তোমার জন্য অপেক্ষা শেষ হয়
তুমি নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে পড়লে
নিজের জন্য অপেক্ষা শুরু হয় তখন
আর ঘুমোতে দেয়না একটুও
২০১৯ সালের মার্চ মাসে প্রাইম ব্যাংকের চাকরি ছেড়ে দিয়েছিলাম। তারপর থেকে আজ পর্যন্ত আমি এবং আমার কাছের মানুষরা যে প্রশ্নগুলোর সম্মুখীন হচ্ছি সেগুলো হলো "তোমার/ওর কি চাকরি চলে গিয়েছে?", "তোমার/ওর চাকরিটা কি ভালো ছিলোনা?", "চাকরিটা ভালো ছিলো তাহলে ছাড়লে কেন?", "এতো ভালো বেতনের চাকরি আর কি পাবে?", "তুমি কি চাকরি ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলে?", "ম্যানেজমেন্টের সাথে কি কোন সমস্যা হয়েছিল?", "চাকরিটা কি চুক্তিভিত্তিক ছিলো? চুক্তির মেয়াদ কি শেষ হয়ে গিয়েছিল?", "ব্যাংকে কি কাজ করতা যে ছেড়ে দিলা?" ইত্যাদি...ইত্যাদি...
আমি চট্টগ্রামের বাসিন্দা ছিলাম। বিবিএ পড়বার সময় ব্যাবসা শুরু করেছিলাম একটা। বাংলাদেশ ও ভারতের অনেক জায়গায় ঘুরে বাজারের বাস্তব জ্ঞান লাভের চেষ্টা করেছি তখন, দিনের পর দিন, রাতের পর রাত পরিশ্রম করেছিলাম। ব্যাবসাটা লাভজনকও ছিল কিন্তু পর্যাপ্ত পুঁজি, সমর্থনের অভাব ও পরিবারের ব্যাবসাবিরোধী মনোভাবের কারনে মনের মতো করে ব্যাবসাটা বেশিদিন এগিয়ে নিয়ে যেতে পারিনি। বিবিএ শেষ করে চাকরি খুঁজছিলাম চট্টগ্রামেই। কয়েকটা ইন্টারভিউ এ্যাটেন্ড করেছিলাম। পরীক্ষকরা কেউ কেউ বলেছিলেন "এই চাকরি তো তুমি করবেনা, কয়েকদিন পর এরচেয়ে ভালো চাকরি পাবে তারপর চলে যাবে।" কারো কারো প্রতিক্রিয়ায় মনে হয়েছিল ওই পদে কোন মেয়েকে ওনারা চান নি। একই সময়ে সমবয়সী অন্যদের মতো আমিও ব্যাংকের চাকরির পরীক্ষা দিচ্ছিলাম। ভালোই হচ্ছিল পরীক্ষাগুলো কিন্তু সফল হতে পারছিলাম না। সংসার সামলে পড়াশুনা চালিয়ে যেতে পারলেও ঢাকায় গিয়ে পরীক্ষাগুলো দেয়া ছিলো একেকটা উটকো ঝামেলার মতো। তাছাড়া উড়ো কথা শুনতাম যে চট্টগ্রামের প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্টিফিকেট ব্যাংকগুলো গ্রাহ্যই করেনা। সরকারি চাকরির চেষ্টা করছিলাম না কারন সরকারি অফিসগুলোর পরিবেশ আমার পছন্দ নয়। একদিন একজন আমাকে বলেছিল "প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির স্টুডেন্ট হয়ে তুমি ব্যাংকের ম্যানেজমেন্ট ট্রেইনির পরীক্ষা দিচ্ছ? শুধু শুধু সময় নষ্ট করছো। তারচেয়ে ব্যাংকের ক্যাশ ডিপার্টমেন্ট কিংবা টিএ এইসব পদের জন্য চেষ্টা করো।" আমি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তাম। অনিয়মিত ক্লাস ও সার্বিক পরিস্থিতি অপছন্দ হওয়ায় এক বছরের ক্রেডিট ট্রান্সফার করে প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি থেকে বিবিএ শেষ করেছিলাম। প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির পড়াশুনা যুগোপযোগী, নিয়মিত ও উচ্চমানসম্পন্ন ছিল, অন্তত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায়। যাই হোক মন্তব্যটা সেদিন আমার খুব লেগেছিল। আমি ঠিক করলাম ব্যাংকের চাকরির পরীক্ষা আমি আর দেবোই না বরং প্রশ্নহীন যোগ্যতা অর্জন করবো যেন ব্যাংক আমাকে ডেকে নিয়ে চাকরি দেয়। বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট এ মাস্টার ইন ব্যাংক ম্যানেজমেন্টে ভর্তি হলাম। ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হবার সাত দিনের মধ্যে আমার ব্যাচের প্রত্যেকের কয়েকটি লিডিং ব্যাংকে ইন্টারভিউ হলো এবং আমরা সবাইই ম্যানেজমেন্ট ট্রেইনি হিসেবে যোগদান করলাম। যাদের সেই তারিখ পর্যন্ত সিজিপিএ সবচেয়ে বেশি ছিল আমরা যোগ দিলাম প্রাইম ব্যাংকে কারন প্রাইম ব্যাংকের টপ ম্যানেজমেন্ট আমাদের অত্যন্ত সম্মান দিয়েছিল এবং তখনকার ইন্ডাস্ট্রি এমটি হায়ারিং রেটের চেয়ে বেশি বেতন ও সুযোগসুবিধা অফার করেছিল। ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারির ০৬ তারিখের দুপুর ২:০০ টায় আমরা ইন্টারভিউ দিতে গিয়েছিলাম, সেদিনই রাত ৯:০০ টায় আমরা সবাই চাকরির চুক্তিপত্রে সাক্ষর করেছিলাম। একবছর ট্রেইনিং এর পর করপোরেট ডিভিশানে আমার ও ব্যাচের মোট ছ'জনের স্থায়ী পোস্টিং হয়েছিল। প্রথমে মতিঝিলের পুরোনো ভবন তারপর গুলশানের সর্বাধুনিক দৃষ্টিনন্দন ভবনে কেটেছে ছয় বছরের কর্পোরেট লাইফ। শেষ পর্যন্ত কর্পোরেট কাস্টমার ডিল করে গেছি এ্যাসোসিয়েট রিলেশানশিপ ম্যানেজার হিসেবে। আমি ছিলাম অত্যন্ত সৌভাগ্যবানদের মধ্যে একজন যার কাজ করার সৌভাগ্য হয়েছিল ইন্ডাস্ট্রির সবচেয়ে যোগ্য ও পেশাদারিদের একাংশের সঙ্গে। সেই চুড়ান্ত প্রতিযোগিতাপূর্ণ জায়গাটিতে সহকর্মীদের সম্মান ও ভালোবাসা পেয়েছিলাম আমি। ওরা আমাকে বিশ্বাস করতে শিখিয়েছিল নিজের ওপর আরো বেশি করে। আমি শিখেছিলাম দিন শেষে ব্যাক্তিগত পছন্দ অপছন্দের উর্ধ্বে মূল্যায়িত হতে বাধ্য ব্যাক্তির পেশাদারিত্ব, সততা, যোগ্যতা ও পরিশ্রম। ওই ছয় বছরের করপোরেট লাইফ আমার কাছ থেকে নিয়েছে যতোটা দিয়েছে তারচেয়ে অনেক বেশি। সবচেয়ে বড় কথা আমি আমার কাজটাকে ভালোবাসতাম। রিয়েল লাইফে যখন এক্সপোর্ট ওরিয়েন্টেড কোন ক্লায়েন্টকে সার্ভিস সল্যুশান দিতে পারতাম, দেশের কোন উন্নয়ন কাজের এপ্রেইজাল করতে পারতাম, কিংবা যখন কোন ঋণখেলাপি প্রতিষ্ঠানকে সাহায্য করতে পারতাম ঋণ পরিশোধ করতে তখন মনে হতো আমি ও আমার টিম সত্যিই সমাজের জন্য কিছু একটা করতে পারছি।
না। চাকরিটা আমার চলে যায়নি বা আমি চাকরি ছাড়তে বাধ্য হইনি। কিংবা ম্যানেজমেন্টের সাথে আমার কোন ঝামেলাও হয়নি। বরং রেজিগনেশান লেটার সাবমিট করবার পর নিজের ডিভিশান তো বটেই অন্য ডিভিশানের সহকর্মীরাও আমাকে রেজিগনেশান ফিরিয়ে নিতে বলেছিল। কোন ক্লায়েন্ট বা বলেছিল তাদের প্রতিষ্ঠানে যোগ দিতে। কেউ বলেছিল "আমি ব্যাংক সুইচ করছি তুমিও চলো আমার সাথে"। এখন প্রশ্ন হলো, তবে কেন চাকরি ছেড়ে দিলাম?
জীবনটা আমার কাছে একটা একাগ্র যাত্রার মতো। উপভোগ্য ও দর্শনীয় একটা যাত্রা। তার আবার একাধিক বা বহু চলার পথ। প্রতিটা পথে চলবার জন্য, জানবার জন্য অন্য আর সব পথগুলোকে সাময়িকভাবে বা চিরকালের মতোই ছেড়ে এগিয়ে যেতে হয়। আবার কখনো প্রয়োজনে পিছিয়েও আসতে হয়। এই স্বপ্নময় জীবনে স্বপ্নগুলোকে পূরণ করতে কখনো খুব হিসেব করে ছক কষে চলতে হয় আবার কখনো স্বপ্নগ্রস্তের মতোও হেঁটে যেতে হয়। করপোরেট চাকরি করাটা আমার স্বপ্ন ছিল। অনেক মানুষের সাথে কাজ করবো ঝাঁ চকচকে পরিবেশে, মাস শেষে মোটা মাইনে পাবো, নিজের একটা পুঁজি হবে, নিজের আর প্রিয়জনের শখ ও প্রয়োজন মেটাবো। চাকরিতে যোগদান করাটা যেমন নিজের জীবনে নিজেরই একটা গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত ছিল, চাকরি ছেড়ে দেয়াটাও নিজেরই একটা গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। কে কি ভাবলো তা নিয়ে ভাবিনি কখনো, এখনও ভাবিনা। উদ্দেশ্য নয়, লক্ষ্য নয়, কিছু স্বপ্ন এমন হয়, যার জন্য সবকিছু ছাড়া যায়, যার জন্য খুব অল্প সম্বলে জীবন পার করা যায়, সন্তুষ্ট থাকা যায়। তেমনি কিছু স্বপ্ন লালন করি নিজের ভেতর। প্রতিদিন স্বপ্নগ্রস্তের মতো একটু একটু এগিয়ে চলি। হেরে গিয়ে মুখ থুবড়ে পড়ে যাই, আবার উঠে দাঁড়িয়ে এগোতে চেষ্টা করি। হেরে যাওয়া আমাকে ভাবায় না কারন পৃথিবীতে হেরে যাওয়া মানুষের সংখ্যাই বেশি, হার-জিত, সফলতা-অসফলতা দিয়ে যোগ্যতার বিচার করা যায়না সত্যিকার অর্থে। জীবনের কাছ থেকে কি পেয়েছে কেউ কিংবা কি পায়নি তা শুধু ব্যাক্তি মানুষই জানে। মানুষের জন্ম পেয়েছি এক। দোয়েলের ফড়িঙের নয়। তবু এই পৃথিবীরই এক যাদুময় পথ ধরে এই জীবন যাত্রা। কি আর করবো, জন্মেছি, তৈরী হয়েছি এক হিসেবে কাঁচা, স্বপ্নগ্রস্ত মানুষ হয়ে।
সে ফিরে গেছে
সে ফিরে গেছে
সে ফিরে গেছে
সুবোধ মেয়েটি পথ চেয়ে ছিলো সারা সন্ধ্যা
বেশ হয়েছে
ভালো হয়েছে
খাসা হয়েছে
গলির মুখে বিড়ির দোকানে সুখী ট্যারা সন্ধ্যা
এ্যাই যাবি?
এ্যাই খাবি?
এ্যাই চলনা
পরী আলোয় মিটমিটে আর বেপরোয়া সন্ধ্যা
বিড়িটা দে
আগুনটা দে
দে বাংলাটাও
চাঁদের আলোয় প্রাণ কাঁদানো সর্বহারা সন্ধ্যা
ওদের বলো গাইতে একটা জন্মোৎসবের গান
আর বলো মৃদঙ্গটা বাজাতে মিষ্টি করে ঠুকে ঠুকে
হাতে হাত ধরে যেন নাচে ওরা গোল হয়ে ঘুরে ঘুরে
সস্তা রঙবেরঙ চিকমিকে জর্জেটের নিচে
ওদের সরল পায়ের পাতাগুলোয় আনন্দ দেখতে দেখতে
আমি ভুলে যাবো
কেউ আমার নেই
কোন আশা নেই
কোথাও ঠাঁই নেই
ওদের পাতলা কোমরে রুক্ষতা
ওদের কন্ঠস্বর সবার মতো নয়
কাপড়ের বড় বড় ফুল আর শোলার গাঁজরায় সাজানো ওদের বেনুনি আর খোঁপা
রাস্তায় ওরা প্রতিবার আমার পথ আঁটকে বলতো
"সুন্দরী, টাকা দে"
এতো আহ্লাদ এতো অভিমান করতো যেন কতো চেনা
আমিও এক আহ্লাদি অভিমানি মেয়ে
ওদের বুঝতে দিইনি কখনো
কাউকেই কখনো বুঝতে দিইনি
আজ পান্থপথের মোড়ে ওদের দেখলাম বহুদিন পর
কোমর দুলিয়ে ওরা হাঁটছিল ট্রাফিক সিগনালে
"ও সুন্দরী আপু, কিছু টাকা দে, দে না..."
কি যে হলো হঠাৎ
ওদের ডেকে আনলাম এই উঠোনে
ওরা নাচছে মৃদঙ্গের তালে, গাইছে জন্মোৎসবের গান
এতো রঙ এতো সুর এতো আনন্দের করুন মহড়া
কোথাও দেখিনি আর
কিছু আর আশা করিনা কারো কাছে
নিজের কাছেও না
বেশি কিছু তো না ই
সামান্য কিছুও না
প্রিয়তম পাহাড় প্রিয়তম সমুদ্র
দুই চোখে ধরা দেয়
আর দিতেই থাকে
ঘন সবুজ জংলি গন্ধ
কিংবা নোনা স্বাদ
চাইলেই নিতে পারি যখন তখন
আর কি চাই?
যারা ছেড়ে গেছে
ওদের যাবারই ছিলো
আসলে ওরা ছিলোই না কোনদিন
ছেড়ে যাওয়াটাই স্বাভাবিক
না ফেরাটাই স্বাভাবিক
অদৃশ্য সমাধিগ্রস্ত শহরে
আমিও সমাধিস্ত একজন অচেনা
নিজেই নিজেকে রেশম আর সুরায় চুবিয়ে রেখেছি
অলৌকিক ক্ষমতা বলে নয়
এটাই চুড়ান্ত লৌকিক জ্ঞান
সময়ের সাথে না চলতে পারলেও
সময় সাথে সাথে পা মেলায়
এই মুখে লাবন্য নয়
আসলে পাপহীণ দৃষ্টি ধরে রাখি
তোমার বুকে যেন স্পন্দন খুঁজে পাইনা হঠাৎ
তুমি আকুল হয়ে ভালোবাসা খোঁজো
এই পাপহীণতা প্রশ্নহীণতা
তোমার বুকে বেঁধে এমন
আমারো ভীষণ কষ্ট হয়
কিছু আর চাওয়ার নেই তোমার কাছে
তাই অসহায় বোধ করি
কথা খুঁজে না পেয়ে আমরা শুধু বলি
"কেমন আছো?"
জীবন ছেড়ে যায়না কোনদিন
জীবনকে ছেড়ে যাই আমরা মাঝে মাঝে
তুমি ডুকরে ডুকরে কাঁদো
কিন্তু বুঝতে পারোনা কেমন ঠিক ব্যাথাটা
সূর্যাস্তের বর্ণিল বিমর্ষ ছবিটা
আমি গেঁথে রেখেছি মগজে চিরকালের মতো
আবেগগুলোর চিরকালের মতোই বন্দীদশা
তুমি ডুকরে ডুকরে কাঁদো
দোষ দাও সময়কে
যদিও ঠিক জানো
অফুরন্ত সময় কোন কাজে আসেনা
কিছু অপরাধের প্রায়শ্চিত্ত সম্ভব নয়
তোমার প্রয়োজন ছিলো
বিপরীত স্পর্শ
গভীর দীর্ঘ্য চুম্বন
উদার অকুন্ঠিত শরীর
স্নেহ মমতা ভালোবাসা
মনোযোগ সময় সহানুভুতি
সততা সমর্থন সহযোগিতা
বিনিময় হয়না এইসব কিছুরই
কিন্তু এতো অপমান করলে
আর এতো ঘৃণাও করলে
আমি ছোটলোকের মতো ভাবতে থাকলাম
বিনিময়ে কি পেলাম?
1. A cozy hoodie
2. Nailpolish remover
3. Body butter
4. A new guitar
5. One set nylon strings
6. Milk bread
7. Anti hairfall pack
8. A pair of black shoes
9. Riped red chilli
10. Shaldon Cooper's roommate agreement
For granted I am
For granted forever
If I take away my heart
If I give it to some stranger
There's no difference but
My price goes a bit cheaper
What's the difference anyway
Cheap cheaper cheapest
Whatever my answer
I m to fail the test
I can't feel my glory
I lost a feeling my dear
Reputation isn't my worry
Nothing gives me a fear
If the price go down
I'll be a bit cheaper
For granted I am
For granted forever
১৪ ডিসেম্বর এলে একলা একলা চুপ করে বসে থাকতেই ইচ্ছে করে সারাদিন। এতো অসহায় আর অন্য কোনদিন লাগেনা। সেই কোন ছোটবেলা থেকে বাবাকে দুঃখ করে বলতে শুনেছি "ওরা যদি থাকতো সোনার বাংলাদেশ সোনার বাংলাদেশই হতো"। ছোটবেলায় ভালো বুঝতাম না। বুদ্ধি হবার পর থেকে বিষয়টা পরিষ্কার হতে শুরু করে। বুঝি সবকিছু নষ্টদের অধিকারে গেছে আমার জন্মেরও বহু আগে। নিমকহারামরা দখল করে নিয়েছে স্বাধীন বাংলাদেশ কতো সহজে। আর আজো চারিদিকে নিমকহারামদের বাচ্চারাই দাপিয়ে বেড়ায়। ওদের হাতেই টাকা, আর টাকা মানেই ক্ষমতা। ওরাই যত দূর প্রয়োজন নিচে নামতে পারে, ভোল পাল্টাতে পারে, নোংরামি করতে পারে, ষড়যন্ত্র করতে পারে, হিংস্রো হতে পারে। ওদের দৌরাত্ম্যে, ঔদ্ধত্বে, হিংস্রোতায়, নীচতায় দেশের সর্বোচ্চ আসনে পৌঁছেও কেউ অসহায় হতে পারে, একা হতে পারে। এটাই ভবিতব্য ছিল। যাদের আদর্শ গড়ে দেবার কথা ছিল তাদের শেষ করে দিয়ে পিশাচের দল আজও সফল। আমাদের অর্থনীতির বিকাশ হলো, প্রযুক্তিগত বিকাশ হলো, জীবনযাপন উন্নত হলো, কিন্তু আদর্শের প্রশ্নে আমরা অকৃতকার্যই রয়ে গেলাম। মন খারাপ করে বসে থাকি সারাদিন। ভাবি, সবকিছু নষ্টদের অধিকারেই থেকে যাবে চিরকাল? পঞ্চাশ বছর কেটে গেল। একটা জাতির মেরুদন্ড ফিরে পেতে আরো কতো বছর লাগবে?
জোৎস্না আপা পুকুর ঘাটে বাসন মাজছিল। ওর মুখে ওই উজ্জল রোদেও আঁধার ছিল। জোৎস্না আপার ভাইটা গুন্ডা তৈরী হচ্ছিল। ওর চোখে প্রতিশোধের আগুন ছিল। জোৎস্না আপার মা একটাও কথা বলছিল না। ওনার সব সম্পত্তি আর সব কথা কেড়ে নিয়েছিল ষড়যন্ত্র। জোৎস্না আপার বাবা কলেজের শিক্ষক ও রাজনীতিবিদ ছিলেন। ওনার একজন সৎ ও তুখোড় জনপ্রতিনিধি হবার কথা ছিল। স্বাধীন বাংলাদেশের সংসদে।
জোৎস্না আপার বাবার লাশটা যখন পড়ে ছিল খালে, জোৎস্না আপার বয়স ছিল দুই আর জোৎস্না আপার ভাই ছিল জোৎস্না আপার মায়ের পেটের ভেতর। তখন ডিসেম্বর, ১৯৭১।
জোৎস্না আপার বাবাকে যারা হত্যা করেছে, জোৎস্না আপাকে যারা কষ্ট দিয়েছে, জোৎস্না আপার ভাইকে যারা কষ্ট দিয়েছে, জোৎস্না আপার মাকে যারা কষ্ট দিয়েছে, ওদের সবাইকে আমি সমানভাবে ঘৃণা করি। ওরা যেখানেই থাকুক, সবাই যেন সমান শাস্তি পায়। ওরা আমার কেউ না। ওরা বাংলাদেশের কেউ না। ওরা মানুষদের কেউ না।
মেয়েটা রাস্তার ধার দিয়ে এলোমেলো হেঁটে যাচ্ছিলো
ওর একপায়ে একটা চটি অন্য পায়ে চটি নেই
রাস্তার ধারের অষুধের দোকানিরা ওর কথা শুনছিল না
কেউ বেচতে চাইছিলনা না একটাও ঘুমের ওষুধ
আমি দেখেছিলাম ওকে চোখ খুলেই
একটা ছবির মতোই
সেদিন ও ভেবেছিল বুঝি হেরেই গেছে
আর হেরে গিয়েছিল তারচেয়েও বেশি এই শহরটা
শহরটা হেরেই আছে আজো
আর হেরে আছে একটা অসুস্থ নাটকের প্লটের কাছে
ঈশ্বর পালিয়েছে এ লোকালয় ছেড়ে বহু আগে
কেউ কাউকে বোঝেনা
কেউ পড়েনা কারো চোখ
এই নিষ্ঠুর দাবানলের শহরে কে কাকে পাপী বলবে?
কে শোনাবে কাকে সান্তনা বাণী?
পুড়ে খাক হয়ে শেষ হতে হতেও শেষ হয়না কিছু
এখানে সবাই সোনালী বাজ
সবাই অভিশপ্ত
আমার শরীরে আগুন
ঝুলে পড়ছে খসে পড়ছে গলে যাচ্ছে
চামড়া, মাংস, অন্ত্র
চোখদুটো নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে যেতে দেখে নেয়
মেয়েটার পুড়তে পুড়তে এলোমেলো হেঁটে যাওয়া
জানিনা প্রতিটা মানুষের এমনই মনে হয় কি না? মনে হয় কিনা এ কোথায় এসে পড়লাম? এ কেমন প্রতিবেশ? এ কেমন সময়? শুধু ছোট, বড়, অগভীর, গভীর ক্ষত ছাড়া আর কিছুই যেন পাবার নেই জীবনের কাছ থেকে। রোমাঞ্চকর, চটুল কিংবা মশলাদার আড্ডা থেকে চিরকালই আনমনে হাঁটতে হাঁটতে চলে গেছি গাছেদের কিংবা আগাছাদের জঙ্গলে কিংবা এক কোনে চেনা বা অচেনা ধুনেও একমনে নেচে গেছি কখনো। গাছেদের, পাখিদের, প্রজাপতিদের, পোকাদের বর্ণিল জীবনের সরলতা নেই মানুষের। মানুষ সঙ্গীতের মূর্ছনা হতে পারেনা, শব্দের তরঙ্গ হতে পারেনা, নাচের ছন্দ হতে পারেনা। চিরকাল একলা নিভৃতচারি হয়ে থেকেছি। মানুষের সঙ্গ ভাল লাগে। তাও। একটা ঘোরের মধ্যে যেন দেখে যাই এই প্রতিবেশ, এই সময়। ব্যাক্তি মানুষদের নিয়ে চর্চা করতে ভালো লাগেনা যদিও ব্যাক্তি মানুষই দেখায় সমাজের প্রতিরুপ। মানুষের সমাজ, পাখিদের নয়, ফড়িং কিংবা ফুলেদের তো নয়। ভেবেছিলাম এক অপারগ দর্শক হয়েই জীবন কাটিয়ে দেবো। সব মিথ্যে, সব প্রলোভন, সব কপটতা, সব ষড়যন্ত্রের ক্ষরণ দেখে দেখেই জীবন পার করে যাবো শুধু সহমর্মি হয়ে। কিন্তু মাঝে মাঝে সমস্ত অস্তিত্ব বিদ্রোহ করে বসে। বলে আর না। ছিঁড়ে দিতে ইচ্ছে করে সমস্ত মুখোশ, ইচ্ছে করে উন্মোচিত করে দিই সব নীচতাময় সত্য। হঠাৎ কখোনো বা করেও ফেলি। কিন্তু তারপরই মনে হয় কেন করলাম এমন? কি দরকার ছিল? অবাক লাগে নিজেরই দীণতা দেখে। দানবদের সাথে যুদ্ধ করতে করতে শেষে কি নিজেও দানব হয়ে গেলাম? ভাবি যাদের উপেক্ষা করেছি, ক্ষমা করেছি দশ বছর, বিশ বছর, কিংবা পঁচিশ বছর কিংবা আরো বেশি সময় ধরে প্রতিবার, বারবার, আজ কেন পারছিনা, চাইছিনা ক্ষমা করতে একটুও। থাকুকনা ওরা ওদের মতো যে যেখানে আছে। কেউ না জানুক ওরা তো জানে কতো ভার বয়ে যায় ওরা প্রতিদিন প্রতিক্ষণ... মুখোশের ভার, মিথ্যের ভার, নীচতার ভার, অপরাধের ভার, লুকোনো সত্যের ভার...
এবং অবশেষে আমি দ্বিতীয় বারের মতো প্রেমে পড়লাম। অনুভুতিটা প্রথমবারের মতোই প্রবল ছিল। কিন্তু প্রথমবার যেমন মস্তিষ্কে ভর করেছিল কোন এক অচেনা বীরপুরুষ এবারে নিজেকে সম্পূর্ণ অবাক করে দিয়ে ভর করলো এক অচেনা কাপুরুষ। প্রথমবার যেমন আমার চেতনা নিজেকে উজাড় করে নিবেদন করতে থরথর করে কাঁপছিল এবারে সেই আমারি চেতনা নিজেকে লুকিয়ে রাখবার জন্য থরথর করে কাঁপতে থাকলো।
সত্যিকার অর্থে প্রেমে পড়া বিষয়টি বুঝতে বা নিজের মধ্যে অনুভব করতে সমবয়সী বন্ধুদের চাইতে হয়তো কিছু দেরিই হয়েছিল আমার। তাও অবশ্য আমি বুঝতে পারতাম না, কিন্তু যেদিন আমার ভীষণই বাস্তবজ্ঞানসম্পন্ন এক বন্ধু, যে ছিল বয়সে অনেকটাই বড় এবং অত্যন্ত জ্ঞানী এবং তৎকালীন সকল সৎকর্ম ও অপকর্মেরও সঙ্গী একরকম, তারচেয়েও বড় কথা যার প্রতিটি কথা আমি গুরুত্বের সাথে গ্রহন করতাম, আমার কাছে জানতে চাইলো আমি কাউকে ভালোবাসি কিনা? আমি উত্তর দিলাম "না তো।"
: সে কি! তুই কাউকে পছন্দ করিস না?
: না তো।
: কি বলিস! তুই কখনো কারো প্রেমে পড়িস নাই?
: নাহ!
: তোকে কেউ প্রেম নিবেদন করে নাই?
: করেছে। দুজন।
: তো তখন তুই কি করলি?
: জানিনা কেন যেন ফানি লাগছিল ব্যাপারটা আর খুব হাসি পাচ্ছিল।
: কি! কি বলস এসব?
: না, হাসি পাওয়াটা আসলে ঠিক উচিত হয় নাই। আরেহ... এভাবে রেগে যাচ্ছো কেন? বল্লাম তো হাসাটা একদম উচিত হয় নাই।
: রেগে আর কি হবে? আর রাগ করারও কিছু নাই। কিন্তু ব্যাপারটা তো চিন্তার বিষয়।
: এ্যাঁ!!!
: তুই শিওর যে তুই কাউকে ভালোবাসিস না? বা তুই কারো প্রেমে পড়িস নাই, শিওর তুই?
: হ্যাঁ... মানে তাইতো মনে হয়... ধূৎ... তুমি তো দেখি আমাকে কনফিজড করে দিচ্ছো! ... আরে নাহ। কনফিউজড কেন হবো? আসলেইতো এখোনো প্রেমে পড়ি নাই কারো।
: তোর বয়স কতো?
: সতেরো।
: এই শতাব্দীতে এই বয়সে তুই কারো প্রেমে কখনো পড়িস নাই এই কথা আমাকে বিশ্বাস করতে বলিস?
: আরেহ... আমি কি মিথ্যা বলতেসি? আশ্চর্য তো... যাও বিশ্বাস না করলে নাই।
: প্রেমে পড়িস নাই কখনো কারো???
: না।
: কেন???
: আরেহ চিৎকার করতেসো কেন? কাউকে ভালো না লাগলে আমি কি করবো?
: কাউকে ভালো লাগেনা মানে???
: এখনো লাগে নাই আর কি। তো তাতে হইসেটা কি???
: হবে আর কি? চিন্তা। চিন্তা হচ্ছে। বুঝলি?
: ধ্যুৎ! প্রসঙ্গটা বাদ দাও তো। কি শুরু করলা খামাখা খামাখা।
: আচ্ছা একটা কথা বলতো, তোর কি মেয়েদেরকে ভালো লাগে?
: হুম। লাগবেনা কেন? আরে দাঁড়াও দাঁড়াও... ভালো লাগা বলতে তুমি কি মিন করতেসো বলোতো?
: বলতে চাইছি... তুই কি মেয়েদের প্রেমে পড়িস?
: ...আই কান্ট বিলিভ দিস!!! তোমার এখন আমাকে লেসবিয়ান মনে হইতেসে??? মাই গড!!!
: না না... আমি শুধু জানতে চাইলাম আর কি... তুই আবার লেসবিয়ান কিনা।
: আনবিলিভেবল!!! না। আমি লেসবিয়ান না।
: আরে ক্ষেপতেসস কেন? লেসবিয়ান হইলেও প্রবলেম কি?
: নাহ। প্রবলেম নাই। কিন্তু আমি লেসবিয়ান না। ... কি শুরু করলা এগুলা। ধুৎ আমি বাসায় যাইগা। ধরো নাও এই চিপসের প্যাকেট। আজকে কাউয়াগোরে তুমি একলা একলাই চিপস খাওয়াও। আমি যাইগা।
: আরে দাঁড়া দাঁড়া। যাইসনা। আরে পাগল। বস এখানে। মাথাটা ঠান্ডা কর। এতো মাথা গরম করলে চলবে? মাথা ঠান্ডা কর। মাথা ঠান্ডা না করলে সমস্যার সমাধান হবে কি করে?
: সমস্যা মানে? কিসের সমস্যা।
: এই যে তোর কাউরে ভাল্লাগেনা। এটা সমস্যা না?
: ধুর। কি বলো এগুলা। বাল! আরে বুঝো আগে। যারা প্রেম করতেসে ওরাই আসলে সমস্যায় আছে কিন্তু। ফ্রেন্ডগুলারে তো দেখতেসি কয়দিন পরপরই ফ্যাচফ্যাচ কইরা কান্দে।
: তুই এখন আমারে বুঝাবি?
: না বুঝলে বুঝাবো না? আজব!
: হুম বুঝলাম।
: দ্যাখো আমিও যে কখনো ক্রাশ খাই নাই কোন পোলার ওপর তা কিন্তু ঠিক না। খাইসি। কিন্তু একটু কথাবার্তা বলার পর বা ধরো দুইদিন অবজার্ব করার পর দেখলাম একেকটা বড়োই বিরক্তিকর টাইপ পোলা। ওই যে বলেনা ত্যানা প্যাচাইন্না... কেমন জানি ত্যানা প্যাচাইন্না টাইপের... কাজকামে, চিন্তা ভাবনায় বা ধরো সেন্স ওব হিউমারের বড়ই কাহিল অবস্থা। আর বুঝছো তো পুতুপুতু টাইপের পোলা বা ধরো ঠিক তাও না... কি যে কই... ধরো চোখেমুখে যদি একটা বোল্ডনেস না থাকে বা ধরো অনেস্টি না থাকে বা ধরো তাও না ধরো... ধুর বাল। এত্তো কথা তোমারে ক্যান বলতেসি। ধুত। এত্তো কথা কওনের দরকার নাই। কাউরে এখোনো পাই নাই যার সাথে প্রেম করুম। এই হইলো মোদ্দা কথা।
: হুম। ভালোই তো পোলাগো অবজার্ভ করোস তার মানে।
: অবজার্ভ তো আমি সবাইরেই করি। করতে করতে অভ্যাস হইয়া গেসে। ছোডবেলা থেইকা এতো লাত্থি খাইসি। এখন আমার ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স সেইরকম স্ট্রং। অবশ্য কাউরে বুঝতে দিই না।
: হুম। সেটা অবশ্য আসলেই বোঝা যায়না। তা তুইতো আমারেও অবজার্ভ করস তার মানে?
: তা তো করিই। যদিও করা না করা সমান।
: করা না করা সমান মানে?
: যা অবজার্ভ করার তো আগেই করসি। নতুন করে আর কি করবো। তুমি হইলা আমার বেস্ট ফ্রেন্ড ফরএভার। অবজার্ভ করলেও না করলেও।
: ওহ। ভালো। বেশ ভালো। তবে তোকেও অবজার্ভ করতে করতে আমারও একটা জিনিস মনে হচ্ছে...
: থামলা কেন? বলো কি মনে হচ্ছে?
: মনে হচ্ছে তুই আসলে কোনদিনই প্রেমে পড়বি না। তুই আসলে একদিন প্রেমে আছাড় খাবি। যেদিন সময় আসবে এমন আছাড় খাবি বুঝলি তো? কোমরের হাড় গোড় সব ভাঙবে তোর সেদিন।
আমি এক মুহুর্ত তাকিয়ে ছিলাম শুনে কিন্তু তারপরই এমন দম ফাটানো হাসি পেলো হাসতে হাসতে বললাম
: তোমার এক্সের তো লেইঞ্জাটাও বাগে পাওনা। আমারে হাতের কাছে পাইয়া অভিসম্পাত দিতেসো?
আবারো হাসতে হাসতে আমি চিপসের জাম্বো প্যাকেটটা হাতে নিয়ে উঠে চিপস ছড়াতে ছড়াতে সামনের দিকে হাঁটা দিলাম। পেছনে আমার বেস্ট ফ্রেন্ড বলে যেতে লাগলো " বেশি হাসিস না বুঝলি... যেদিন সত্যি সত্যি আছাড়টা খাবি বুঝবি..." আরো কতো কি বলছিলো কিন্তু আমি নিজের হাসির শব্দেই আর শুনতে পাচ্ছিলামনা। আমার চারপাশে তখন ওপাড়ার কাকগুলো আর তিনটা নেড়ি ভিড় করে আছে।
বিকেলে তো হেসেছিলাম খুব কিন্তু আমি সত্যি সত্যিই একটু চিন্তায় পড়ে গেলাম। সিনেমায় কেউ প্রেমে পড়লে মিউজিক বেজে ওঠে, জোরে বাতাস হয়, বৃষ্টি নামে। বন্ধুরা প্রেমে পড়লে ওরা খুশিতে ঝলমল করতে থাকে, অদৃশ্য ডানায় ভর করে ফুরফুরে মনে উড়ে উড়ে ঘুরে ঘুরে বেড়ায়।আর আমি যখন প্রেমে পড়বো তখন আসলে আমি প্রেমে আছাড় খাবো আর আমার কোমরের হাড়গোড় সব ভেঙ্গে যাবে। এ কেমন কথা? এ কেমন বিচার? আর এ কেমন বেস্ট ফ্রেন্ড আমার? এ কেমন ভবিষ্যৎবাণী?
সে যাই হোক, একদিন দমকা হাওয়ার মতো একটা প্রেম এলো জীবনে। বেপরোয়া উদার ঐশ্বর্যময় বেহিসেবী এক প্রেম। বেস্টফ্রেন্ডের ভবিষ্যৎবাণী সত্যি হয়নি বলে খুব আনন্দেই দিন কাটছিল। কিন্তু তারপর এক মুহুর্তেই একদিন বুঝতে পারলাম আমি সত্যিই বেশ জোরেশোরেই একটা প্রেমের আছাড় খেয়েছি। বাস্তবিকভাবে কোমরের হাড়গোড় না ভাঙলেও মাথায় তো ভীষণই চোট লেগেছে আর আমি সেই আঘাতে সংজ্ঞা হারিয়ে একেবারে কোমায় চলে গেলাম। পৃথিবীতে সবকিছুই স্বাভাবিক নিয়মে চলছিল কিন্তু আমি নিজের অস্তিত্ব পরিচয় হারিয়ে একটা অর্থহীন যুক্তিহীন আবর্তের কেন্দ্রে স্থির হয়ে রইলাম। যখন জ্ঞান ফিরলো দেখি পৃথিবী বদলে গেছে অনেক। ভাবলাম যা হবার তা হয়েছে, নতুন করে সবকিছু শুরু করা যাক। বেস্ট ফ্রেন্ড দেখতে এলো আমাকে। জিজ্ঞেস করলো "কি রে কেমন? কি বুঝলি?" আমি বললাম "ঠিকই বলেছিলা তুমি। এ এক ভয়াবহ আছাড় খাইলাম। এ কবছর কোমাতেও কাটিয়ে এলাম। তা তুমি কেমন ছিলা এতোদিন?"
: তা বেশ ছিলাম। একটা ব্যাবসা শুরু করেছি বুঝলি। ভাবলাম এই যে আমার এতো জ্ঞান এতো বুদ্ধি তা এবারে কাজেকামে লাগানো যাক।
: ওহ। এটা বেশ ভালো খবর।
: ভাল না হইলেও ভালো। পেট চালাইতে পারতেসি এতেই আমি খুশি। তোর কথা বল। এবার কি করবি?
: জানিনা। তবে প্রেমে যে আর পড়বো না তা ঠিক করে নিয়েছি।
: ঠিক করে নিলি? এভাবে ঠিক করা যায়?
: হ্যাঁ। নিলাম তো ঠিক করে।
: নাহ। আমার তা মনে হয় না। মনে হচ্ছে আবার প্রেমে পড়বি তুই। পড়বি না, আছাড় খাবি। একটু অন্যরকম আছাড়। হাড়গোড় ভাঙবোনা কিন্তু যে জায়গাটায় আছাড়টা খাবি সেই জায়গাটা বিশেষ সুবিধার হইবো না।
: তুমি আমার বেস্ট ফ্রেন্ড না ওয়ার্স্ট এনিমি বলোতো? এইসব তোমার ভবিষ্যৎবাণী না অভিশাপ?
: সে তুই যা কিছু একটা ভাইবা নে বা ডিকশেনারিও দেইখা নে। আমার যেটা মনে হইতেসে সেইটাই বললাম।
কোমা থেকে ফিরে আসার আনন্দ আমার ফিকে হয়ে গেল। খোশ মেজাজের ভাবটা মুখে ধরে রাখলাম ঠিকই কিন্তু বুকের ভেতরটা মুষড়ে রইলো। কিছু নতুন বন্ধু জোটালাম, নতুন চুলের ছাঁট দিলাম, নতুন নতুন কাজে ব্যস্ত হলাম। এমনি দিন কাটতে কাটতে মনের ভয়টা যখন ঝাপসা হয়ে এলো তখন একদিন আবার কি করে যেন প্রেমে পড়ে গেলাম। ভয়ে আতঙ্কে একটা গর্তে ঢুকে পড়লাম আমি ঠিকই কিন্তু চেপে রাখতে পারলাম না খবরটা। ভবিষ্যৎবাণী ঠিক ফলে গেল। এতো নোংরা ভর্তি পেছল একটা জায়গায় আছাড় খেলাম আমার সারা গায়ে নোংরা লেগে গেল। উঠে কোনরকমে দাঁড়িয়ে বাড়ির পথ খুঁজতে লাগলাম। লোকে এসে সাহায্য করা বা বাড়ির পথ দেখিয়ে দেয়া তো দূর বরং আমার দিকে আঙুল তাক করে হো হো করে হাসতে লাগলো। চলতে চলতে বাড়ির পথ আর খুঁজেই পেলাম না। শেষে একটা আশ্রমে এসে পড়লাম। আশ্রমের লোকেদের দয়ার শরীর, ওরা আমাকে গোসল করার পানি দিল, নতুন পোষাক দিল, খেতে দিল, একটা নতুন কাজও দিল। আশ্রমের নতুন জীবনে দিন কাটাতে কাটাতে যখন মনটা হালকা হয়ে এলো তখন দেখি একদিন আশ্রমের সদর দরজার পাশে দাঁড়িয়ে আমাকে দেখতে দেখতে দাঁত ক্যালাচ্ছে আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। আমি হাতের কাজ রেখে তাড়াতাড়ি হেঁটে ওর কাছে গেলাম "আরে তুমি? এখানে কি করে এলে? কেমন আছো?"
: ভালো আছি। এদিকটায় বেড়াতে এসেছিলাম। আশ্রমটা বেশ সুন্দর তাই উঁকি দিতেই দেখি তুই ঘুঁটে তুলছিস। তা বেশ আছিস মনে হয় এখানে?
: তা আছি। তোমাকে এতোদিন পর দেখে খুব ভালো লাগছে। আসো ভিতরে। এখানে খুব ভালো সিঙ্গাড়া আর মালাই চা বানায়। চলো তোমাকে খাওয়াবো।
হাতে চা সিঙ্গাড়া নিয়ে আমরা একটা জারুল গাছের নিচে বসলাম দুজন মুখোমুখি। আমি জিজ্ঞেস করলাম
: তা কি করতেসো তুমি এখন? ওহ, তুমি না ব্যাবসা শুরু করসিলা? তার কি খবর?
: ওইটা চলতেছে ওইটার মতোই। আমি বাইর হইয়া পড়সি শান্তির খোঁজে। আর সত্যি বলতে কি তোকেও খুঁজতেসি অনেকদিন ধরে।
: আমাকে? কেন?
: বাহ বাহ! তুইই তো বলসিলি বেস্ট ফ্রেন্ড আমরা! তো খুঁজবো না? নালাতে তো আছাড় খাইয়া পড়সিলি। জানার পর যাকেই জিজ্ঞেস করি শালারা শুধু হাসতে হাসতেই মইরা যায়। কয়েকজন জানাইলো সেইসময় হাসতে হাসতে ওরা এমনই সর্ষেফুল দেখতেসিলো যে খেয়ালই করেনাই ঠিক কোনদিকে গেসিলি তুই। বুঝ অবস্থাটা।
: হুম। বুঝতে পারসি। অনেক নোংরা লেগে গেসিল গায়ে। ধুয়ে নিসি পুরো একেবারে ভেতরে ঢুইকা পড়বার আগে। বাবা যা দূর্গন্ধ ছিল! ভাবসিলাম হয়তো এবার সারা শরীরে, মগজে আর মনেও পচন ধরে যাবে। নাহ! কিন্তু দেখলাম সময় থাকতে ধুয়ে নিলেই হইলো।
: বাহ বেশ! তা কি ঠিক করলি এখন? এই আশ্রমেই থাকবি?
: না হয়তো। এই ঘুঁটে বানানোর কাজটা খারাপ না বুঝলা। কিন্তু এবার আমিও বেরিয়ে পড়বো। নতুন নতুন অনেকগুলো গান বাঁধসি। ভাবতেসি নানান জায়গায় ঘুরে ঘুরে গানগুলা গাইবো।
: বাহ! এটা দারুন ভাবছিস। সত্যি তোকে নিয়ে গর্বই হচ্ছে আমার।
: হুম। ভাবতেসি তো বহুদিন ধরেই। ভাবতে ভাবতে জানো তো কেমন ভাবুকই হয়ে গেসি। কিসব ভবিষ্যৎবাণী করলা, সেসব ফইলাও গেল। তুমি শালা পুরাই একটা হারামি। এতো সাবধান হওয়ার পরও ভবিতব্য এড়ানো গেলো না। আর আমি আস্তে আস্তে একটা অন্য মানুষ হয়ে গেলাম।
: হুম। তাইতো দেখতে পাইতেসি। তা যা হইসে ভালোই হইসে বল?
: তা জানিনা। তবে আজকে নিজেরে নিয়া আমি একটা ভবিষ্যৎবাণী করবো। তোমারগুলোর মতোন ফলবো কিনা জানিনা। শুনবা তুমি?
: ফলবোনা কেন? ঠিক ফলবো। বল শুনি কি তোর ভবিষ্যৎবাণী?
: ভবিষ্যৎবাণী হইলো আমি আর প্রেমে পড়বোও না, আছাড়ও খাবো না। কেউ যদি আমার প্রেমে পড়ে তবে সে প্রেমে পড়বোনা বরং ভীষণ জোরে আছাড় খাইবো। আর সেইটা হইবো এক্কেবারেই নতুন কিসিমের আছাড়!
ওখানে একশোটা প্রদীপ জ্বালিয়েছিল কেউ
ওই যে নদীর ধারে যে কুটির ছিল
তার সামনে কেউ বুনেছিল নরম সবুজ ঘাস
গন্ধরাজ গাছটা ভরে উঠেছিল কলিতে
কখন যে গোলাপ গাছগুলো তরতর করে বেড়েছিল কেউ টেরই পায়নি
ওই প্রদীপের আলো
গন্ধরাজ গোলাপের সুগন্ধ
আর ঘাসের নম্রতার আবেশ নিয়ে
একটা শহুরে গান বেঁধে চলেছি আমি
কেউ যদি নাও শোনে
তবুও
ঈশ্বরহীন শহরে পাপ পূণ্যের বিচারক নেই কেউ
এখানে মানুষই মানুষের যমরাজ
নিষ্ঠুর মানুষগুলো মুখোমুখি
যেমন আয়নায় মুখোমুখি ছায়া
সবকিছু ক্ষয়ে যাবে অতীতের মতোই
প্রত্নতত্ববিদেরা খুঁজে নেবে সবকিছু হয়তো
শুধু খুঁজে পাবেনা মসজিদ মন্দীর গীর্জার শহরে ঈশ্বরহীনতা
আর হৃদয়ের ক্ষতগুলো
আর অলীক বাস্তবতার গানগুলো
উড়তে শেখার পর দূর্বল পাখিটাকে কেউ তাড়া করলো আকাশে, কেউ ঢিল ছুড়লো, কেউ ঠুকরে গেল বারবার। কিন্তু একদিন কারো একটা তীর এসে চিরেই দিলো ওর একটা ডানা। চেরা ডানা নিয়েই পাখিটা উড়লো আরো কিছুদুর। তারপর কাতরাতে কাতরাতে, আকাশ থেকে নামতে নামতে এসে পড়লো একটা ডাস্টবিনে। সেখানে খাবার খুঁজছিল একটা ময়লা হয়ে যাওয়া বুড়ো। বুড়ো পাখিটাকে হাতে তুলে নিল। ওর ডানায় হাত বুলিয়ে বললো "আহা! বড় আঘাত লেগেছে তোমার!" তারপর পাখিটার ঠাঁই হলো ব্রিজের নিচে একটা ময়লা ছেঁড়া কাঁথার ওপর। বুড়ো ওকে আধ খাওয়া একটা বারগার থেকে খুঁটে একটু একটু খেতেও দিলো। আর মুখে বললো "আহা! খুব লেগেছে তোমার? ভেবোনা ঠিক হয়ে যাবে। সব আঘাত ঠিক হয়ে যায়।" আবার একটু ভেবে বললো "কিন্তু আবার কোন আঘাতই ঠিক হয়ে যায়না, বুঝলে? না হলে নেই। জীবন... বুঝলেতো ছোট্ট সোনা পাখি... জীবনের কিছুতেই কিছু যায় আসেনা", বলেই একটা দীর্ঘ্য নিঃশ্বাস ফেললো। পাখিটা কি বুঝলো কে জানে, চোখ থেকে তার এই প্রথম একফোঁটা জল গড়ালো। বুড়োটা এবারে ঝোলা থেকে বের করলো একটা আধখাওয়া কোকের বোতল। ঢকঢক করে খেয়ে নিল প্রায় পুরোটা। পাখিটাকেও কফোটা দিল। তারপর পকেট থেকে একটা গাঞ্জাভরা কাঠি বের করে ধরালো। বেশ লম্বা লম্বা সুখটানে আবহটাকে একই সাথে হালকা ভারী আর ঝাপসা করে তুলতে লাগলো। পাখিটারও যেন একটু নেশা ধরে গেল আর পাখনার যন্ত্রণাটা কম কম বোধ হলো। বুড়োটা অনেক গল্প করলো। বললো এই রাস্তাটায় কারা যায়, ট্রাফিক পুলিশগুলো কেমন, ওর জীবন কেমন কাটছে, কারা বিরক্ত করে, তাড়া করে, কারা ভালো, ব্রিজটা কতোদিন এভাবেই আধখানা হয়ে পড়ে আছে, কারা ঘুষ খায়, কারা বোমা মারে, মিছিলে সবাই কি বলে, বৃষ্টির দিনে কি হয়, ফেরিওলাগুলো, ভিখিরিগুলো, কুকুরগুলো, কাকগুলো, ইত্যাদি...ইত্যাদি...। পাখিটা সব মন দিয়ে শুনলো আর মনে মনে ভাবলো 'আজ তীরটা যদি না লাগতো, এমনি জখম হয়ে যদি ডাস্টবিনে না পড়তাম, এতো জ্ঞানের কথা কি আর শুনতে পেতাম জীবনে?' এইসব ভাবতে ভাবতে পাখিটা একটা বুঝদারের আত্মতৃপ্তি নিয়ে ভাঙা ব্রিজের ফাঁক দিয়ে ছোট্ট আকাশটা দেখতে লাগলো। হঠাৎই ওর চিন্তায় ছেদ পড়লো কারন কানে এলো বুড়ো একটা গান ধরেছে। দুহাতে একজোড়া মন্দিরা বাজাতে বাজাতে বুড়ো একটা ভজন গাইছে বড় দরদি গলায়। পাখিটার গান শুনে বুকটা হুহু করে উঠলো আর দুচোখ বেয়ে অঝোরে জল গড়ালো। গান শেষ হলে বুড়ো বললো "হ্যাঁরে পাখি কাঁদছিস তুই? দুঃখ কি তোর? ওইতো একটা ডানা, সেরে গেলে উড়ে যাবি আবার। জানিস কতো একলা আমি? সবাই ছেড়ে গেছে। এই গান ছাড়া আর কিছুই পড়ে নেই।" পাখির বড় কষ্ট হলো বুড়োর জন্য। ভাবলো ডানা সেরে গেলেও ছেড়ে যাবেনা বুড়োকে। এভাবে দুদিন গেলো। বুড়ো পাখিটার সঙ্গ পেয়ে বেশ আনন্দে ছিল। বহুদিন পর গোসল করলো, ঝোলায় থাকা কমলা গেঞ্জিটা বের করে পরলো, চুল আঁচড়ালো, একজোড়া চলটা ওঠা চামড়ার বুটও পরে নিলো। তারপর আবার দুপুরের পর গাঞ্জা টেনে গল্প জুড়ে একটু দম নিয়ে একটা গান ধরলো মন্দিরা হাতে। কিন্তু আজ ধরলো রাধাশ্যামের গল্প বলা একটা মনভোলানো ঝুমুর গান। মন্দিরাটা বেশ কায়দায় বাজাতে বাজাতে সারা শরীর দোলাতে দোলাতে গাইতে লাগলো বুড়ো। এমন মজার গান শুনে পাখির মনও খুশিতে মেতে উঠলো। আনন্দে বিভোর হয়ে পাখিটা বুড়োর চারপাশে ঘুরে ঘুরে নাচতে লাগলো আর গলা মেলাতে লাগলো। কিছুক্ষণের মধ্যেই হঠাৎ বুড়ো গান থামিয়ে দিলো। মন্দিরাজোড়া আছড়ে ফেললো হাত থেকে। কি কারনে কে জানে যেন ভীষন রেগে থম মেরে বসে রইলো রাস্তায় স্থির দৃষ্টি রেখে। এইসব দেখে পাখিটা ভীষণ ভয় পেয়ে গেল। ভয়ে গুঁটিশুঁটি মেরে ছেঁড়া কাঁথাটার এক কোনে বসে পড়লো আর বুড়োকে ভয়ে ভয়ে দেখতে লাগলো। এভাবে সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত নামলো। বুড়ো একইভাবেই রেগে বসে রইলো। পাখিটা চুপচাপ পড়ে থাকতে থাকতে একটা সময়ের পর ঘুমিয়ে পড়লো। ঘুমের মধ্যেই হঠাৎ বুঝতে পারলো বুড়োটা ওকে দুহাতে চেপে ধরেছে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই বুড়ো একহাতে পাখিটার ঘাড় মটকে দিলো। বিষ্ফারিত চোখে বুড়োর মুখটা দেখতে দেখতে পাখিটা আবার ঘুমিয়ে পড়তে লাগলো। ঘুমিয়ে পড়তে পড়তে একটা স্বপ্ন দেখলো ছোট্ট পাখিটা। দেখলো সে আসলে একটা ফিনিক্স পাখি জ্বলন্ত ছাই থেকে সোনালি মজবুত দুটো বিশাল ডানা ঝাপটাতে ঝাপটাতে আবার জন্ম হচ্ছে তার, যে ফিনিক্সে পাখির গল্প সন্ধ্যাবেলা ঘরে ফিরে বাবা কিংবা মা বলতো ওদের কানে আর ওরা ধীরে ঘুমিয়ে পড়তো, যদিও তখনও চোখ ফোটেনি মোটে।
বেশ অনেক বছর আগে ক্রাশ খেয়েছিলাম উজবুক টাইপ এক ছেলের। এক বন্ধুকে বললাম তার কথা। ছেলেটার ফোন নম্বরও পেয়ে গেলাম। বন্ধু বললো চল ওকে ফোন করি। আমি রাজি হচ্ছিলামনা প্রথমে কিন্তু পরে এক দুষ্টু বুদ্ধি মাথায় চাপলো। হাতের কাছে যে ইংরেজী বইটি পেলাম সেটাই নিয়ে একটা পাতা খুলে বললাম "নে, ফোন কর। স্টাইল করে ইংরেজীতে কথা বলবি। এই নে এখান থেকে রিডিং পড়ে যাবি যেন মনে হয় ঢং করে কথা বলছিস। ও যেন ভাবে তুই বাংলাই জানিস না।" তো বন্ধু ফোন করলো, ছেলেটা ফোন রিসিভও করলো। দু একটা কথা বলবার পর বই থেকে এলোমেলো রিডিং পড়া শুরু হলো। ছেলেটা জানালো সে কিছুই বুঝতে পারছেনা। তারপর আরো আজগুবি ইংরেজি আওড়ানো হলো। তারপর ফোন রেখেও দেয়া হলো। প্রথমে হাসি চাপতে চাপতে আর পরে হাসতে হাসতে আমাদের পেট ফেটে যাবার জোগাড়। যাই হোক, বন্ধু চলে গেল। আমি বরাবরের মতো নিজের ক্রাশ নিজের মনে কবর দেয়ার চেষ্টায় কাজে মন দিলাম। দুদিন পর বন্ধুর সাথে আবার দেখা, বললো "কি রে ভাই! এই পোলা তো যেমন ভাবসিলাম তেমন না, এ তো দেখি সারারাত কথা বলে।" আমি বললাম "ও! তোরা কথা বলছিস? ভালো তো।" এবং বরাবরের মতোই ভাবলাম যাকগা, প্রেম হয়ে যাক ওদের। যার কপালে যার নাম লেখা। আবার নানান কাজে মন দিলাম। পরের দিন দুপুরের আগে আগে বন্ধুটা ফোন দিল "দোস্ত! যাইতেসি পোলাটার সাথে ডেইট মারতে।" আমি বললাম "বাপরে! এতো ফাস্ট তোরা! যা তাইলে। ভালো ভাবে ডেইট কর।" ঘন্টা দুয়েক পর আবার বন্ধুর ফোন "আমি তোর বাসার নিচে তাড়াতাড়ি আয়।" বললাম "নিচে কেন? উপরে আয়।" বন্ধু বললো "আরে নিচে আয়। দরকার আছে।" অগত্যা নিচে নামলাম দেখি লাল টকটকা চকরাবকরা পার্টি শাড়ি পরে গাঢ় মেকাপে আমার বন্ধু। প্রথমে মুখটা আমার হাঁ হয়ে গেল একেবারে, বললাম "কিরে এই ঠাডা রোইদে তুই এমনে সাজছোস ক্যান?" বন্ধুটা বললো "আরে রাখ! আমার সাজগোজটাই মাটি! কি পোলার লগে ডেইটে পাঠাইলি?" আমি অবাক হয়ে বললাম "আমি!!!??? কিন্তু কি? কোন সমস্যা হইসে? আয় উপরে আয়। কথা বলি।" বন্ধু উপরে এলো, জানালো ছেলেটা খুবই ফালতু টাইপের। তার খুব রাগ উঠেছিল। তাই রেগেমেগে সে ভয় দেখিয়ে ছেলেটার কাছ থেকে পাঁচশো টাকার একটা নোট নিয়ে এসেছে। এমন ঘটনার বৃত্তান্ত শুনে আমি হাসবো না কাঁদবো বুঝতে পারছিলাম না। বললাম "ফালতু হইলে বাদ। আর কথাই বলিস না। কিন্তু পাঁচশো টাকা আনলি কেন?" ও জবাব দিল "আনবো না? একদম উচিত কাজ করসি। ফালতু ছেলে একটা।" আমার ভ্যাবাচ্যাকা অবস্থা কাটার আগেই বন্ধু চলে গেল। যাবার আগে আমাকে সাবধানও করে দিয়ে গেল আর কোন বদ ও বিশ্রী ছেলের সাথে যেন আর কখোনো আলাপ করতে না বলি। কারন ওর আসলেই এতো বাজে সময় নেই। আমি সারা বিকেল মন খারাপ করে বসে রইলাম। সন্ধ্যায় আবার বন্ধুর ফোন "দোস্ত ওই পোলা আর ওর বন্ধুরা ফোন করে হুমকি দিতেসে। আমার খুব ভয় লাগতেসে দোস্ত! তোর জন্য আজকে এমন বিপদে পড়লাম আমি।" আমার মন খারাপ তো ছিলই কিন্তু এবারে আতঙ্কিত যতোনা তারচাইতে বেশি অপরাধবোধ পেয়ে বসলো। কি করবো বুঝতেই পারছিলাম না। শেষে ভাবলাম বন্ধুকে এভাবে একলা বিপদে ফেলে রাখা ঠিক হবেনা। কয়েকদিন পর ওই ছেলেটাকে ফোন করলাম নিজেই জানালাম এটা আসলে পুরোই আমাদের একটা প্র্যাঙ্ক ছিল। আমরা খুবই দুঃখিত। এখন পাঁচশো টাকাটা আমরা ফেরত দিতে চাই। ছেলেটা ভালো না খারাপ জানিনা, ক্ষমা করেছিল কিনা তাও জানি না তবে হুমকি ধমকি আর দেয় নি তারপর। বন্ধুর দোষটা ঘাড়ে নেয়ার বুদ্ধিটা সেদিন খারাপ তো ছিলোই, ভীষণ একটা অপরাধই হয়েছিল। বন্ধুটার মাথায় একটা ভয়ঙ্কর প্ল্যান এসেছিল তারপর, আমাকে পাহাড়ের খাদে ঠেলে ফেলে দেয়ার প্ল্যান!
একটা লোকালয়কে কতোভাবেই না দেখা যায়... এর ঘরবাড়ি, গাছপালা, রাস্তাঘাট, লোকজন... বেশ লাগে উঁচু কোন ভবনের জানলা থেকে কিংবা ছাদ থেকে দেখতে থাকতে। হেলিকপ্টার থেকে দেখতে নিশ্চয়ই আরো ভালো লাগে। এখন ড্রোন আছে, ড্রোনক্যামেরার সাহায্যে স্ক্রিনে একটা জনপদ দেখতেও বেশ লাগে। আবার ধরুন পায়ে হেঁটেও একটা জনপদ ঘুরে ঘুরে দেখা যায়। একটা ধানক্ষেতের আইল ধরে হাঁটতে কতোই না ভালো লাগে। কিংবা কোন সরষের ক্ষেত বা ধরুন একটা গোলাপের ক্ষেত ধরে। একটা ধান গাছ বা গোলাপ গাছকে কতো সময় নিয়ে পর্যবেক্ষণ করা যায়... কতো কাছ থেকে... একটা ধানকে কিংবা একটা গোলাপের পাতাকেই বা... কতো কাছ থেকে কোন বস্তুকে দেখা যায় কিংবা কতো দূর থেকেই বা একটা বস্তুকে দেখতে পাওয়া যায় তা নির্ভর করে মূলত আপেক্ষিক ক্ষমতা কিংবা আপেক্ষিক অক্ষমতার ওপর। আর সেই ক্ষমতা ও আক্ষমতার রয়েছে সীমারেখা। সেই সীমারেখাটা কিভাবে নির্ধারিত হয়? যদি সীমা নির্ধারণের ক্ষেত্রে কিছু পরিবর্তনশীল উপাদান কিংবা নিয়ামক কার্যকর থাকে তবে সীমার ধারনাটিও আপেক্ষিক হয়ে যায়। এমনি করে দেখতে গেলে যা কিছুই আমরা অপরিবর্তনশীল ধরে নিয়ে নিই না কেন প্রতিটি উপাদান কিংবা নিয়ামক প্রাকৃতিকভাবেই পরিবর্তন যোগ্য। আমি হয়তো খুব আনাড়িভাবেই কিছু কথা বলে যাচ্ছি। এতে আমার কিছু আক্ষেপ আছে ঠিকই কারন এই বিষয়ের ওপর ভালো লেখাপড়া নেই বলে তবে লজ্জার যে কিছু নেই তা জানি। আমি বিজ্ঞানের ছাত্রী ছিলাম না কখোনো। স্কুলে ভয়াবহ ফেল্টু ছাত্রী ছিলাম বলে ক্লাস নাইনে ওঠার সময় তৎকালীন ক্লাসটিচার আমাকে বলেছিলেন "তুই তো লেখাপড়া কিছু করিস না, মানবিক ছাড়া আর কি নিবি?" আমি মানবিক বিভাগের বিষয়গুলোই নিয়েছিলাম কারন সেটাই তখনকার নিয়মানুযায়ী অবধারিত ছিল। সত্যিকার অর্থে আমিও মানবিক বিভাগই নিতে চেয়েছিলাম কারন আমিও বিশ্বাস করেছিলাম যারা লেখাপড়ায় খারাপ এবং লেখাপড়ায় খারাপ থাকাটা যাদের জন্য অপরিবর্তনযোগ্য বাস্তবতা হিসেবে স্বিকৃত একমাত্র মানবিক বিভাগই তাদের জন্য নির্ধারিত হতে পারে। লেখাপড়ায় খারাপ বলতে পরীক্ষায় খারাপ ফল করাকেই বোঝানো হয় এবং তা আমারও বিশ্বাসে পরিণত হয়েছিল সে সময়। তবে যখন কেউ আমাকে বলতো যে "তুই কোন পড়াশুনা করিসনা", এর কোন উত্তর খুঁজে না পেলেও আমি ভাবতাম তবে সারাদিন আমি কি করি? প্রতিদিনই একটি উল্লেখযোগ্য সময় আমি কিছু একটা পড়তে থাকি এবং কিছু একটা শুনতে থাকি তবে সেগুলো আমার পছন্দের কিংবা আগ্রহের কিছু। নিজের আগ্রহের বিষয়নির্ভর পড়া এবং শোনা কি তবে পড়াশুনা নয়? পরে অবশ্য বুঝেছি এখানেও দ্রষ্টার আমাকে দেখার বা জানার একটা সীমাই কাজ করছে। তার মানে দাঁড়ালো কতো কাছ থেকে বা কতো দূর থেকে আমরা কোন বস্তুকে দেখি তার ওপর নির্ভর করেনা আমরা বাস্তবিকভাবে কি দেখবো এবং কতোটা বিস্তারিত ভাবেই বা দেখবো। সেদিক থেকে প্রত্যেকটি ব্যক্তি মানুষেরই (অন্য প্রাণীদের প্রসঙ্গ টানতে চাচ্ছিনা আর) কোন একটা বস্তু পর্যবেক্ষণের ব্যাপারে আলাদা আলাদা সীমা থাকার কথা। কিন্তু আবার পরীক্ষার খাতায় সব প্রশ্নেরই প্রায় সব ছাত্ররা প্রায় একইরকম উত্তর লিখে থাকে। এখানে অবশ্য যুক্তিযোগ্য কারন আছে, প্রত্যেক ছাত্রেরই উদ্দেশ্য থাকে ভালো নম্বর পাওয়ার আর পরীক্ষকের পরীক্ষণ কার্যটি ধরেই নেয়া হয় কিছু অপরিবর্তনযোগ্য উপাদান ও সীমা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। এখানে সীমারেখাটি কে প্রথম টানছে পরীক্ষার্থী নাকি পরীক্ষক এবং এতে কার বেশি সুবিধা হচ্ছে তা বলা মুশকিল হয়তো। সে যাকগে, কোন গভীর বিবেচনা জাগ্রত হবার আগেই আমি পরবর্তী চার বছর মানবিক বিভাগের বিষয়গুলোর ওপর পড়াশুনা করলাম। আগের অভ্যাস পুরোপুরি বিসর্জন না দিয়েই ইচ্ছা/অনিচ্ছা দুই নিয়েই পড়লাম অর্থনীতি, পৌরনীতি, ইতিহাস ও ভূগোলের বুনিয়াদি বইগুলো। এই মোটা মাথায় সেগুলোর কিছু অংশ যুক্তিসঙ্গত মনে হলো আবার কিছু অংশের যুক্তিসঙ্গতা অনুধাবন করতে আমি ব্যর্থ হলাম। চারবছর মানবিক বিভাগে পড়াশুনা করলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের মানবিক অনুষদের বিষয়গুলোর স্নাতকের ভর্তি পরীক্ষায় সেই পড়াশুনা আমার কোন কাজেই আসলো না, বরং কাজে আসলো বাণিজ্য অনুষদের ভর্তিপরীক্ষায়। মানবিক/সমাজবিজ্ঞান অনুষদে কোন ভালো বিষয়ে (সকলের মতে, কারন কোন বিষয় ভালো, কোন বিষয় খারাপ তা বিচারের জ্ঞান আমার ছিলনা তখন বা আদৌ কোন অধ্যয়নের বিষয় ভালো কিংবা খারাপ হয় কি না তা নিয়ে বিচার বা তর্কের যথাযথ জ্ঞান বা ক্ষমতা কোনটাই আমার ছিলনা) অধ্যয়নের অযোগ্য প্রমাণিত হওয়ায় আমার সুযোগও মিললো না। বরং আমি বাণিজ্য অনুষদের ভালো বিষয়ে অধ্যয়নের যোগ্য বলে প্রমাণিত হলাম এবং সুযোগ পেলাম। পরিবারের লোকেরা আমাকে জোরজবরদস্তি করে বাণিজ্য অনুষদে ভর্তি করে দিল। এবং পরবর্তী চারবছর স্নাতক, একবছর স্নাতোকোত্তর এবং তারপর আরো দুই বছর বিশেষায়িত স্নাতোকোত্তর পড়াশুনা করে গেলাম বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে প্রথমে তীব্র অনিচ্ছা নিয়ে হলেও পরবর্তিতে বেশ আগ্রহের সাথে। আমি এখন কৃতজ্ঞ বোধ করি বাণিজ্য অনুষদে পড়াশুনার সুযোগ পেয়েছিলাম বলে কারন বর্তমান পৃথিবীকে বুঝবার জন্য এই পড়াশুনা সবসময় আমার বেশ কাজে আসে। যদিও আমার পরিবারের উদ্দেশ্য ভিন্ন ছিল, তাদের উদ্দেশ্য ছিল আমি যেন ভালো চাকরি করতে পারি এবং ভালো অর্থ উপার্জন করতে পারি। আমাদের পরিবার, আমাদের সমাজ আমাদের ভালোর জন্য এবং তারচেয়েও বেশি হয়তো নিজেদের ভালোর জন্যই মূলত সমস্ত কিছু বিশ্লেষণ করে, সিদ্ধান্ত নেয়, কর্মতৎপর হয়। কিন্তু, ওই যে, অবধারিতভাবেই অপরিবর্তনযোগ্য হিসেবে লব্ধ বা বিশ্বাসকৃত সীমার মধ্যে।
ক্রমশ...
নারীজাতি তোর বুদ্ধি হইবো কবে?
সাঙ্গ হইলে বেলা সূর্য ডুবলে ভবে?
নারীর প্রতি সন্দেহ তোর
পরম পতি হোকনা সে চোর
কালের যতো মহারথী
দেখলিনারে উল্টারথী
নারীজাতি তোর আর বুদ্ধি হইলো না
প্যাঁচ বুজলি গোঁজ বুজলি অংক বুজলি না
দূগ্গা হইলি কালী হইলি
পূজা করলি আচার করলি
অতি মুসলমানও হইলি
তবু আশঙ্কা ঘুচলো না
নারীজাতি তোর আর বুদ্ধি হইলো না
তোতাপাখি হইলি শুধু পুরুষ বুজলি না
জগৎ সংসার জনম দিলি
কতো নিজের পরাণ দিলি
গায়ের চামড়া বিছায়ে দিলি
সর্ব শর্ত মাইনা নিলি
নারীজাতি তোর আর বুদ্ধি হইলো না
নারীবাদের কাঁথায় আগুন নারীত্ব বুজলি না
নিজের পাছায় গু থুইয়া
পরের পাছায় ধুয়া দিলি
নিজের মুখে কুলুপ দিয়া
পরের পাছার বাণ ছোটালি
নারীজাতি তোর আর বুদ্ধি হইলো না
ভাত বুজলি কাপড় বুজলি দাসত্ব বুজলি না
নিজের পায়ে নিজের হাতে
পরলি শিকল আহলাদিতে
অন্য নারীর ছিঁড়লে শিকল
ছুঁড়লি পাথর তার মাথাতে
নারীজাতি তোর আর বুদ্ধি হইলো না
ফ্যাশন আইলো রোশান আইলো স্বাধীনতা আইলো না
বিয়া বিয়া করলি নারী
মাথার ওপর শ্বশুরবাড়ি
পায়ের জুতা হইলি সবার
তবু তুই কূল ছাড়লি না
নারীজাতি তোর আর বুদ্ধি হইলো না
দিকবিদিগ জয় করলি তবু তুই জিততে পারলিনা
চোখ বাঁধলি কান বাঁধলি
মুখ বাঁধলি মন বাঁধলি
জঠরখানা বর্গা দিলি
টু শব্দ করলি না
নারীজাতি তোর আর বুদ্ধি হইলো না
সারা শরীর ঢাকনা দিয়াও তোর লজ্জ্বা ঘুচলো না
লালন করলি পালন করলি
প্রয়োজনে মারলি ধরলি
নারী বানাইলি পুরুষ বানাইলি
হা নারী! মানুষ বানাইলি না
নারীজাতি তোর বুদ্ধি হইবো কবে?
সন্তানেরা কান্দে নারী তোর সূর্য উঠবো কবে???
She nodded her head slightly in agreement
Then softly said
"Okay than, lets begin
Bring the sharpest knife and make fine cuts on my skin
Yes, you can then peel my skin most easily and most painfully
Cut my tongue then
Then after cut the lips nose ears fingers
and all the small interesting pieces you like
Bring the heaviest solid hammer and
first break my teeth
Then break knees toes long and short bones
Then the skull
You can play with my melting brain too
Just let me know before I lose the last string of consciousness
That how you enjoyed and how will you enjoy ever after...
আমি হয়তো এই বাংলাদেশে এবং হয়তো এই ভারতবর্ষেও সেইসব ভাগ্যবতীদের মধ্যে একজন যাদের স্বামীরা তাদের ধরে ঠ্যাঙ্গায় না, কথায় কথায় গালমন্দ করে না, আঘাত দিয়ে ছোট করে কথা বলে না কিংবা উত্তমমধ্যম দেয় না। এই অশিক্ষিত বর্বর জনপদে এরকম বৈবাহিক জীবন ভাগ্যবতীদের কপালেই জোটে কিন্তু। আমার এক বন্ধু বহুদিন ধরেই স্বামীর নির্যাতন ভোগ করছিল। ওর স্বামী ওকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন তো করতোই, ওর প্রায় সমস্ত টাকা পয়সাও হাতিয়ে নিয়েছিল। তার ওপর লোকটার ছিল বহূ নারীর সাথে সম্পর্ক ও প্রবল মাদকাসক্তি। কোন ভরনপোষন তো দূর সে আমার বন্ধুটিকে বিন্দুমাত্র সম্মান পর্যন্ত করতো না এবং তার পরিবারও বেচারির এই দূর্ভোগ শেষ করার ব্যাপারে কোন পদক্ষেপই নিচ্ছিল না বরং বাড়ির বউয়ের দোষ খুঁজে বেড়ানোতেই সারাক্ষণ ব্যস্ত থাকতো। আমরা কিছু বন্ধুরা ওর মুখে এমন করুন নির্যাতনমূলক বৈবাহিক জীবনের বৃত্তান্ত শুনে সবসময়ই কষ্ট পেতাম। বহূবার ওকে আইনি আশ্রয় নিতে এবং এই অসহ্য সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসতে অনুরোধও করেছিলাম। কিন্তূ আমার বন্ধুটির একটি বক্তব্যই ছিল যে সবকিছুর পরও সে তার স্বামীকে ভালোবাসে এবং তার সাথেই জীবন কাটাতে চায়। আমরা জানতাম সে আর্থিকভাবে স্বচ্ছল এবং বেঁচে থাকার জন্য স্বামীর অর্থ তার প্রয়োজন নেই তবু ওর একগুঁয়ে ভালোবাসার কথা বুঝতে পেরে আমি ব্যাক্তিগতভাবে কখনো কখনো চেষ্টাও করেছি (অন্য বন্ধুরাও করেছে যে যতোটা পেরেছে) ওকে সময় দিতে, সাহস দিতে, ওর মন ভালো রাখতে এবং কোন একটা কাজে ব্যস্ত থাকতে সাহায্য করতে। বেশ কিছু বছর আগে একবার ওর স্বামী প্রবরটি ফোন করে একরকম আমাকে হুমকিই দিয়েছিল কারন আমি আমার বন্ধুটির জন্য একটা চাকরির চেষ্টা করছিলাম। পরে অবশ্য হাল ছেড়ে দিয়েছিলাম কারন বন্ধুটি জানিয়েছিল তার স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির অমতে গিয়ে সে কোন কাজই করবেনা বলে ঠিক করেছে। সে যাকগে, বন্ধুটির এমন অটুট ভালোবাসা দেখে আমার সবসময় অবাকই লাগতো। তা সেই বন্ধু একদিন আড্ডা দিতে আসতে কিছু দেরী হওয়াতে ক্ষোভের সাথে জানালো "জামাইকে সবজি সিদ্ধ করে দিয়ে আসলাম। জানোনা তো ওকে সব রেডি করে দিতে হয়।" জানালো ওর স্বামী এখন ডায়েটিং এ আছে। লাঞ্চে শুধু একবাটি সবজি সেদ্ধই খায়। তা বেশ ভালো কথা তবে শুনে একটু খটকাই লাগলো। আমরা বাঙালি মেয়েরা তো শুধু স্বামী সন্তান নয়, আত্মীয়স্বজন, পাড়া প্রতিবেশী, বন্ধুবান্ধব সবার জন্যই ভালবেসে নানান পদ রান্না করি এবং যত্ন করে খাওয়াই। পরিবারের লোকেদের প্রিয়জনদের পাতে নিজের হাতে রান্না করে চর্বচষ্য তুলে দিতে না পারলে একরকম মনোকষ্টেও ভুগি। পুরুষরাও কেউ কেউ আজকাল চেষ্টা করছে রান্নাবান্না করার কিংবা তা না পারলেও পরিবারে তাদের অবদান তো কম নয়। এই কঠিন অর্থনীতি ও কর্মসংস্কৃতির দেশে পরিবারের সব খরচের যোগান আমরা পুরুষের কাছেই আশা করি এখনও। পকেটে টাকা না থাকলেও আশা করি ধার করে হলেও ওরা দামি উপহার তুলে দেবে স্ত্রী সন্তান পরিবার পরিজনের হাতে। সেখানে স্বামীকে সামান্য একবাটি সবজি সেদ্ধ করে দিয়ে এতো ক্ষোভ! এ কেমন ভালোবাসা? আর যদি সম্পর্কে এতোই তিক্ততা জমে থাকে তবে শহরের একজন আধুনিক স্বাবলম্বি নারী কেন একটি সম্পর্ক বয়ে বেড়াবে? সে যাই হোক, একেকটা সম্পর্ক একেক রকম হয়, কারো ব্যাক্তিগত বোঝাপড়া আমার খাটো নাকের এখতিয়ারের বাইরে, তাই সেদিন ওকে কোন প্রশ্নও করিনি। তবে এর মধ্যে একটা মজার ঘটনা ঘটলো, এই বন্ধুটিই একদিন বলে বসলো সে আমার স্বামীকে জিজ্ঞেস করতে চায় যে সে আমার মধ্যে এমন কি পেল যে এতো প্রশ্রয় দিয়ে আমাকে এভাবে মাথায় তুললো, ওর ভাষায় "বউকে এতো মাথায় তোলার কি আছে? আর বউয়ের কথায় এতো নাচারই বা কি আছে?"
আবারও বলি, আমি হয়তো এই ভারতবর্ষে সেইসব ভাগ্যবতীদের মধ্যে একজন যাকে শ্বশুরঘরে পার করতে বাবামাকে কোন ছলেই মোটা টাকার যৌতুক দিতে হয়নি। যৌতুকপ্রথা যে এই আধুনিক ভারতবর্ষে কতো রকম ও কতো রঙ ধারন করেছে তা প্রতিমুহুর্তেই আমাদের চমৎকৃত করতে পারে। অন্য কোন আর্থিক বুদ্ধি থাকুক বা না থাকুক, বিয়ের সময় কনের পরিবারের কাছ থেকে যৌতুক নেবার যেন হাজারটা ফন্দি ফিকির অনায়াসেই মাথায় আসে এই জনগোষ্ঠীর। এই কয়েক বছর আগে আমার আরেক বন্ধু অন্তঃসত্বা হয়ে পড়ায় তার প্রেমিকটিকে বিয়ে করবার জন্য চাপ দিচ্ছিল। চল্লিশোর্ধ মহান প্রেমিকটি এই সুযোগে জানালো যে তার এখন স্ত্রী ও সন্তানের ভরণপোষণ দেবার ক্ষমতা নেই। আমার বন্ধু যদি ওকে বিশ/ত্রিশ লক্ষ টাকা দিতে পারে তবেই এ বিয়েটা হতে পারে। আমার বন্ধুটির পারিবারিক অর্থনৈতিক অবস্থা সেসময় সংকটাপন্ন ছিল। কোথা থেকে যোগাড় করবে ওরা এতো টাকা। আমার কাছে দূঃখ করে বলতেই আমি নৈতিকভাবেই খুব ক্ষেপে গিয়েছিলাম। ওকে বললাম টাকার বিনিময়ে যেন কিছুতেই বিয়েটা না করে। সবচেয়ে ভালো হয় যদি ও এই লোভী ছোটলোক ও ধান্দাবাজ লোকটাকে বিয়েই না করে। আর যদি বিয়ে নিতান্তই করতে হয় তবে ওর প্রেমিকের পরিবারের সাথে আলোচনা করে বা দরকার হলে আইনের আশ্রয় নিয়ে। আমার বন্ধুটি আমার ওপর ক্ষেপে গেল এতে, ওর মনে হলো আমি ওর ভালো চাইনা, ওকে হিংসা করি, ওর প্রেমিককে ও টাকা দেবে তাতে আমার কি যায় আসে? আমার কি যায় আসে তা খুবই নগন্য হয়তো কিন্তু ওর বাবার অনেক কিছুই গেলো আসলো। মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসা, প্রচন্ড অসুস্থ, সদ্য বিপত্নীক, বৃদ্ধ ভদ্রলোকটিকে বহুদিন না ফেরা গ্রামের বাড়িতে দিনের পর দিন ছুটতে হলো জমি বিক্রি করতে। যে জমি ততোদিনে অন্যদের ভোগদখলে এবং দলিলপত্রে নানান জটিলতা। তারপরও কিছু জমি বিক্রি করে কিছু টাকা যোগাড় হলো ও প্রেমিকটির একাউন্টে আট লক্ষ টাকা জমা করা হলো। এক সুন্দর সন্ধ্যায় ঘরোয়া পরিমন্ডলে নিজের বাসাতেই আমার বন্ধুটি ওর প্রেমিকটিকে রেজিস্ট্রি করে বিয়ে করলো। বিয়ের অনুষ্ঠানে প্রেমিকের পরিবারের কেউ বা প্রেমিকের কোন আত্মীয় অথবা বন্ধুও যোগ দিল না। যেভাবেই হোক না কেন, বিয়েটা তো হলো কিন্তু নব্য স্বামী দেবতাটি আমার বন্ধুটিকে শ্বশুরবাড়ি নিয়ে গেলো না। কিছুদিন পর আবার আমার বন্ধুটি হতাশ হয়ে মন খারাপ করে আমার কাছে এলো। জানালো ওর স্বামীকে যদি বাকি টাকা (অন্তত বিশ লক্ষ) না দেয়া হয় ওর শ্বশুরবাড়ি যাওয়া হবেনা। আর ওর স্বামী এবং শ্বাশুড়ি ওদের তাড়া দিচ্ছে যেন অন্তঃসত্বা অবস্থা প্রকট দৃশ্যমান হবার আগেই যেন টাকাটা জমা করা হয়। নইলে সমাজে মুখ দেখাবার জো থাকবেনা আর। ওর এই দূঃখ দেখে আমার কষ্ট হয়েছিল কিন্তু মেজাজ খারাপ হলো চুড়ান্ত। রেগেমেগে বললাম ওরা যেন এই ইতরদের আর একটা টাকাও না দেয়। ইতিমধ্যেই বিয়ে করার জন্য টাকা দিয়ে ওরা যথেষ্ট অন্যায় করেছে। আমার বন্ধুটি আবার ক্ষেপে গেল আমার ওপর বললো "আমার স্বামীকে আমি টাকা দিয়েছি, তোমার তাতে কি?" তারপরও আরো বহুদিন পার হলো। ওর বৃদ্ধ বাবা সেই প্রতীজ্ঞাবদ্ধ বিপুল অর্থ যোগাড় করতে পারলো না। আমার বন্ধুটি একরকম একলা একলাই বৃদ্ধ বাবার সহায়তায় একটা পুত্রসন্তান জন্ম দিল। ওর স্বামী কালেভদ্রে দেখা দিত। শ্বশুরবাড়ির লোকেরা উপহার হাতে তথাকথিত বংশপ্রদীপের মুখও দেখে গেল। কিন্তু প্রতীজ্ঞা ভঙ্গের অপরাধে মাতা ও পুত্রকে নিজেদের বাড়িতে আমন্ত্রণটুকুও জানালো না।
আমি আমার বন্ধুদের হিংসা করিনা। কাছে থাকুক বা দূরে, চাই ওরা ভালো থাকুক। আমাদের শিক্ষা, আদর্শ, বিশ্বাস, জীবনযাপন, আত্মমর্যাদার বোধ, ভালোবাসার সজ্ঞা, ভালো থাকার সজ্ঞা এক না হোক, তবু এই ছোট্ট জীবনটায় যে যেখানে থাকুক, ভালো থাকুক। তবে আমার বরকে আমার একটু হিংসেই হয় মাঝেমাঝে কারন আমার বন্ধুরা ও পরিবারের লোকেরা যেন আমার চাইতে আমার বরটাকেই বেশি পছন্দ করে। যে বন্ধুদের গল্প আজ বললাম শুধুমাত্র ওদের স্বামীদের মতো না হলেও এই সমাজে পুরুষেরা লোকের প্রিয়পাত্র হয় আর আমার বর তো একজন আক্ষরিক অর্থেই ভালোমানুষ। এক বন্ধু তো একবার বলেই বসলো যে "He is an ANGEL!!!" যদিও সে কোনদিন আমার বরকে সামনাসামনি দেখেওনি, কথা বলা তো দূর। কিন্তু বলে রাখি, আমার বর কোন Angel নয়, ভালো খারাপ মিলেমিশে একজন রক্তমাংশের স্বাভাবিক মানুষ। আমার বর আমাকে সবসময় মাথায় তোলেনা, প্রতিটি দিন আমার প্রথম তীক্ষ্ম পর্যবেক্ষক ও কঠোর সমালোচক হলো আমার বর। মাঝে মাঝে প্রশ্রয় তো দেয় বটেই মাথাতেও তোলে। নিজের বউ বলে কথা! সে আমার কথায় নাচেনা তবে যে ব্যাপারে আমার জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা আছে সে ব্যাপারে আলোচনা তো করেই, পরামর্শও নেয়। আবার প্রয়োজনবোধে পরামর্শ দেয়ও। রান্নাবান্না শিখে উঠতে না পারলেও প্রয়োজনে রান্নায় সাহায্য করতে পিছপা হয়না। আমাদের ঘরদোর আমরা দুজনে মিলেই পরিপাটি রাখি। আমার বন্ধুদের ও পরিবারের লোকেদের বরের কাছ থেকে পাওয়া বা অন্য কারো কাছ থেকে পাওয়া উপহারগুলো দেখাতে বা বলতে কিংবা আপ্লুত হয়ে ফেইসবুকেও পোস্ট করতে সহজ স্বাভাবিকভাবেই ভালো লাগে। বর কিভাবে কখন আর্থিকভাবে ও মানসিকভাবে আমাকে সাহায্য করেছে তাও বলি কাছের মানুষদের। হুম। তবে বলে বেড়াইনা কবে কি উপহার আমিও দিই আমার বরকে, কতো কতো নতুন রেসিপি শিখে নিই ওর জন্য আর পারি কিংবা না পারি কিভাবে সংকটে ওকে সাহায্য করার চেষ্টা করি। ছোট্ট একটা জীবন। শহরের কথিত আধুনিক নারী নয় বরং প্রবল সংগ্রামে পাল্টে যেতে থাকা সময়ের কন্যা হয়ে প্রতিদিন বাঁচি শত ক্ষত বুকে নিয়েই। নিঃস্ব অবস্থাতেও নিজেই নিজের সম্বল হতে চাই শেষ পর্যন্ত। অনেক ত্যাগের বিনিময়ে আমরা মেয়েরা আজ ঘর থেকে বের হই, কাজে হোক বা একটু আয়াসের জন্যই হোক। স্বামী ও শ্বশুরঘরের অযথা কুচর্চা করে সময় নষ্ট নাই করলাম। সমাজের কিছু রীতি মেনে নিতে নারীরা এখনো বাধ্য, কিন্তু আইন ও সমাজের চোখে যা অন্যায় তা মেনে নেবার কোন মানে কি হয়? যে সম্পর্কে ন্যুনতম সম্মান নেই, ভরসা নেই, বিশ্বাস নেই, বিন্দুমাত্র উদারতা নেই, সে সম্পর্ককে জিইয়ে রাখার মানে প্রতিনিয়ত নিজেকেই হত্যা করা। নিজের আত্মমর্যাদা বিসর্জন দিয়ে অন্যের মনোযোগ বা অনুকম্পা গ্রাহী হয়ে আদৌ কি কোন মানুষের বা সমাজের ভালো কিছু হতে পারে? একজন আত্মমর্যাদাসম্পন্ন আত্মবিশ্বাসী নারী কিংবা পুরুষ অন্যায়ের সাথে আপোষ করতে বাধ্য নয় কখনোই এবং আপোষকে "ভালোবাসা", "দায়বদ্ধতা", "অসহায়তা", "দ্বায়িত্ব", "উদারতা" যে নামেই কেউ ডাকুক না কেন, আপোষের অর্থ আপোষই হয়। অন্যায়ের সাথে আপোষ করাও আরেকটা অন্যায়।
একটা ছবি শেয়ার করলাম আমাদের দুজনের। শতভাগ সম্পূর্ণ নই আমরা বাস্তবিকভাবেই। একজনের প্রতি আরেকজনের অভিযোগও আছে অনেক। গুটিকয় কাছের মানুষ হয়তো কিছু কিছু জানতেও পারেন। কতোদিন বাঁচবো তা তো আমরা জানি না। একসাথেও সারাজীবন থাকবো কিনা জানিনা। তবে পারষ্পরিক বিশ্বাস ও সম্মান যেন অটুট থাকে আমাদের আজীবন।
'I'm sorry mama
I never meant to hurt you
I never meant to make you cry
But tonight
I'm cleanin' out my closet"
When someone got uprooted n seek to hold on air... This idealist world hope something modest n fair... Its the reality... the reality where you r absent to watch... But somewhere there is always an awful match... Why did our heroes fight for? Were they really heroes? I feel coward n empty inside... A fight is imposed on me I never asked for... A tired soul hanging from my sholder making my spine to curve forward... If could a war baught me some courage... If could a secrifice could keep me alive... Everything I earned dumped me into a hole called nothingness... Coz everytime I m the one to free your beastness... They walk on wheels or sticks now... they eat with the other hand... some of them wear masks n hv never smiled after... If they could remove the hate in smiles... If they could change the eyes... If they could... This newest world... this newest me... this newest you... fighting with the truth of ourselves... the cowardest heroes of time...
'I'm sorry mama
I never meant to hurt you
I never meant to make you cry
But tonight
I'm cleanin' out my closet"
https://youtu.be/RQ9_TKayu9s
যখন প্রেমে পড়েছি
এই হৃদয়কে উড়িয়ে নিয়ে যেতে দিয়েছি উন্মত্ত ঝড়কে
দেখিনি চারপাশে
কে হাসলো কে কাঁদলো কে ক্ষেপলো কিংবা কে শংকিত হলো
এ হৃদয় এমন নাজুকই ছিল
লোকে বুদ্ধিমানই বলতো আমাকে
তবু কি যে হলো...
বোকা হলাম আমি
রক্তাক্ত হলাম আমি
দগ্ধ হলাম আমি
ছিটকে পড়লাম নর্দমায়
তবু বুক চিতিয়ে বললাম
খাঁটি এই হৃদয়
সে দূর্যোগে বিধ্বস্ত হয়
কিন্তু মরে না কখনো
Forever I Nurtured a Mysterious Bird Forever I nurtured a mysterious bird, which never discloses its identity. For this grief, my eyes ...