একটা লোকালয়কে কতোভাবেই না দেখা যায়... এর ঘরবাড়ি, গাছপালা, রাস্তাঘাট, লোকজন... বেশ লাগে উঁচু কোন ভবনের জানলা থেকে কিংবা ছাদ থেকে দেখতে থাকতে। হেলিকপ্টার থেকে দেখতে নিশ্চয়ই আরো ভালো লাগে। এখন ড্রোন আছে, ড্রোনক্যামেরার সাহায্যে স্ক্রিনে একটা জনপদ দেখতেও বেশ লাগে। আবার ধরুন পায়ে হেঁটেও একটা জনপদ ঘুরে ঘুরে দেখা যায়। একটা ধানক্ষেতের আইল ধরে হাঁটতে কতোই না ভালো লাগে। কিংবা কোন সরষের ক্ষেত বা ধরুন একটা গোলাপের ক্ষেত ধরে। একটা ধান গাছ বা গোলাপ গাছকে কতো সময় নিয়ে পর্যবেক্ষণ করা যায়... কতো কাছ থেকে... একটা ধানকে কিংবা একটা গোলাপের পাতাকেই বা... কতো কাছ থেকে কোন বস্তুকে দেখা যায় কিংবা কতো দূর থেকেই বা একটা বস্তুকে দেখতে পাওয়া যায় তা নির্ভর করে মূলত আপেক্ষিক ক্ষমতা কিংবা আপেক্ষিক অক্ষমতার ওপর। আর সেই ক্ষমতা ও আক্ষমতার রয়েছে সীমারেখা। সেই সীমারেখাটা কিভাবে নির্ধারিত হয়? যদি সীমা নির্ধারণের ক্ষেত্রে কিছু পরিবর্তনশীল উপাদান কিংবা নিয়ামক কার্যকর থাকে তবে সীমার ধারনাটিও আপেক্ষিক হয়ে যায়। এমনি করে দেখতে গেলে যা কিছুই আমরা অপরিবর্তনশীল ধরে নিয়ে নিই না কেন প্রতিটি উপাদান কিংবা নিয়ামক প্রাকৃতিকভাবেই পরিবর্তন যোগ্য। আমি হয়তো খুব আনাড়িভাবেই কিছু কথা বলে যাচ্ছি। এতে আমার কিছু আক্ষেপ আছে ঠিকই কারন এই বিষয়ের ওপর ভালো লেখাপড়া নেই বলে তবে লজ্জার যে কিছু নেই তা জানি। আমি বিজ্ঞানের ছাত্রী ছিলাম না কখোনো। স্কুলে ভয়াবহ ফেল্টু ছাত্রী ছিলাম বলে ক্লাস নাইনে ওঠার সময় তৎকালীন ক্লাসটিচার আমাকে বলেছিলেন "তুই তো লেখাপড়া কিছু করিস না, মানবিক ছাড়া আর কি নিবি?" আমি মানবিক বিভাগের বিষয়গুলোই নিয়েছিলাম কারন সেটাই তখনকার নিয়মানুযায়ী অবধারিত ছিল। সত্যিকার অর্থে আমিও মানবিক বিভাগই নিতে চেয়েছিলাম কারন আমিও বিশ্বাস করেছিলাম যারা লেখাপড়ায় খারাপ এবং লেখাপড়ায় খারাপ থাকাটা যাদের জন্য অপরিবর্তনযোগ্য বাস্তবতা হিসেবে স্বিকৃত একমাত্র মানবিক বিভাগই তাদের জন্য নির্ধারিত হতে পারে। লেখাপড়ায় খারাপ বলতে পরীক্ষায় খারাপ ফল করাকেই বোঝানো হয় এবং তা আমারও বিশ্বাসে পরিণত হয়েছিল সে সময়। তবে যখন কেউ আমাকে বলতো যে "তুই কোন পড়াশুনা করিসনা", এর কোন উত্তর খুঁজে না পেলেও আমি ভাবতাম তবে সারাদিন আমি কি করি? প্রতিদিনই একটি উল্লেখযোগ্য সময় আমি কিছু একটা পড়তে থাকি এবং কিছু একটা শুনতে থাকি তবে সেগুলো আমার পছন্দের কিংবা আগ্রহের কিছু। নিজের আগ্রহের বিষয়নির্ভর পড়া এবং শোনা কি তবে পড়াশুনা নয়? পরে অবশ্য বুঝেছি এখানেও দ্রষ্টার আমাকে দেখার বা জানার একটা সীমাই কাজ করছে। তার মানে দাঁড়ালো কতো কাছ থেকে বা কতো দূর থেকে আমরা কোন বস্তুকে দেখি তার ওপর নির্ভর করেনা আমরা বাস্তবিকভাবে কি দেখবো এবং কতোটা বিস্তারিত ভাবেই বা দেখবো। সেদিক থেকে প্রত্যেকটি ব্যক্তি মানুষেরই (অন্য প্রাণীদের প্রসঙ্গ টানতে চাচ্ছিনা আর) কোন একটা বস্তু পর্যবেক্ষণের ব্যাপারে আলাদা আলাদা সীমা থাকার কথা। কিন্তু আবার পরীক্ষার খাতায় সব প্রশ্নেরই প্রায় সব ছাত্ররা প্রায় একইরকম উত্তর লিখে থাকে। এখানে অবশ্য যুক্তিযোগ্য কারন আছে, প্রত্যেক ছাত্রেরই উদ্দেশ্য থাকে ভালো নম্বর পাওয়ার আর পরীক্ষকের পরীক্ষণ কার্যটি ধরেই নেয়া হয় কিছু অপরিবর্তনযোগ্য উপাদান ও সীমা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। এখানে সীমারেখাটি কে প্রথম টানছে পরীক্ষার্থী নাকি পরীক্ষক এবং এতে কার বেশি সুবিধা হচ্ছে তা বলা মুশকিল হয়তো। সে যাকগে, কোন গভীর বিবেচনা জাগ্রত হবার আগেই আমি পরবর্তী চার বছর মানবিক বিভাগের বিষয়গুলোর ওপর পড়াশুনা করলাম। আগের অভ্যাস পুরোপুরি বিসর্জন না দিয়েই ইচ্ছা/অনিচ্ছা দুই নিয়েই পড়লাম অর্থনীতি, পৌরনীতি, ইতিহাস ও ভূগোলের বুনিয়াদি বইগুলো। এই মোটা মাথায় সেগুলোর কিছু অংশ যুক্তিসঙ্গত মনে হলো আবার কিছু অংশের যুক্তিসঙ্গতা অনুধাবন করতে আমি ব্যর্থ হলাম। চারবছর মানবিক বিভাগে পড়াশুনা করলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের মানবিক অনুষদের বিষয়গুলোর স্নাতকের ভর্তি পরীক্ষায় সেই পড়াশুনা আমার কোন কাজেই আসলো না, বরং কাজে আসলো বাণিজ্য অনুষদের ভর্তিপরীক্ষায়। মানবিক/সমাজবিজ্ঞান অনুষদে কোন ভালো বিষয়ে (সকলের মতে, কারন কোন বিষয় ভালো, কোন বিষয় খারাপ তা বিচারের জ্ঞান আমার ছিলনা তখন বা আদৌ কোন অধ্যয়নের বিষয় ভালো কিংবা খারাপ হয় কি না তা নিয়ে বিচার বা তর্কের যথাযথ জ্ঞান বা ক্ষমতা কোনটাই আমার ছিলনা) অধ্যয়নের অযোগ্য প্রমাণিত হওয়ায় আমার সুযোগও মিললো না। বরং আমি বাণিজ্য অনুষদের ভালো বিষয়ে অধ্যয়নের যোগ্য বলে প্রমাণিত হলাম এবং সুযোগ পেলাম। পরিবারের লোকেরা আমাকে জোরজবরদস্তি করে বাণিজ্য অনুষদে ভর্তি করে দিল। এবং পরবর্তী চারবছর স্নাতক, একবছর স্নাতোকোত্তর এবং তারপর আরো দুই বছর বিশেষায়িত স্নাতোকোত্তর পড়াশুনা করে গেলাম বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে প্রথমে তীব্র অনিচ্ছা নিয়ে হলেও পরবর্তিতে বেশ আগ্রহের সাথে। আমি এখন কৃতজ্ঞ বোধ করি বাণিজ্য অনুষদে পড়াশুনার সুযোগ পেয়েছিলাম বলে কারন বর্তমান পৃথিবীকে বুঝবার জন্য এই পড়াশুনা সবসময় আমার বেশ কাজে আসে। যদিও আমার পরিবারের উদ্দেশ্য ভিন্ন ছিল, তাদের উদ্দেশ্য ছিল আমি যেন ভালো চাকরি করতে পারি এবং ভালো অর্থ উপার্জন করতে পারি। আমাদের পরিবার, আমাদের সমাজ আমাদের ভালোর জন্য এবং তারচেয়েও বেশি হয়তো নিজেদের ভালোর জন্যই মূলত সমস্ত কিছু বিশ্লেষণ করে, সিদ্ধান্ত নেয়, কর্মতৎপর হয়। কিন্তু, ওই যে, অবধারিতভাবেই অপরিবর্তনযোগ্য হিসেবে লব্ধ বা বিশ্বাসকৃত সীমার মধ্যে।
ক্রমশ...
No comments:
Post a Comment