সেদিন কোভিড টেস্টের লাইনেই একজন লোক মরে গেল। করোনা মহামারির ভয়াবহতা ফিল্মে দেখা মহামারিগুলোর মতো ঠিক নয় যদিও তবু এই খবরটা পেয়ে একটা আতঙ্ক পেয়ে বসলো আমাকেও। মূহুর্তেই মনে হলো আমিও কভিড টেস্টের লাইনে দাঁড়িয়ে আছি আর ঠিক সামনে দাঁড়ানো লোকটা হঠাৎই ভীষণ শ্বাসকষ্টে কাতরাতে কাতরাতে মরে গেল চোখের সামনে। চারিদিকে মৃত্যুআতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লো বিদ্যুৎগতিতে, চারপাশে আমরা সবাই বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছি ঘটনাটা কিন্তু কেউ কাছে যাচ্ছিনা। কিছুক্ষণ পর পিপিই পরা কয়েকজন এলো আর মৃতদেহটা উঠিয়ে নিয়ে গেল দক্ষতার সাথে।
আমি মৃত্যুকে ঠিক ভয় পাইনা, মৃতদেরও না, কিন্তু মৃত্যু পথযাত্রীদের নিয়ে আমার বরাবরই ভয়। কাউকে চোখের সামনে মরতে দেখিনি, দেখতে চাইও না। চাইনা কেউ দিয়ে যাক তার শেষ শব্দ, শেষ দৃষ্টি, শেষ নিঃশ্বাস আমার স্মৃতিতে। বহুদিন আগে একটা কুকুরের মৃত্যুর কথা পড়ে এতোটাই বিমর্ষতা পেয়ে বসেছিল যে দস্তয়ভস্কির "Humiliated and Insulted" উপন্যাসটা আর পড়াই হলোনা। কুকুরটা তো মরেছিল, ওর নিঃস্ব, বৃদ্ধ, নিঃসঙ্গ মালিকটার কি হয়েছিল তারপর কে জানে?
আজ একটা খবরের শিরনাম হলো "নদীতে সাঁতার শিখতে গিয়ে তিন বোনের মৃত্যু"। এমন খবরে হাসবো না মন খারাপ করবো বুঝতে পারছি না। আমি যতদুর জানি যারা ভাল সাঁতার জানে তারাই কেবল নদীতে নামে। তিন বোনের বয়স দশ থেকে ষোল, বেড়াতে গিয়েছিল, খরস্রোতা নদীর তীরে আত্মীয়ের বাড়ি, নদীর রুপ ধরে মৃত্যু ডেকেছিল ওদের। মৃত্যু যখন ডাকে মানুষ ভীষণ বোকা হয়ে যায়। বেশ কিছু বছর আগে আমার পরিচিত এক যুবক কর্ণফুলি ব্রিজের ধারে তার সদ্য বিবাহিতা স্ত্রীকে নিয়ে পা ঝুলিয়ে বসেছিলেন, হঠাৎ ওনার স্ত্রী হড়কে নদীতে পড়ে গেলেন, উনিও হিতাহিত জ্ঞান ভুলে নদীতে ঝাঁপ দিলেন স্ত্রীকে বাঁচাতে। শাড়ি পরা মেয়েরা নাকি সহজে পানিতে ডোবেনা, সেবার প্রথম জেনেছিলাম। অনেক রাত পর্যন্ত আমরা নদীর ঘাটে ভীড় করেছিলাম, আশা ছিল যুবকটি হয়তো বেঁচে আছেন। ওনার কাছের মানুষরা খুব অবাক হয়ে ভাবছিলেন যে এতো সাবধানী ও বিচক্ষণ একজন মানুষ কি করে স্ত্রীকে নিয়ে ব্রিজের ধারে পা ঝুলিয়ে বসার কথা ভাবতে পারেন তাও আবার যখন ব্রিজটি হলো কর্ণফুলি নদীর ওপর। হুম, মৃত্যু ডেকেছিল সেদিন ওনাকে, আর যুবকটিও সাড়া দিয়েছিলেন, অবিবেচকের মতো, বোকার মতো...
No comments:
Post a Comment