে যায় কুঁদে যায়

জুতো

কৃষকরা তোমাদের

জুতো

শ্রমিকরা তোমাদের

জুতো

অশিক্ষিত শিক্ষিত

জুতো

বেকারের সম্বল

জুতো

ভিখিরিরা চেয়ে দেখে

জুতো

টোকাইরা খুঁজে নেয়

জুতো

ছাপোষা কেরানিরা

জুতো

বাজারের রানীরা

জুতো

বউ ঝি ও মায়েরা

জুতো

জ্ঞ‍াতি ভাইবোনেরা

জুতো

গরু মারা দানে থাকে

জুতো

যাকাতের লাইনে

জুতো

রাঁধুনি ও সুইপার

জুতো

সময়ের পারাপার

জুতো

আজীবন সঙ্গী

জুতো

বাসে ট্রেনে ঠেকা দিয়ে

জুতো

ছিঁড়ে যায় ক্ষয়ে যায়

জুতো

হতাশাকে সয়ে যায়

জুতো

র‍্যাম্পের রাস্তায়

জুতো

বিভৎস সুন্দর

জুতো

আমাদেরও কিনে নাও

জুতো

অমরতা পেয়ে যাও

জুতো

আমদানি রপ্তানি

জুতো

স্টকলটে লটকায়

জুতো

দেরাজে বন্দী থাকে

জুতো

লকডাউনে মরে যায়

জুতো

স্থবিরতা মেনে নেয়

জুতো

ছত্রাকে ছেয়ে যায়

জুতো

নাইটক্লাবে মঞ্চে

জুতো

তালে তাল ঠুকে যায়

জুতো

পাহাড়কে চড়ে যায়

জুতো

আকাশ থেকে লাফায়

জুতো

মিছিল মিটিং করে

জুতো

লংমার্চ ট্রেনিং এ

জুতো

যোদ্ধার মুখে বুকে

জুতো

রাজাকার ঘৃণা পায়

জুতো

বুট আর হাইহিল

জুতো

ভবঘুরে সাদামাটা

জুতো

মসজিদে মন্দিরে

জুতো

কার কাছে যায় কার

জুতো

আধুনিক সন্নাসি

জুতো

সিজনাল বারোমাসি

জুতো

চোরাগলি হেঁটে যায়

জুতো

জিভ চাটা খেয়ে যায় 

জুতো

সনদ আর বিদ‍্যা 

জুতো

শ্রম আর প্রজ্ঞা

জুতো

নীতিকথা পিষে দেয়

জুতো

অধিকার কেড়ে নেয়

জুতো

ষড়যন্ত্র অপরাধে

জুতো

যুৎসই লাথি মারে

জুতো

ধাওয়া দেয় বিদ‍্যুৎ

জুতো

পালাতেও জুড়ি নেই

জুতো

প্রেম ও ভালবাসা

জুতো

যাও ধুয়ে মুছে নাও

জুতো




স্তর

আমার বাবার খুব অল্পই ছিল

লুটেরারা তাও লুট করে নিয়েছিল


ছাপোষা গোছের যুবকটা

শ‍েয়ার মার্কেটে টাকা খুইয়ে

আবার টাকার পেছনেই ছুটলো


দুষ্টু মিষ্টি একটা পাখি

মুখে তার খড়কুঁটো

সারা দেশ চষলো

কিন্তু একটা গাছ খুঁজে পেলনা


একজন বয়ষ্কা

মৃত‍্যুর ভয়ে অস্থির

সারাদিন আরবি শোনে টিভিতে

তার মাথার পেছনে দুষ্কৃতী ছায়ারা

জন্ম মৃত‍্যুর হিসেব কড়ায় গন্ডায় করে


কেউ কেউ শুধু দেখতেই থাকে

ওদের আর কিছু করার নেই

ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়কে বিশ্বাস করে

ওদের মগজ তীক্ষ্ণ 

কিন্তু কোনো কাজের নয়

ওরা অমরত্বের নাগর




Friday, December 25, 2020

অর্জুনকেই চাই

আকাশ কুসুম স্বপ্ন দেখার খেলা থামে না

অর্জুন চাই

অর্জুন কই পাই?

স্বপ্নে অন্ধকার ফাঁদে খিঁচে ধরে ঋষি মনু

এতো অন্ধকার এতো অন্ধকার

অঙ্গে এঁকে দেয় সহস্র খেজুর কাঁটা

বাবাও ছিল বারান্দায়

খুব যেন কাঁদছিল 

কাঁদতে কাঁদতে অদৃশ‍্য হয়ে গেল

কতক্ষণ চিৎকার করেছি কে জানে?

এত অন্ধকার এত অন্ধকার 

আরও চিৎকার করছিলাম

"মনু

মনুর বাচ্চা মনু

মানবো না

হার মানবো না

সামনে আয় মনুর বাচ্চা মনু

তোর চুল দাড়ি ছিঁড়ে ছড়িয়ে দেবো স্ট্রিপটিজার খানকিটার পায়ে"

বদলাবো না

হরহরি চক্রে নতুন নতুন শ্লোক জ্বলজ্বল করবে 

আর মগজে মগজে পেরেক ঠুকবে

বদলাবো না

সব বদলে যাবে

চড়িয়ে ছোটলোকীর দাঁত ফেলে দেবে সময়

বদলাবো না

অপেক্ষা করতে করতে মরে যাব জন্ম জন্মান্তরে

অর্জুন ফিরে ফিরে আসবে

একদিন মেরুদন্ড ঠিক গজাবে

ভালবেসে বুক পেতে দেবে

অর্জুন চাই

অর্জুনকেই চাই




Thursday, December 24, 2020

টুকরো কথা : উইশলিস্ট

খুব ছোট ছোট আর খুব বড় বড় অনেকগুলো ইচ্ছে

মিসকল দিলে চশমা, চাবি এইসব খুঁজে পাওয়া যাবে

পাসওয়ার্ড ভুলবো না

সারা বছর শীতকাল থাকবে

বিছানা আর আলমারি সবসময় পরিপাটি থাকবে

সাজগোজ করতে শুধু পাঁচ কি দশ মিনিট লাগবে

ঘরের প্রতি কোণে রোদ পাবো জোছনাও পাবো

গাছগুলো কখনোই মন খারাপ করবেনা

প্রিয়তম পুরুষ আহাম্মক হবেনা

বাবাকে দেখবো সুস্থভাবে বেঁচে আছে

বন্ধুরা বন্ধুই থাকবে

বোনটা একদিন একলা একলা বাঁচতে শিখবে

বাচ্চারা আর কোনো প্রতিযোগিতা করবেনা

রাস্তাগুলো মসৃন হবে ভীড় থাকবেনা

লোকজন দুমুঠো খাবারের জন‍্য এতো ফন্দি করবেনা

প্রতিটি উৎসবে ছেলেবুড়ো সব দলবেঁধে নাচবে

মাথার চুলগুলো ছেলেবেলার মত সতেজ থাকবে

রমনায় এতো রোগীরা ভীড় করবেনা

পাপীরা পাপ স্বীকার অন্তত করবে

যৌথ খামার হবে

বনের ধারে সুন্দর একটা কুটির থাকবে শুধু আমার

সাউন্ডট্র‍্যাক অটো এডিট হবে

তারগুলো এতো বেয়াড়াভাবে প‍্যাঁচাবে না

মনের কথা ও সুর স্কোর করবে এমন একটা অ‍্যাপ হবে

বাতিরা আমার মন বুঝেবুঝে জ্বলবে নিভবে আর রঙ বদলাবে

নিজের গান নিজের লেখা নিজেই ভালবাসতে পারবো

একটা বন্ধু থাকবে যে অনেক গান গেয়ে শোনাবে

নানীর সিক্রেট রেসিপিগুলো উদ্ধার করতে পারবো

নানার মতো একটা ফ‍্যান পাব

দাদীর মত আরেকটা সরল মানুষ পাব

দাদার মতো গাছ লাগাবো

সবাই একবার হলেও সাম‍্যের কথা বলবে

বোরখা সারা পৃথিবীতে ব‍্যান হবে

একটা অন্তত মনের মত সংগীত বানাবো

কক্সবাজার সৈকতে সারারাত একলা বসে থাকবো

বানরের মতো পাহাড়ে চড়তে পারবো

পার্টি ও গেটটুগেদারগুলো আমার পিরিওডের সময় হবেনা

লোকে সর‍ি বলবেনা বরং কিছুক্ষণ বুকে জড়িয়ে রাখবে 

যতো ইচ্ছে বৃষ্টিতে ভিজতে পারবো

ঝড়ের সময় এতো ধুলো উড়বেনা

না জেনেবুঝে কেউ মন্তব‍্য করবেনা

ভুল হোক ঠিক হোক শুধু নিজের চোখ দিয়েই দেখবে

আমার জীবনাদর্শ শুনে কারো খারাপ লাগবেনা

পাখিরা ভয় পেয়ে পালাবে না

শিল্পীরা স্বপ্নচ‍্যুত হবেনা

ভ‍্যামপায়ারদের মেটাল কনসার্টে যাবো

ভাঁড়ার কখনো শুকনো হবেনা

একটা বাদামি নেড়ি পুষবো ঘরে

আত্মারা চিঠি লিখবে আমাকে

মার্ক রনসন আমার জন‍্য একটা গান বানাবে

নিজের আর বন্ধুদের কিছু ছবি দেয়ালে টাঙাবো

একদিন পারফেক্ট পিৎজা বানাবো

প্রিয় মানুষের মনের কথা শুনতে পাবো

আর চাইলেই মরে যেতে পারবো



পুরোনো গল্প

রাজা তুমি অমন করে কেঁদোনা

তোমাকে তা একদমই মানায় না

আর আমারও ভীষণ কষ্ট হয় 

জানো তো?

তোমার মন্ত্রীরা তোমায় কি যে বলে আমি তার ঘুণটিও জানি না

তুমি তো অতো বুদ্ধি ধরো তবু কেনো বোকার মত আমাকে মাটিতে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দাও?

এতো চিৎকার করো আমার মাথা ধরে যায়

আর চোখমুখ লাল করে যখন একটা পাগলা ষাঁড়ের মতো আমার মুখের একদম কাছে এসে হিসহিস করে বলো "Bitch!!! তোমার সবার ভালবাসা চাই?"

আমার খুব অবাক লাগে জানো

ওইতো অত্তো অত্তো বই পড় তুমি

আধুনিক রণকৌশল তোমার চেয়ে ভালো কে আর জানে?

আমি যাকে ভালবাসি তার বুকে যে কোনোদিন প্রেম জাগতে নেই, এ তুমিও তো জানো

সে যে যুদ্ধে গেছে সেখান থেকে বেঁচে ফেরে না কেউ কোনোদিন

তুমিও তো জানো রাজা

এতো একটা পুরোনো গল্প মাত্র

https://youtu.be/KWZGAExj-es



Wednesday, December 23, 2020

চাচামিয়া

(ও চাচামিয়া আর কত???)


জিন্স প‍্যান্ট সাঁইট্টা

গলি দিয়া হাঁইট্টা

বগলে নিয়া মাইয়া

না না কচি বউটা

(OH NO....)

বগলে কচি মাইয়া

রিক্সায় লাফাইয়া

ঝরঝরা মেজাজে

ফুরফুরা আওয়াজে

চাচা শীষ দেন

(ও চাচামিয়া)

মোচে তা দেন

(ও চাচামিয়া)

ফিনফিনা বাতাসে 

চোখে ভাসে চালসে

তবু মন আনচান

চাচীর কানে কানে

চাচায় কি কন

(ও চাচামিয়া)

চাচা সবুজ মন

(ও চাচামিয়া)


চাচামিয়া বড় ধূর্ত

মুখভরা গর্ত

কচি কচি মাইয়ারা 

চাচামিয়ার ভক্ত

(কেউ বীষ দে 

কেউ বীষ দে)

রমনিমোহন চাচা 

কলিরই কৃষ্ণ

মাইয়া দেখলে চাচার 

আগে বাড়ে শিশ*

NO NO NO NO NO NO NO NO

NO NO NO NO NO NO NO NO

চাচার হিসাবী মন

বাদাম আর ফুচকা

সস্তা রোমান্সে

চাচা মারে মস্কা

আগের বউগুলান

কই জানি পালাইসে

ছোট দুইটা বাইচ্চা

গাঙ্গেতে ফালাইসে

চাচা ঝাড়া হাত পা

SINGLE মারাইসে

ফেসবুকে রাতদিন

তাক ধিন তাক ধিন

EMOTIONAL ইনবক্স

ইমোজীর বন‍্যা

চাচায় ঘুমান না 

সারাদিন খান না

এইভাবে চাচামিয়া

কচি বউ বাগাইসে

(ও মা! টুরু LOVE! YES YES! টুরু LOVE!!!)


চাচা শীষ দেন

(ও চাচামিয়া)

মোচে তা দেন

(ও চাচামিয়া)

ফিনফিনা বাতাসে 

চোখে ভাসে চালসে

তবু মন আনচান

চাচীর কানে কানে

চাচায় কি কন

(ও চাচামিয়া)

চাচা সবুজ মন

(ও চাচামিয়া)


তাক ধিন ধিন তা

(চাচার)

চোখ ভরা চিন্তা

দিনকাল ভালোনা

চাচী বড় সুন্দরী

ডাগর নয়না

মাইয়ার বয়সী

মনে হয় ষোড়শী 

সদাই হাস‍্যময়ী

এবং লাস‍্যময়ী

সিল্কী লম্বা চুল

পর্দাও করে না

বদমাইশ পোলাসব

কোনো ধার ধারেনা

চাচী নাকি সোশালাইট

ফেসবুকে ইন্সটায়

পাউটি প্রফাইল দেখে

যুবা বুক তড়পায়

থাউজেন্ডস ফলোয়ারর্স

(শত)শত রিয়েকশান

ফ্লার্টি কমেন্টসে

জ‍িন্দা সিডাকশান


চাচা চিন্তায়

(ও চাচামিয়া)

মাথায় চুল নাই

(ও চাচামিয়া)

ইন্টারনেটে তাই

চাচার আতিপাতি

চাচীর একাউন্টে

নিরবে ও গোপনে

চাচা খাপ্পায়

(ও চাচামিয়া)

চাচী যায় যায়

(ও চাচামিয়া)


চাচামিয়া রড় ভদ্র

করেন না হল্লা

জিন্স প‍্যান্ট ছাইড়া

ধরেন আলখাল্লা

মোচ ছাড়া দাড়ি তার

যেন বুজুর্গ

এতদিন পরে চাচা

গড়েছেন দূর্গ

হিসাবী চাচাজান

Subject পরকাল

কোরান আর হাদিসে 

কাটে তার দিনকাল

চাচীরেও কিনে দেন

আবায়া ও বুরখা

LATEST ডিজাইনের

ঘুরে যায় চরকা

(O...M...G...)

চাচী ভয়ে থরথর

লজ্বায় শরমে

পুড়তে তো চান না

দোযখের আগুনে

ইন্সটা ও ফেসবুকে

ছবি দেয়া বন্ধ

আল্লা রাসুল স্বামী

জীবনের ছন্দ

জুবুথুবু বের হন

দরকারে বাইরে

আকাশ বাতাস চাঁদ

দরকার নাইরে

রাতদিন আলোচনা

দ্বীনের পথে আসুন

পৃথিবীটা কারাগার

পরকালে বাঁচুন


চাচা চালাক

(ও চাচামিয়া)

খাঁটি আখলাক

(ও চাচামিয়া)

এই মাঝবয়সে

চাচায় আবার Fit

আরামে আর আয়েসে

চাচার ComboKit

চাচা চামে

(ও চাচামিয়া)

চাচী ঘামে

(ও চাচামিয়া)

(বাচ্চালোক NO DISTURBING)

চাচা চামে

(ও চাচামিয়া)

চাচী ঘামে

(ও চাচামিয়া)





নষ্টনীড়

 তুমি আমার কাঁধ ঝাঁকিয়ে জিজ্ঞেস করেছিলে

"তবে বল কেন সাজিয়েছো এই ঘর?"

আমিও নিজেকে জিজ্ঞেস করি বার বার জানো

যখন নিপুন গোছাই এই ঘর

কেন সাজিয়েছি এমন আন্তরিক বিবরনে?

কেনই বা আমিও নিখুঁত সেজে থাকি?

কেন সেজে থাকে বইঘর গানঘর খাবারঘর রান্নাঘর বসারঘর শোবারঘর এমন কি স্নানঘরও?

খবরের কাগজের স্তুপ, ব‍্যবহৃত কৌটো বোতল শিশি ব‍্যাগ যত বাজেমালও গুছিয়ে থাকে একটুও দৃশ‍্যপটকে বিরক্ত না করে

প্রতিদিন ধুলো ঝেড়ে ঝেড়ে পালকের ঝাড়ও ক্লান্ত হয়ে পড়ে 

একটা একটা করে তার খসে যায় পালক 

ভেবে দেখিনি খসে গিয়ে ওরা কি মুক্ত হয়ে যায় না কি একলা হয়ে যায়?

টেবিলে সুবাসী আবেগ ছড়ায় ধোঁয়া ওঠা রাজহাঁসের ঝোল আর ধবধবে ভাত

বিবস বিকেলে কথা বলে ওঠে শৈল্পিক চিনেমাটির বুকে আদা চায়ের আবেদন

বারান্দায় যত্নে থাকে ফুল ও ভ্রমরেরা

আর বাহারি পাতায় সেজে থাকে প্রবেশ দ্বারের পথ

আমিও নিজেকে প্রশ্ন করি জান?

একটা জীবন কেন সুখের আয়োজনেই শেষ হয়ে যায়?

সেইতো ভিজে থাকে জামার খুঁট তক্তপোষ আর বালিশ 

সেইতো বিঁধে থাকে অপমানের ছুরি অবহেলার কাঁটা অধিকারের শেকল

সেইতো দুই চোখে অতীতের অশরীরি আত্মা ভর করে থাকে

জীবনের চৌকাঠ পেরোলেই বুঝি এত আলো এত অন্ধকার?

ঝলসে যাওয়া অন্ধ হয়ে যাওয়া দুই চোখে হাতড়ে হাতড়ে খোঁড়াতে খোঁড়াতে যেন সামনে চলা

এই পরিপাটি চতুর্পাশ কে জানে 

ঘোচায় কি না অন্ধত্বের গ্লানী?



Tuesday, December 22, 2020

IMMORTAL

I know I have nobody 

So I belong to none. 

So I m awake alone 

And darkness is awake too around.

I stay so close to the darkest night as its own shadow. 


Is there any one homeless? 

Anyone looser of love? 

Anyone who mistaken the sky as the roof of consciousness? 


Is there anybody broken heart? 

Anyone dreamt and ran far far to it? 

And found only the crap of mirage? 


I know I have nothing to lose any more 

So I stay numb. 


On the other side of the window all the smokes of memories have gathered. 

They want to give me only a fountain of tears. 

So my sight is stacked on the wall, white wall, my white and void wall. 

And thousands of long long days pass away like this. 


I know my sorrows don’t make me cry any more 

So I remain Immortal 




নগরবাউল

স্মৃতি ঘেঁটে দেখি 

কখনোই ছিলাম না মাটির কাছাকাছি

মাটির গান তাই বোধ হয়

রয়ে গেল চির বিস্ময়ে

এ বাউল মন চরে বেড়ায় শহুরে রাস্তায়

আর প্রাণভরে শ্বাস নেয়

সাময়িক ল‍্যান্ডস্কেপে

একাকীত্বের ঘরে

শহরের হৃদয় খুঁড়ে বাজে তার গিটারের সুর

আর অমিমাংসিত বাক‍্যে বলে যায়

লোকালয়ের আপতিত সুখ দুঃখ বোধ





প্রস্থান

এ সাগর তোমায় দিলাম

এ পাহাড় তোমারি থাক

আমি যাচ্ছি দূরে কোথাও

আকাশ মেঘে ঢেকে যাক


বৃষ্টি ঝরে পড়ুক

বৃষ্টি তোমায় দিলাম


রাত্রি নিকষ কালো

জোনাকীরা তোমার চোখে থাক

আমি যাচ্ছি আরো দূরে

সময় তোমার হাতে থাক


বৃষ্টি ঝরে পড়ুক

বৃষ্টি তোমায় দিলাম


(চট্টগ্রাম, ২০১০)


https://soundcloud.com/walid-mosallam/sam-smith-too-good-at-goodbyes?ref=clipboard&p=a&c=0



Monday, December 21, 2020

নির্বাণ

শুধু সংগীত নয়

গুচ্ছগুচ্ছ বোধ লিখে রাখি স্বরলিপিতে

শুধু শব্দ নয়

রাশিরাশি সত্তা লিখে রাখি স্তবকে

পাপবিদ্ধ অচ্ছুত দলিত হয়ে

মানুষ নয় শিল্পীর জীবন রেখায় হেঁটে যাই প্রতিদিন

একদিন শেষ হয়ে যাব কলম বা সিগারের মতোই

প্রাণহীন দেহটাও হয়তো সয়ে যাবে ঘৃণা

শুধু রয়ে যাবে সংগীত ও শব্দ তোমারই চিরন্তন সত‍্য বুকে নিয়ে

সেই দিন ভালবাসবে ঠিক জানি

আমায় নয়

এই শব্দ ও সংগীত



টুকরো কথা : অসাড়

যেদিন আমি ভালবেসে সব হারিয়েছিলাম

সেদিন তুমি আমার মুখে ছুঁড়ে দিয়েছিলে একদলা থুতু

আজ আমার সংকোচহীন উদ্ধত লাম্পট‍্য নিয়ে তোমার কি ফতোয়া

তা আসলে ভেবে দেখিনি



Sunday, December 20, 2020

গল্প : দুই : ফাটল

মনার মা তার পরিবার নিয়ে থাকতো আমাদের আউটহাউজে সার্ভেন্ট'স কোয়ার্টারে। বয়স তিরিশের কোঠায়, গায়ের প্রকৃত রং ঠিক বোঝা যেতনা তবে হয়তো কোনকালে হলদে ফর্সাই ছিল। বয়সের কারনে যতনা বলি রেখা পড়েছিল ওর একটু চাপা গালের হাড় বেরোনো চৌকোনো মুখমন্ডলে তার চেয়েও বেশি পান খেতে খেতে। সরু কপালেও সেঁটে বসে গিয়েছিল গভীর ভাঁজ আর ছোটো ছোটো চোখগুলোর নিচেই ছড়িয়ে থাকতো থ‍্যাবড়া নাকটা। পান খেতে খেতেই হয়তো ঠোঁট জোড়া অমন মরচে রঙের হয়ে গিয়েছিল। উচ্চতা পাঁচ ফুটের কিছু কম কিন্তু চ‍্যাপ্টা চৌকোনো বজ্রআঁটুনির শরীরে তার যে দৈহিক শক্তি প্রকাশ পেতো তাতে উচ্চতার কমতিটা তেমন একটা গ্রাহ‍্য হতনা। আঁটসাঁট হাতখোঁপা আর বড়বড় ফুলের নকশাওলা উজ্জ্বল রঙের ছাপা শাড়িতে তার ছিল একেবারে খাঁটি বাংলাদেশী খেটে খাওয়া শরীর। এমনিতে গম্ভীর হয়েই থাকতো আর কাজ করে যেতো মন দিয়ে কিন্তু মাঝেমধ‍্যে কথা বলবার সময় উচ্ছসিত হয়ে উঠলে বড় বড় সিঁটে পড়া দাঁতগুলো বের করে হাসতে থাকতো হে হে হে আওয়াজ তুলে আর তারপরই মরিচা রঙের জিভটা বের করে ঠোঁটের কোণ গলে বেরিয়ে যাওয়া পানের পিক চেটে নিত। গলার আওয়াজটা তার এতোটাই বাজখাঁই আর ফ‍্যাসফ‍্যাসে যে আমাদের সেই চুপচাপ নিমগ্ন পাহাড়ি পরিবেশের জন‍্য বেমানানতো ছিল বটেই একেবারেই যেন ছিল কোন এক ভয়ানক দস‍্যুর ত্রাস। হঠাৎ হঠাৎ ওর আমোদ পাওয়া হাসির শব্দ যেন ফালাফালা করে দিত শান্তিপূর্ণ ভদ্র সম্ভ্রান্ত রুচিশীল অপার প্রাকৃতিক প্রাচুর্যভোগী আমাদের ওই সোসাইটিটা। আমরা ওটাকে রেসিডেন্সিয়াল সোসাইটিই বলতাম কারন অফিসার্স বাংলোগুলো ছিল বেশ দূরে দূরে আর প্রতিটিই ছিল সুযোগ সুবিধায় স্বয়ংসম্পূর্ণ, পাড়াগুলোর মতো প্রাণচাঞ্চল‍্য, সৌহার্দ‍্য বা বিতন্ডা কিছুই এখানে ছিলনা। প্রতিটি বাংলোই তার ভেতরে এক বা একাধিক হাতি লুকিয়ে রাখতো, শিল্পসংস্কৃতি ও ধর্মের চর্চা করতো আর একে অন‍্যের সাথে এক পরিশীলিত বরফঠান্ডা প্রতিযোগিতা বিদ‍্যমান রেখে যেতো। অধিবাসীদের বেশিরভাগের মূলত অবসর কাটতো ক্লাবঘরে তাসের আড্ডায় নিষিদ্ধ ব্র‍্যান্ডেড মদ আর দারুন মুখরোচক সব সান্ধ‍্যকালীন নাশতার সাথে। ওদের প্রত‍্যেকেরই ছিল উপদেশমূলক গল্পের শেয়ালের মতো প্রখর সময়োপযোগী চাতূর্য আর  একটা করে অদৃশ‍্য মাছি তাড়ানোর লেজ। 


বলছিলাম মনার মায়ের কথা, সে যে কবে কেমন করে এই তল্লাটে এসে পড়েছিল সুদূর ভোলা থেকে, তার শৈশব কৈশোর কেটেছিল কোথায়, আদৌ লেখাপড়া কিছু জানতো কি না, বাবা মা আত্মীয় স্বজন ছিল কি না বা থাকলেও কোথায় থাকতো, মনার বাপের সাথে তার কি করে দেখা হলো বা বিয়ে হলো কিংবা ওর বাপমায়ের রাখা নিজের নামটাই বা কি এইসব ব‍্যাপারে আমাদের আগ্রহ কখনো ছিলনা বা কোনো প্রশ্নও কোনোদিন মাথায় আসেনি। আমি ওকে শুধু জানতাম ওই বিশাল বিলাতি বাড়িটার অন‍্য আর সব সুবিধার মতোই যখন থেকে আমি রাতদিন ব‍্যস্ত থাকতে শিখে গিয়েছিলাম অদ্ভুত সব আত্মমগ্ন বই, লেখার খাতা, ক্রেয়নে আঁকা ছবি, ধ্রুপদী ও রকমারি নাচগান, টিভি, যত রাজ‍্যের দুষ্টুবুদ্ধি আর জটিল চিন্তাভাবনা নিয়ে। আমার ছোট ভাইটা তখন little miss muffet, dingdong bell কিংবা মনারে মনা কোথায় যাস বলে বলে অনেক বাহবা হাততালি চটকানো ধরনের আদর  পাচ্ছিল। বোনটা কি যেন দুশ্চিন্তায় ডুবে থাকতো তখন আর এই ইবলিশ ভাইবোনদের অত‍্যাচারে ওর মতো মাবাবার আদর্শ  লক্ষী মেয়েটার জীবনটা যে কতটা অতিষ্ট তা ওই তল্লাটের সব মানুষ গরু কুকুর বিড়াল পাখি এমনকি গাছপালারাও জানতো। বড় ভাইটা এতটাই বড় ছিল যে ওর একেবারে নিজেরই একটা জগত ছিল আর ওর মেনিমুখো বাঁদরমুখো ইঁদুরমুখো বন্ধুগুলোর সাথে কি যে করতো সারাদিন আর কই কই যে ঘুরতো আমাদের অনেক আগ্রহ থাকা সত্বেও কিছুই জানতে পারতাম না। ওরা শুধু মাঝেমাঝে দল বেঁধে গেঁড়ে বসতো আমাদের সবুজ বসার ঘরে (আমাদের মত বাচ্চারা যেখানে গেলেই দুরদুর করে তাড়া খেতাম), গান্ডে পিন্ডে গিলতো আর তারপর দল বেঁধে আবার কোথাও বেরিয়ে পড়তো। একটাই শুধু যোগ ছিল ওর সাথে যখন আমরা বেচারি বোনটার পেছনে লাগতাম তিনজন মিলেই আর যখন WWF মুভগুলো প্র‍্যাকটিস করতাম। তখন অবশ‍্য আমি আর আমার ছোট ভাইটি একজোট  হতাম আর কিছু বুঝে ওঠার আগেই দুদিক থেকে বড় ভাইটার ওপর "ইয়া...." বলে ঝাঁপিয়ে পড়তাম আমাদের ছোটছোট কোনুইগুলো তাক করে। কিন্ত সত‍্যি বলতে কি আমি ছিলাম বড্ড বেশীই খামখেয়ালি এবং আনমনা। ক্লাসের পড়াশুনা নিজের কাজ বা ঘরের কাজে সাহায্য করবার ব‍্যাপারে ফাঁকিবাজ আখ‍্যা পেলেও মূলত ছিলাম চরম উদাসীন। আমার বোনটা, যেকিনা মাত্র সাত কি আট বছর বয়সে ছোট্ট আমাকে আগলে রাখতে শিখেছিল আর ওই বয়সেই হয়ে উঠেছিল মা আর দাদী নানীর মতো, বলতো "দাঁড়াও আমি একটা গল্প বলি তুমি শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পড়তো", সেই মূলত আমার রাজ‍্যের জিনিসপত্তরগুলো গুছিয়ে রাখতো আর মাঝেসাঝে চুলে তেলও লাগিয়ে দিতো। মনার মা, জানিনা ঠিক, বোনটার প্রতি দয়াশীল হয়ে নাকি আমাকেই ভালবেসে না গৃহকর্ত্রীর হুকুমে, কি কারনে কখন যে আমার জিনিসপত্তর গোছাতে শুরু করলো মনে নেই। আর যতই বড় হতে থাকলাম সে যেন কড়া নজরে নজরে রাখতে শুরু করলো। আমার নিত‍্যনতুন খেয়াল, দুষ্টুবুদ্ধি আর উদাসীনতায় সে যেন মায়ের চেয়ে কম বিরক্ত ছিলনা। এতোগুলো বছরে সে নিজেকে ঠিক কোন জায়গাটাতে দেখতে অভ‍্যস্ত হয়ে পড়েছিল তা কখনো খেয়াল করিনি বরং বিরক্তই হতাম কারন বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেবার সময় এমন কি ফোনে কথা বলবার সময়ও যেন নজর রাখতো আর বোঝার চেষ্টা করতো হালচাল। আর আমার বন্ধুরা এলে কি জানি কেন এক নিঃশব্দ বিদ্বেষ  প্রকাশ করতো। আমার মায়ের সাথে তার নিবিড় এক পেশাগত সম্পর্ক ছিল কারন সে কাজেকর্মে ছিল অত‍্যন্ত দক্ষ‍ ওকে ছাড়া মায়ের একদিনও চলতোনা। আরও সাহায‍্যকারীরা থাকলেও মনার মা ছিল একাই একশ। অতবড় বাড়িটা পরিষ্কার পরিপাটি রাখার জন‍্য আর গুষ্টির লোকের প্রতিদিনের আরামআয়েশ ও পাঁচবেলা ভুরিভোজ যোগাড়ের জন‍্য আমার মায়ের সবচেয়ে অপরিহার্য কাজের ঘোড়া ছিল মনার মা। আর পরিষ্কারের দক্ষযজ্ঞ এমনই ছিল যে মাসে দু'মাসে একবার যেদিন পুরো বাড়িটা ছাদ থেকে মেঝে পর্যন্ত সাফ করা হতো আমরা (অন্তত আমি) সব বাড়ি ছেড়ে পালাতাম আর একেবারে সন্ধ‍্যা করে ফিরতাম। শুধু একটাই সমস‍্যা ছিল, মাঝে মাঝে হঠাৎই মনার মা এমন এক আজব যৌন ইঙ্গিতপূর্ণ রসিকতা করে বসতো যে লোকে কিছু বলবে কি একেবারে হাঁ হয়ে যেতো। আর তার লাম্পট‍্যভরা চোখ আর দাঁত নিয়ে এমনভাবে হাসতে থাকতো, অন‍্যদের কথা জানিনা কিন্তু গৃহকর্ত্রীর যে তার এমনতর নোংরামিপূর্ণ ঔদ্ধত‍্যে পায়ের নিচের মাটি কিছুটা হলেও সরে সরে যেতো তা নিশ্চিত। যেমন ধরুন মা যখন আমাদের সরকারি ড্রাইভারটিকে নিয়ে অভিযোগ করতো তার মেজাজ খারাপ করা বেয়াড়া জমিদারপোসুলভ আচরনের জন‍্য, সেই প্রচন্ড খারাপ মেজাজের মূহুর্তে সে হয়তো হে হে হে করে হেসে বলে বসতো "হুনেন খালাম্মা, হেই ব‍্যাডার দাফট সবই দ‍্যাখাইন্না... হে হে হে...আমি কইতে ফারাম হেই ব‍্যাডার শইল্লে কয়ান আড্ডি আছে আর হ‍্যায়ও কইতে ফারবো আমার শইল্লে কয়ান আড্ডি আছে...হে হে হে..."। মনার মা তার লাম্পট‍্য নিয়ে অনেক রসালো গল্প নিজেই সকলকে বলে বেড়াতো। ওর লাম্পট‍্য নিয়ে কারো কোনো সন্দেহ ছিলনা তেমনি ওর দক্ষতা ও পবিত্রতা নিয়েও কারো কোনো সন্দেহ ছিলনা। কোথা থেকে যে সে এক প্রকার ভেষজ জ্ঞান পেয়েছিল কে জানে? সে ঠিক জানতো পাহাড়ে কোথায় কোন গাছ লতাপাতা বা মূল আছে যা দিয়ে সেরে যায় দাঁতের ব‍্যাথা, দীর্ঘ‍্যমেয়াদী পেটের অসুখ, আহ্নিক জ্বর কিংবা গর্ভকালীন জটিলতা। ঠিকায় সে স্বল্পখরচের ধাত্রী,  ডাক্তার ও ওঝারও কাজ করতো। দূর দূর থেকেও গরীব লোকজন আসতো ভেষজ ওষুধ, তাবিজ কবচ আর পানিপড়া নিতে। হঠাৎ হঠাৎ কোনো একদিন সে ধবধবে সাদা থান পরে একটানা নামায পড়ে যেত আর বিড়বিড় করতো ঘন্টার পর ঘন্টা। প্রতিবেশীরা এইসব ভৌতিক কান্ডকারখানায় ভয় পেয়েও যেত আবার ভীড় জমিয়ে দেখতোও। প্রচলিত ছিল যে ওর কথা না কি অক্ষরে অক্ষরে ফলে যায় আর ওকে গালমন্দ করলে শাস্তি অনিবার্য। তাই সবাই ওকে সমীহ করে চলতো আর প্রবল মৌলবাদি লোকটিও এমন লম্পট চরিত্রহীন বেয়াদব খানকিটাকে মনে মনে দূর্বিসহ ঘৃণা করলেও পাথর ছুঁড়ে, কুপিয়ে বা জীবন্ত কবর দিয়ে মারার কথা মুখে আনতো না। মনার মার সগর্ব পদচারনা ছিল পুরো এলাকাতে আর প্রতিটি বাড়ির হাতির খবর সে কেমন করে জানি জানতো তাই কেউ তাকে ঘাটাতোও না। 


মনার মার বর, মনার বাপটা কালেভদ্রে রিক্সা চালাতো। বাকি সময়গুলো তার ইয়ার দোস্তদের সাথে জুয়া খেলতে খেলতে, বাংলা খেয়ে আর না জানি আর কত কি নেশা ভাং করতে করতে কেটে যেত বেচারা হয়তো বুঝতেও পারতো না। বউ যখন আর সইতে না পেরে গাল পাড়তে শুরু করতো চিৎকার করে আর চ‍্যালাকাঠ নিয়ে তেড়ে আসতো তখন সে ঘর থেকে বেরিয়ে যেত আর মাত্র ক'ঘন্টায় শ দু'তিন টাকা কামিয়ে ফেলতো তারপর সে টাকায় রাজ‍্যের খাবারদাবার কিনে এনে ঘরে রীতিমতো একটা ভোজ বসিয়ে ফেলতো, তখন বউছেলেমেয়েদের আশ্বাস দিয়ে বলতো "এতো গরম হস ক‍্যান? আমি কি মইরা গেছি নি?" তারপরের কয়েকদিন আবার হয়তো তার শুধু ঘুমিয়েই কেটে যেত। ফুলকড়ই গাছের ছালের মত অন্ধকার গায়ের রঙ আর একহারা বেশ লম্বা গড়ন ছিল মনার বাপের। এমন হাতুড়ি পেটানো শরীর ও মুখোমন্ডল ছিল তার যে সাদারা দেখলে হয়তো বলতো 'BlackNutStick'। বাড়ির পেছন দিকে রান্নাঘরের জানলা বা দরজাতে দাঁড়িয়ে নিচে যখন মাঝেমাঝে ওকে দেখা যেত দেখতাম ঠা ঠা রৌদ্রে ওর তেল দেয়া মাথাটা কি ভীষন চকচকে। কাছ থেকে কোনোদিনই ওকে দেখিনি। ওই আউটহাউজের গন্ডি পেরিয়ে চুড়ান্ত অলস নেশাখোর লোকটা কোনোদিন সিঁড়ি বেয়ে ওপরে ওঠেনি। বা আমাদের বাড়ির সামনে যে অবারিত সুন্দর সবুজ ছিল অপূর্ব নীল আকাশ সূর্য চাঁদ আর মেঘেদের নিচে, কৃষ্ণচুড়া দুটো যেখানে  পৌরাণিক নাচের ভঙ্গিতে স্থির হয়ে ছিল, আগুনরঙা ফুলেফুলে ভরে থাকতো আর হয়ে উঠতো সকালে সন্ধ‍্যায় দুরন্ত এক ঝাঁক টিয়েদের ভাব বিনিময়ের স্থান, যেখান থেকে দেখা যেত রহস‍্যময় শহরটাকে, দূরের সমুদ্র রেখা, বাতিঘর আর যেন সবচেয়ে সরু তুলিতে আঁকা কিছু জাহাজের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অবয়ব, সেখানেও মনার বাপকে কোনোদিন চোখে পড়েনি। মনার মা খুব কৃতজ্ঞ এবং গর্বিত ছিল মনার বাপের মরদানা নিয়ে। ওদের ভালবাসাটা ঠিক কেমন ছিল কে জানে, রাতে বেদম ধোলাই খেয়েও মনার মা পরদিন  দুপুরে বিরামহীন পরিশ্রম শেষে নিজের খাবারটা মনার বাপের পাতে সাজিয়ে দিয়ে বাজারে যেত আনাজপাতি কিনতে, কোরবানির গরুর চর্বি সুগন্ধি মশলা দিয়ে ফুটিয়ে জমিয়ে রাখতো সারাবছর মনার বাপ ওর হাতের পরোটা খুব ভালবাসতো বলে, আর রোযার ঈদের আগে আগে নতুন শার্ট আর লুঙ্গির কটকটে রঙগুলো নিশ্চিত করে নিত। ওরা ওদের দায়িত্বহীনতা আর লাম্পট‍্যের বদনাম আর সত‍্যতাকে ঠিক কতোটা ভাগ করে নিত ছোটবড় সব আনন্দ আর চিরপরিবর্তনশীল বাস্তবতার সাথে সাথে কে জানে? বাড়ি ছাড়ার পর একদিন শুনলাম মনার বাপ কিভাবে জানি মরে গেছে। তারপর বছর খানেক পরে আবার জানতে পারি পঞ্চান্ন কি  ছাপ্পান্ন বছর বয়সের মনার মা  আবার বিয়ে করেছে। ওর বেহায়াপনার গল্পে আবার সবাই মেতে উঠেছিল তখন। সে নাকি লাল হলুদ সবুজ আরও কতনা রঙের পাটভাঙা নতুন নতুন শাড়ি পরে পরে সেজেগুজে খোঁপায় ফুল দিয়ে এক চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারির মাথা খেয়েছিল, বেচারা নাকি তার চেয়ে বয়সে অন্তত দশ বছরের ছোট। ওদের অপবিত্র প্রেম আর অনাচারের জোয়ারে নাকি নব‍্যধার্মিক প্রতিবেশিদের প্রতিনিয়ত দোযখের ভয়ে দিন কাটাতে হচ্ছিল। আমার মায়ের কাছে সব খবর পৌঁছে দিত পুরোনো গৃহপরিচারিকারা যারা ওই এলাকাটা ছেড়ে আসবার পরও প্রতিবছর ঈদের সময় বেড়াতে আসে ওদের উপহার আর পাওনা বুঝে নিতে। ওরা শাপশাপান্ত করে বলতো "মরলে বুজবো খালাম্মা, আগুনে যখন ফুড়বো, কব্বরে হাঁফ খোঁফের কামড় খাইলে বুজবো। আল্লারে! এডি কুনো কতা নি? তওবা আসতাগফিরুল্লা! গজব ফড়বো গজব ফড়বো। আমরা জামাই ফুত ফুতের বউ লই গর করি। এডি দ‍্যাখলে ফোলাফাইন খারাফ অই যাইতো না? আল্লা মাফ করো।" এসব শুনে বুঝতাম বয়স আর অর্থনৈতিক পরিবর্তনের কারনে মনার মার প্রয়োজনীয়তা অনেকের কাছেই আর নেই এখন। আমার মায়ের সাথে মনার মায়ের যোগাযোগটা কোনোদিনই একেবারে বন্ধ হয়ে যায়নি। পুরোপুরি ভিন্ন মেরুর দুই দাপুটে অহংকারি মহিলা জীবনের প্রতি তাদের চিরজিজ্ঞাসাগুলোর উত্তরগুলো যতদিন না খুঁজে পাবে এ যোগাযোগ বন্ধ হবার নয় কোনোদিন। আর বদলে যাওয়া বাস্তবতায়, বদলাতে থাকা আত্মার একেবারে বিপরীতধর্মী বিকাশ ও প্রকাশ রোধ করে নাকি তার মুক্তি সহ‍্য করে সমাজ তার চিরসৌকর্য প্রতিস্থাপন করে বা করতে পারে তার উত্তর অন্তহীন সময়ই হয়তো জানে।


মনার মার একটা মেয়েও ছিল আমার চাইতে বছর দুয়েকের ছোট। নাম ছিল জোনাকি। এ ছিল পুরোই 'কানা ছেলের পদ্মলোচন' গোছের নাম, কারন ও পেয়েছিল একদম বাপের মত চেহারা রঙ ফলে অন্ধকারে ওকে একেবারেই দেখা যেতনা। আর পেয়েছিল মায়ের মত কন্ঠস্বর। সারাদিন টো টো করে ঘুরে বেড়াতো। চুলগুলো ছিল ওর গলার মতই বাজখাঁই আর উকুনে ভর্তি। সারাগায়ে এত ধুলো নিয়ে ও যে কি করে এত স্বাভাবিক থাকতো এমনকি ঘুমিয়েও পড়তো কে জানে। মা খুব বিরক্ত হতো ও আমাদের বাড়ি আসলে বলতো "মনার মা তোমার মেয়েকে না আনতে নিষেধ করেছি? আর যদি আসতেই হয় যেন পরিস্কার পরিচ্ছন্ন হয়ে আসে।" জোনাকি স্কুলে ভর্তি হলেও ক্লাস মোটেও করতো না। বাপ মা ভাই সবাই মারতো ওকে সকাল দুপুর সন্ধ‍্যা পালা করে আর ও পালিয়ে যেত হাত থেকে, বেশ দূরে দৌড়ে গিয়ে একটু থেমে পেছন ফিরে ভেংচি কাটতো বা কাঁদতে কাঁদতে গালি দিত কিংবা কখনো হেসেই গড়িয়ে পড়তো তারপর আবার ছুট দিত। খুব কম সময়ই সে ওদের ঘরের দরজার সামনে ক্ষয়ে যাওয়া ইটগুলোর ওপর পা ছড়িয়ে জোরে জোরে কাঁদতে বসতো। 


আমার কেন যেন মনে হয়েছিল জোনাকি যদি গান শিখতে পারে তবে তা খুবই সম্ভাবনাময় হতে পারে। ফ‍্যাসফ‍্যাসে জোরালো পরাক্রমশালী পূর্ব এবং পাশ্চাত‍্যের নারীকন্ঠগুলো তখন আমাকে প্রচন্ডরকম বেপরোয়া করে তুলছিল। সবার বিরক্তি রাগ উপেক্ষা করে ধুলোমাখা,  নাকে সর্দিওলা জোনাকিকে ডেকে এনে বসালাম একেবারে আমাদের সংগীত শিক্ষা ও সাধনার চৌকির ওপরে। প্রথমে ওকে হারমোনিয়ামের সাথে তালিম দিলাম শুদ্ধ সুরে আরোহী অবরোহী। ঠিক যুতসই হচ্ছেনা বলে শেখাতে চাইলাম স্বরমালিকা। কিন্তু "|পা নি ধা আ | নি ধা মা পা |" এর অপূর্ব চলন সে বুঝতেই পারছিল না। ভাবলাম এই বুনো মূরগীটাকে শুধু শুধু প্রথমেই সংগীতের ব‍্যাকরণ বোঝাতে যাওয়াটা একটা বাজে আহাম্মকি ছাড়া আর কিছুই নয়। কিন্তু আমি হাল না ছেড়ে ওর কানের কাছে 'চাঁদের হাসি বাঁধ ভেঙেছে', 'সবে মিলি গা_ও', 'ধনধান‍্যে' বা 'ওই দেখো মা লাল টুকটুক' শতবার গেয়ে চল্লাম আর জোনাকিও অত‍্যন্ত মনোযোগী হয়ে কোথায় কোন স্বরে তারস্বরে চেঁচাতে লাগলো আমি কুল কিনারা হারিয়ে যাচ্ছেতাই হয়ে যেতে লাগলাম। এভাবে কদিন যাবার পর বাড়ির সকলের ওপর চরম নির্যাতন ও পাশবিক বিনোদনে ইস্তফা দিয়ে একদিন আমি মেঝেতেই হাতপা ছড়িয়ে ছাদে স্থির দৃষ্টি রেখে শুয়ে পড়লাম আর শুয়েই থেকেছিলাম দুপুরের খাবারের আগ পর্যন্ত। এর অনেক বছর পর আবার আমার প্রায় এমনটাই অবস্থা হয়েছিল যখন আমাকে বলা হয়েছিল শহরের কিছু সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের প্রমিত বাংলা উচ্চারণ তত্ত্ব শেখাতে তাদের থিয়েটারকর্মী হিসেবে প্রস্তুত করবার প্রণালিগত অংশ হিসেবে। আরও পরে যখন আরও একটু শিক্ষিত হলাম বুঝলাম পরম্পরার চরম অপুষ্টি আর অসুরের অভিশাপগ্রস্ত এইসব শিশুদের মেধা ও মনন আধুনিক উৎকৃষ্টতর মানুষের নয়। রাষ্ট্র পিতা নয়। শিক্ষক ঈশ্বর নয়। চেষ্টায় সব হয় না সবসময়। 


যাই হোক, জোনাকি যেহেতু আমার সব স্বপ্ন পরিকল্পনা, প্রতীজ্ঞা ও উদ‍্যোগে পানি ঢেলে দিয়েছিল আমি ওর প্রতি সমস্ত আগ্রহ হারিয়ে ফেললাম। আর আমার মূল‍্যবান সময় ও বিশ্বাস নষ্ট করা এবং তারচেয়েও ভাইবোনদের কাছে আমাকে বিশ্রীরকম হাস‍্যকর করে তুলবার প্রতিশোধ হিসেবে আমি ওর চেহারা নাম অস্তিত্ব সব ভুলে যেতে চাইলাম এবং গেলামও। আমারি সাথে সাথে ও যে বড় হচ্ছিল খুব কাছেই আমার কোনো ধারনাই ছিল না। কখন যে ফ্রক ছেড়ে কামিজ পরতে শুরু করেছিল কিংবা মাথার গায়ের ধুলোগুলো ঝেড়ে ফেলতে আদৌ কোনোদিন শিখেছিল কি না তাও জানতাম না। পরে শুনেছিলাম ওর বিয়ে হয়েছিল বাচ্চাও হয়েছিল। আমি খুব নিমগ্ন ছিলাম আমার আপটাউন গন্ডীর সম্পর্ক শিহরণ বোধ আর চর্চাগুলো নিয়ে। বিভৎস মজায় দিনগুলো কাটাতে লাগলাম বন্ধুদের সাথে আর প্রগৈতিহাসিক সমাজ ও শিক্ষাব‍্যবস্থার প্রতি চুড়ান্ত অবজ্ঞা প্রদর্শন করে আমরা সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কাটিয়ে দিতাম হুল্লোড়ে আর আকাশকুসুম স্বপ্নের ঘোরে। এরই মধ‍্যে আমি একটা প্রেম করতেও শুরু করলাম পুরোপুরি বেয়াড়া গোছের। এতোটাই বেয়াড়া হয়ে উঠেছিলাম যে বাড়িতে সবাই আমার সাথে কথা বলাই বন্ধ করে দিল। এমন কি মনার মাকেও যদি বলতাম যে "বুয়া, একগ্লাস পানি দাও তো" সেও আমার দিকে চোখ গরম করে না জানি মনে মনে কত গালি দিতে দিতে পানি না দিয়েই গটগট করে চলে যেত। চেনাজানা বন্ধুরা ও পরিচিতরা মনে হতো যেন পপকর্ণ নিয়ে তামশা দেখতে বসেছে। তারা প্রকট আত্মবিশ্বাসেই বলে বেড়াতো যে এই মেয়ে হল এক হাড়বজ্জাত ফাজিল, প্রেমট্রেম কিচ্ছু না, নতুন কোনো বদমাইশির খেয়াল বা ফন্দি ছাড়া একে আর কিছুই বলা চলেনা। আরও বলতো যে ভাল মানুষ প্রেমিক বেচারার কপালে দূঃখ আছে। কিন্তু আমি সেই প্রেমিকটার সঙ্গে শব্দে গন্ধে চুম্বনে নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়লাম। ওর অদ্ভুত সুন্দর মুখ আর একাগ্রতা আমাকে প্রতিনিয়ত দূর্বল আর কেমন যেন ভীতুও করে তুলতে লাগলো। এরই মধ‍্যে একদিন ডেটিংয়ে যাবার আগে বাবার কাছ থেকে জন্মদিনে উপহার পাওয়া আকাশনীল সুতোর কাজ করা মসলিনের জামাটা ইস্ত্রী করতে গিয়ে বুঝি ইচ্ছে করেই একেবারে বুক বরাবর পুড়িয়ে দিল মনার মা। আর আমি ক্ষেপে যেতেই কোনো কথা না বলে উল্টো রাগ দেখিয়ে চলে গেল অন‍্য ঘরে। আমার মাথায় এমন আগুন জ্বললো যে মনে মনে ঠিক করলাম এবার এই শয়তান মহিলাটাকে যে করে হোক তাড়াতেই হবে।


আমার মা ই ছিল পরিবারের সর্বেসর্বা। তার তীক্ষ্ম বুদ্ধিমত্তা ও কঠোর পরিশ্রমের কারনে তো বটেই তাছাড়া নিজের সুদৃঢ় অবস্থান এবং অবিনাশযোগ‍্য ক্ষমতার ব‍্যাপারে তার ছিল অটুট সাবধানতা। ক্ষমতা ও পরম্পরা সংরক্ষণের বুনিয়াদি শিক্ষা সে পেয়েছিল তার নিজের মায়ের কাছ থেকেই যে ছিল এক কট্টর পাঠান। অপ্রতিদ্বন্দী সৌন্দর্য এবং সম্ভ্রান্ত জীবনযাপনের অহংকার তাদের দুজনেরই মোক্ষম অস্ত্র ছিল হালের প্রতিযোগীতামূলক সমাজ বাস্তবতায়।  মনার মা নিশ্চই এই সবকিছু নিয়েই মোহমুগ্ধ ছিল কারন  যাই হয়ে যাক না কেন সে প্রতিটি কাজে এমন দক্ষতা এবং সম্পুর্ণতার পরিচয় দিত যেন কোন প্রশ্ন কেউ না তুলতে পারে। কিন্তু তারপরও হঠাৎ কখনো কখনো সে তার মনের ভিন্ন চিন্তা প্রকাশ করে ফেলতো যেমন "বড় বাইয়ারে দেরী কইরা বিয়া দিয়েন", "ছোড বাইয়ারে ঠিক করেন", "ছোড আফাই সবচেয়ে সংসারী, দ‍্যাখবাইন ফরে"। এ সমস্তই ছিল সীমা অতিক্রম করা গায়ে জ্বালা ধরানো কথা। সে হোক, মনার মার মনা ছিল সে গাছে চড়তো আর পেড়ে দিত নিমপাতা, যেকোনো চামড়ার সমস‍্যার অব‍্যার্থ সমাধান। আরও পেড়ে দিত সজনে, সজনের পাতা, সজনের ছাল, মেহগনির গোটা, বড় গাছে লতিয়ে ওঠা ধুন্দল আর সোনালু ফুলের ঝাড়ও। সে হয়েছিল পুরো মায়ের মতো দেখতে আর খুবই ভদ্র স্বভাবের। কোথাও একফোটা দুর্নাম তার ছিলনা। কিছু কাজমাজও করতো পরিবারকে সাহায‍্য করতে। যে বছর মনার মায়েরা দেশে গেল বেড়াতে ফিরে এল মনার বউ শারমিনকে সাথে করে। আমরাতো দেখে অবাক অমন নায়িকার মত সুন্দর বউ দেখে। যেমন গায়ের রঙ তেমন লম্বা আর তেমনই চোখমুখের নকশা। মনার মা জানালো ও বেচারির মাবাবা নিজের ভাইবোন কেউ নেই, কোন এক আত্মীয়র কাছে থাকতো বড় অভাবে। যৌতুক তো নয়ই বরং সাধ‍্যমত নিজেই সাজিয়ে ছেলের বউ এনেছে সে। কিছুদিন পর শারমিনও কাজে যোগ দিল আমাদের বাড়ি আর বিনিময়ে পেল আউটহাউজে নিজের একটা আলাদা ঘর যেখানে সে মনার সাথে নতুন সংসার পেতেছিল। শারমিনের রুপ দিনদিন আরও খুললো, হাড্ডিসার দেহটায় একটু প্রাণ এলো আর কিছুদিনের মধ‍্যে বুঝলাম জীবন সম্পর্কে ওর একটা আলাদা দৃষ্টিভঙ্গি আছে আর একপ্রকার রসবোধও আছে। সে তার ভাগ‍্য নিয়ে বেশ সুখী ছিল কারন শ্বশুরবাড়ির সবাই তাকে ভালবাসতো, মনা তার সাথে ভাল ব‍্যবহার করতো আর সবচেয়ে বড় কথা সে পেটভরে খেতে পাচ্ছিল আর ভাল ভাল পরতেও পারছিল। 


এরই মধ‍্যেই জানিনা কি হলো একদিন মা খুব ক্ষেপে উঠলো মনার মায়ের ওপর আর সিদ্ধান্ত নিল সেই মুহূর্তেই ঘাড় ধাক্কা দিয়ে ওদের আউটহাউজ থেকে বের করে দেবে। এই চরিত্রহীন মহিলা আর তার নেশাখোর স্বামীটিকে এতদিন সহ‍্য করাটা এক ক্ষমার অযোগ‍্য পাপই মনে হলো তার। আমার বোন ততোদিনে খুবই ধার্মিক হয়ে উঠেছে আর একজন ধার্মিক স্বামীও পেয়ে গিয়েছিল সেই সাথে ছিল সাত মাসের অন্তঃসত্তা। সামনে তার চতুর্থবর্ষের চুড়ান্ত পরীক্ষা, এই শারীরিক ও মানসিক অবস্থার মধ‍্যেও সে ক্ষেপে উঠলো ওই দূষিত পরিবারটাকে উচ্ছেদ করতে। আর আমিও সুযোগ পেয়ে কিছু না বুঝেই গলা তুল্লাম "দাও দাও এক্ষুনি বের করে দাও।" বাবা শুধু বললো "ছেড়ে দাও না। এতো বছরের পুরোনো লোক। কি আছে? বাদ দাও।" এমন দূঃশ্চরিত্রদের প্রতি এমন মহানুভবতা দেখে মা যেন আরও ক্ষেপে উঠলো। আর আমরা সবাই ই মতামত দিলাম ওদের বের করে দেয়া হোক। আমরা কেউই ভাবলামই না যে ওরা কোথায় যাবে আর এতোগুলো বছর তো মানুষটা ছিল, তার সমস্ত অস্তিত্ব ও স্বয়ংক্রিয়তা নিয়ে এখানেই ছিল। আমরা যখন প্রবল ক্ষয়ের মধ‍্যে বেড়ে উঠছিলাম আর এক এক করে স্বপ্নগুলোর সাথে সাথে মর্যাদাও হারাচ্ছিলাম, বন্ধুরা যখন তাদের হৃদয়ের রঙ দেখাচ্ছিল আর অন‍্য দেশে অন‍্য শহরে অন‍্য বন্ধনে পাড়ি দিচ্ছিল, বাবার বদলিটা যখন আর ঠেকানো গেলনা আর স্নেহহীন শহরে অস্তিত্বের লড়াইটা একলা একলা লড়তে লড়তে যখন আমি একটু একটু করে উচ্ছন্নে যাচ্ছিলাম আর যখন দিনের পর দিন পাহাড়ের অনেক অনেক ভেতরে যেখানে লোকের আনাগোনা নেই মোটেও সেখানে  গিয়ে বসে থাকতাম সূর্য ডোবার আগ পর্যন্ত, একলা, আলাভোলা বোনটা যখন তার হাতের অনামিকা থেকে আংটিটা খুলে ছুঁড়ে ফেলেছিল ঘাসের ওপর জাম গাছটার নিচে ভেউভেউ করে কাঁদতে কাঁদতে আর তারপর জীবনটাকে কিছুতেই গোছাতে পারছিল না, ভাইটার যখন আদর্শ বদলে যাচ্ছিল, সে তো এখানেই ছিল। আবার যখন ক্লাবে বৈশাখী উৎসব করতাম সোসাইটির সবাই মিলে কিংবা শহীদ দিবস স্বাধীনতা দিবসে মরমী শোকের গান দেশের গান গাইতাম, তখনো  সে তো ঠিক দেখতে চলে যেতো। একদিন ভোরবেলায় যখন বোন চিৎকার করে করে বাড়ি মাথায় তুলেছিল আমাদেরই এক কামুক আশ্রিত পশু আর তেরো বছরের রুবিয়াকে বাথরুমে দেখতে পেয়ে, যে রুবিয়া ছিল বয়সে আমারই সমান আর ওই কাজের মেয়েটাকে আমি একটুও পছন্দ করতাম না কারন তার ফর্সা রঙ নিয়ে খুব গর্ব ছিল আর সে ভাবতো আমার পুরোনো জামাগুলো ওকেই বেশি মানায়, সেদিনও মনার মা ছুটে এসেছিল। ছোট শাওন যে অবাক হয়ে ভাবতো আর বিকেলে খেলতে গেলে বলতো "তুমিই কি কাল গান গাইছিলে" কিংবা "তুমি কি এখন একটা গান করবে?" সেই ছোট শাওন যখন কিছু বছর পর পর্ণ আসক্ত হয়ে গেল আর কেমন করে যেন তাকাতো আর মাঝে মাঝে একলা ঘরে কলগার্লদের ডাকতো, পিপুটা যখন বাড়ি ছেড়ে পালালো আর ফিরে এলো আলখাল্লা আর পাগড়ি পরে বলছিল "এ জীবন মিথ‍্যে", "পৃথিবীটা কারাগার", "বাড়িটা একটা নরক", "মাটার মাথা খারাপ", "বোনটা কুলাঙ্গার", "বাবাটা একটা পিশাচ" আর তারপর একদিন আবারো পালিয়েছিল, পিপুর বাবাটাই তো বিকেলে সামনের রাস্তায় আধঘন্টা ধরে হাঁটতো আর রেগে রেগে আমাদের বাড়ির দিকে আর আমাদের দিকে তাকাতো, কে জানে বাবার সাথে ওর কি ঝামেলা ছিল, সূচীতো আমারই সমান ছিল পুতুলের মত দেখতে আর সবচেয়ে ভাল গান গাইতো, ওর ব্রেইন ক‍্যানসারের খবরটাতো মনার মাই প্রথম দিয়েছিল। আর অরণী আপু যে কবে এমন গম্ভীর হয়ে গিয়েছিল আমরা তো জানতামই না। প্রতিদিন ওর বাবা ওর হাত ধরে হেঁটে হেঁটে এসে সোনালু গাছগুলোর নিচে এসে বসতো। প্রতিদিন। আর একটা কথাও বলতোনা দুজনে। মনার মা খুব দূঃখ করতো ওর জন‍্য। সব খবর মনার মায়ের কাছে ছিল কোন বাড়িতে ম‍্যাডাম মার খায় কিন্তু কাউকে বুঝতে দেয়না, কার ছেলে নেশা করে, কাদের কাজের মেয়েটা ঠিক করেছে যে সে এখন থেকে নগ্নই থাকবে, কার বিয়েতে কতো যৌতুক, কাদের বাড়িতে ডাকাতরা গতরাতে পুরো দুই কোটি টাকা নগদ আর চল্লিশ ভরি সোনা নিয়ে গেলেও ওরা থানায় জিডি পর্যন্ত করছে না। সব সব সব খবর।


বাধ সেধেছিল মনার মা। সে কাজে আসা বন্ধ করে দিয়েছিল আর শারমিনকেও কাজে আসতে দিচ্ছিল না। আর সাফ সাফ জানিয়েছিল যে যুতসই কাজ এবং ঘর না পেলে তারা যাবেনা আর তা অন্তত দু'তিন মাস তো লাগবেই। আমাদের মনে তিক্ততা আরও খিঁচড়ে উঠেছিল এসব শুনে। কিন্তু এরমধ‍্যে এলো মহাবিপদ। বাবার অফিসে কি এক অনুসন্ধানী চিঠি এলো আর পুরো শহরটা যেন নড়ে উঠলো। অতদিনে কিছু শেয়ালেরা দল বেঁধে একটা কাজের মতো কাজ করতে পেরেছিল। অভিযোগ উঠলো আমার বাবা ও তার পদস্থনরা মিলে না কি পুরো ছয়শো কোটি টাকা আত্মসাত  করেছে। অনুসন্ধানকারীরা এলো, সাংবাদিকরা এলো, নেতারা এলো, আরও কতজন যে এলো, তারপর পত্রিকায় খবর বেরুলো, টিভিতে প্রতিবেদন দেখালো। আমার বাবাটা, ভয়ংকর লোভী কুৎসিত শকুনে ভরা আমলাতন্ত্রের মধ‍্যে যে সারাজীবন সৎ থেকেছে, আর সারাজীবন এক অন্তহীন অনন‍্য সংগ্রাম করে গেছে, সে পুরো ঘটনাটার আকস্মিকতায় দিশাহারা হয়ে পড়লো এবং অত‍্যন্ত সুকৌশলী ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে এক অভেদ‍্য পৈশাচিক চক্রব‍্যুহে আটকে পড়লো। ওর বায়ান্ন বছরের যুদ্ধটা যখন প্রায় শেষ করে আনছিল তখন ওরা যেন ওকে নিলডাউন করে বসিয়ে ওর সমস্ত নীতি আদর্শ আর পরিশ্রমকে পা দিয়ে পীষছিল আর ওর গায়ে মিথ‍্যার থুতু ছিটাচ্ছিল।


বাবা সহ‍্য করতে পারেন নি ওই অপমানটা, অফিসেই প্রথম হার্ট এ‍্যাটাকটা হয়েছিল। আমার বোনও অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। বাবা আইসিইউতে ছিল আর বোনটাকেও ভর্তি করা হয়েছিল ক্লিনিকে। আমি একা একা বাড়িতে, মাথাটা কাজ করছিল না একদম, কাঁন্নাও পাচ্ছিল না। বাড়িতে সাহায্য করতে শুধু রুমা আসতো, সে আবার আট মাসের পোয়াতি। মনার মা, মনার বাপ, জোনাকী, মনা কিংবা শারমিন কেউ একটা খবর নিতেও এলো না। আমি শুধু সারাদিন যেন এক অশরীরির মতো রান্না করতাম আর হাসপাতালে খাবার পাঠাতাম। দুদিন পর বাবার অবস্থার উন্নতি হলে ওকে রেগুলার বেডে দিয়েছিল আর একই দিনে বোনের ছেলেটা জন্মালো। অফিসের সহকর্মীরা এসে সাহস যোগাচ্ছিল আর বলছিল আস্থা রাখতে সত‍্যের ওপর। সবকিছুর মধ‍্যেও বোনের প্রিম‍্যাচুর্ড পুতুলের মত ছানাটা আর প্রকৃত সত‍্যের প্রতি বিশ্বাস আমাদের একটু হলেও সাহস যুগিয়েছিল। আমরা শুধু ভেবেছিলাম বাবা আর ছানাটাকে যে করে হোক বাঁচিয়ে রাখতে হবে। সেদিন সকালে হাসপাতাল থেকে ফিরে একটু ঘুমাতে পেরেছিলাম যেন কত কত বছর পর। দুপুর সাড়ে বারোটার দিকে আবার ছুটে ছুটে গিয়েছিলাম রান্নাঘরে কারন রাজ‍্যের কাজ বাকি। দরজাটা খুলে নিচে চোখ পড়তেই চমকে দেখি মনার মা ওর ঘরের দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে ওপরে বাড়িটার দিকে কিংবা হয়তো ঠিক আমার দিকেই তাকিয়ে ছিল। সেই খেটে খাওয়া শরীর ফুলের নকশার ছাপা শাড়ি আঁটসাঁট খোঁপা আর ওর চোখে যেন আগুন ঝরে পড়ছিল। প্রখর সূর্য উপেক্ষা করে ও যেন স্থির আগুনে চোখে দাবী করছিল ওর অধিকার। বাসস্থানের অধিকার, খাবারের অধিকার, বাঁচার অধিকার, সমাজের অর্থনীতির তলানিটুকুর অধিকার, মর্যাদার অধিকার, এমন কি লাম্পট‍্যেরও অধিকার। আমি কেমন ভয় পেয়ে উঠেছিলাম আর অস্ফুটে আর্তনাদ করে দ্রুত দরজা থেকে সরে এসে মুখে হাত চেপে মেঝেতে বসে পড়েছিলাম। চোখের সামনে যেন দেখছিলাম দিনে দিনে আমার নিজের ভেতরেই তৈরী হওয়া আঠারো বছরের দম্ভ আর অবজ্ঞার অট্টালিকাতে কি গভীর ফাটল ছড়িয়ে পড়ছে।

(ক্রমশ...)



English Translation of Bangla Folk Song: Fakir Lalon Shah; চিরদিন পুষলাম এক অচিন পাখি; Forever I Nurtured a Mysterious Bird

 Forever I Nurtured a Mysterious Bird Forever I nurtured a mysterious bird, which never discloses its identity. For this grief, my eyes ...