গাছেরা মন খারাপ করে, কখনো কখনো আত্মহত্যাও করে। আজকাল বড় ক্লান্ত লাগে, সারাদিন শুয়ে থাকতে ইচ্ছে করে, শুয়ে থাকিও। ওরা চায় আমি ওদের সকাল সন্ধ্যা গান শোনাই, কথা দিয়েছিলাম, রাখতে পারিনি। রাতে ঘুমের মধ্যে মাঝে মাঝে যেন নিঃশ্বাস আঁটকে যায়। শুনতে পাই গাছগুলো ঘুমের মধ্যেই কেঁদে উঠছে। ওরা ভয়ে ভয়ে থাকে আমাকে নিয়ে। ওরা খাওয়াদাওয়াও বন্ধ করে দেয় মাঝেমাঝে। আমি ওদের কতো বোঝাই, ঠিক যেমন বাবা বোঝাতো বহুদিন আগে। খুব রাগ হয় আজকাল। কিছু করার নেই। যদি ছেড়ে যেতে চায় ওরা, যদি কোনোদিন আমার না হতে চায়, তবে তাই হোক। হাতের বাইরে চলে যাবার আগে জসীমকে বলি কোন একটা উদ্যানে কিংবা অন্তত নিচে মাটিতে ওদের নতুন ঘর গড়ে দিতে। ওরা চলে যায় আমি ধীরে ধীরে একদিন ওদের চেহারা গন্ধ সব ভুলে যাই। গাছগুলো ভয়ে ভয়ে দিন কাটায়। বকাঝকা শুনলে ভীষণ অসহায় হয়ে পড়ে। আর এতো অভিমান করে। সেদিন টব বদলে দেবার সময় একটাকে দেখিয়ে বলেছিলাম "এটাকে অন্য একটা সাধারন টবে দেব, সুন্দর টবটার জন্য ভাল একটা দামী গাছ কিনে আনবো।" জসীমও সায় দিল "ঠিক বলছেন ম্যাডাম। তাইলে বালো অইবো।" এইসব শুনে এতো রাগ করলো গাছটা, এতো খাবার দিলাম, পানি দিলাম, এতো রকম করে বোঝালাম, তবু মরে গেল। চার বছর আমার কাছেই ছিল গাছটা, সবুজ, সতেজ, মাঝে মাঝে পানি দিতে ভুলে গেলেও ক্ষমা করে দিতো।
আজকাল বুকে ব্যাথা করে, ওদেরও বুকে ব্যাথা করে আমি জানি। শত ভাবলেও শুধু কষ্টের গানগুলোই মনে পড়ে আর কষ্টের গানগুলো শুনতেই ইচ্ছে করে। তেমন রোদ ওঠেনা অনেকদিন। টানা মেঘ আর কুয়াশায় ওরা বিমর্ষ হয়ে পড়তে থাকে আরও। ফুল ফুটিয়ে যায় কিন্তু তবু কি এক গাঢ় বিমর্ষতাই ছেয়ে থাকে বারান্দায়। একটা গোলাপ গাছে ক্যান্সার। বেশ কয়েকবার ছেটে দিয়েছিলাম কিন্তু লাভ হচ্ছেনা। কিছুদিন ভাল থাকে, নতুন পাতাও গজায় তারপর আবার ক্যান্সারটা ছড়িয়ে পড়তে থাকে। আজকাল আর ছাটিনা। প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে দেখি আর হিসেব করতে চেষ্টা করি পুরোপুরি মরে যেতে আর কতোদিন লাগতে পারে। বুঝি এতোদিনে আমিও নিষ্ঠুর হতে শিখে গেছি।
No comments:
Post a Comment