স্বপ্নগুলো হয়তো অধরা থেকে যাওয়াই ভালো, আজকাল মনে হয়। একটা নাটক আছে "আধে অধুরে", অনেক বছর আগে রিহার্সেল রুমে দিনের পর দিন ওই নাটকটার আঠারো উনিশ বছরের এক নারী চরিত্রে মহড়া দিয়ে গিয়েছিলাম, লোকবলের অভাবে (?!) নাটকটা আর মঞ্চস্থ করা হয়নি আমাদের। আফসোস নেই কোন এতে, কতো মহড়াই তো দিয়ে গেছি এই জীবনে, ঘরে, বাইরে। মাঝে মাঝে মনে হয়, যতো রকম মহড়া রয়েছে, সেই মহড়াগুলোই প্রকৃত সত্যি... পরিবেশন... কি আর বলবো, পরিবেশন শব্দটার মধ্যেই উত্তরটা যে পাওয়ার সে পাবে। সে যাকগে... নাটকটা তো মঞ্চস্থ হলো না আমাদের কিন্তু, অন্য আরো অনেক নাটকের মতোই, এর চরিত্রগুলো আমার মাথায় চেপে বসে রইলো। একটা অস্বস্তিকর, অস্বাস্থ্যকর, কাপুরুষসুলভ জাগতিক বাস্তবতা আমাকে তাড়া করে ফিরতে লাগলো। অসম্ভবতাময় সব না পাওয়াগুলো ম্লান করে দিতে লাগলো সেই সবকিছুকে যেগুলো প্রকৃতপক্ষে সম্ভব।
আমি, সত্যি বলতে কি, অতীত নিয়ে বাঁচিনা কখনোই। পীড়িত হই, চমৎকৃতও হই, কিন্তু বর্তমানের পরিচয়টাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সময়, গ্রহ, নক্ষত্র, অণু, পরমাণু, কিংবা প্রতিনিয়তের মৃদু কম্পন, সদা পরিবর্তনশীল বর্তমান, আমাদের পরিচয়ও তেমনই। মাথার ভেতর বোধ, সেও পরিবর্তনশীল। আমার এক বন্ধু কিছুদিন আগে, আমার অগ্রহনযোগ্য (?!) ক্রিয়াকলাপ ও চিন্তাভাবনার কিছুটা আভাস শুনে হয়তো একটু শ্লেষে সাথেই বলেছিল "Look, U r not a teenager anymore". হুম, আমার ভালোর জন্যই বলেছিল। দিনের শেষে বেশিরভাগ মানুষই শুভাকাঙ্খী, জানি, ওরা ভয় পায় অনিশ্চিত, অচেনা ভবিষ্যৎ এবং বর্তমানকেও।
আমি যখন খুব ছোট ছিলাম, খুব নাকি প্রশ্ন করে করে লোকেদের মাথা খেতাম, সবাই ভীষণ বিরক্ত হতো। তারপর কখন থেকে যে প্রশ্ন করা ছেড়ে দিয়েছি, মনে নেই। উত্তরগুলো কবে থেকে নিজেই খুঁজে নিতে শুরু করেছি, তাও মনে নেই। উত্তর খুঁজে না পেলে যে মন খারাপও করতে নেই, তা কখন বুঝলাম কে জানে। শুধু উত্তর নয়, কোন না পাওয়া নিয়েই আসলে মন খারাপ করতে নেই, এটাও ভেবেছি খুব ছোটবেলাতেই। কারো কারো মনে হতে পারে এই জীবনটা কি মারাত্মক সব ভুলে ভরা, কিন্তু ওই ভুলগুলো না হলে তো অন্য সব ভুল হতো, একটা খাঁটি জীবন ভুলে ভরাই তো হবে, তাই না? ছিমছাম, নিপাট, নিখুঁত, boring একটা জীবন কে চায় (?), আমার তো অন্তত চাই না। ওই যে বললাম মহড়ার কথা, কোথায় যেন, খুব খাঁটি, জীবনটাও তেমনি। আজ হয়তো আমার যথাযথ পরিণত আচরন ও চিন্তাভাবনা করা উচিত, যে বয়সের যে চাহিদা। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, অপরিণত বয়স আমার কখন ছিল তা তো আমি জানতামই না আর তার চেয়েও বড় কথা, অপরিনত বয়সে যে অপরিণত আচরন ও চিন্তাভাবনা করা যায়, তাও তো কেউ কোনদিন ঘুণাক্ষরেও জানতে দেয়নি!
সে যাকগে, কেউতো আর উত্তর দেবার চাকরি নেয়নি, আগ বাড়িয়ে কিছু জানানো তো দূর। পরিণত ও অপরিণত জ্ঞান, চিন্তা ও জীবনযাপনের ধাঁধাটা কিন্তু প্রত্যেকের জন্যই। আপাতত বেঁচে আছি, বেঁচে থাকি প্রতিদিন, একই সাথে মোহময় ও মোহহীণ কোন ইত্যবসরে। সারি সারি খাঁটি মহড়া দিয়ে যাই প্রতিদিন অগুনতি স্নায়ু কোষে কোষে। পরিণত না অপরিণত তার বিচার করতে চাইনা ভুলেও, ব্যাঁকা হোক...তবু আমার...
No comments:
Post a Comment