Thursday, December 17, 2020

গল্প : এক : অবতার

বহু বছর আগে আমার তৎকালীন CRUSH এর সাথে প্রেম হয়ে যায় আমার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধুটির। বলা বাহুল‍্য একজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ হিসেবে আমার অতীত এবং বর্তমানে বেশকিছু অস্থায়ী এবং স্থায়ী CRUSH ছিলেন এবং আছেনও। তা যাই হোক, ওদের ঘনিয়ে ওঠা প্রেমের ব‍্যাপারে জানতে পেরে প্রথমে খুব কষ্ট পেলেও পরে ভালই লেগেছিল কারন আমার পাগলী বন্ধুটার একজন প্রেমিক সেইসময় প্রয়োজন ছিল আমার চেয়েও অনেক বেশি। শুধু একটাই আক্ষেপ ছিল যে আমার বন্ধুটা আর আমার জন‍্য সময়ই পেতোনা ঠিক করে। কিন্তু ধাক্কা খেয়েছিলাম যেদিন ও প্রথম আমাকে জানালো ওর সম্পর্কের কথা। আমি যখন ওকে প্রতিক্রিয়ায় জানালাম যে ব‍্যাপারটা বেশ ভালই হয়েছে তখন ও যেন খুব চিন্তায় পড়ে গিয়েছিল আর কেমন হতাশা নিয়েই বলেছিল "তোকে ঠকানো খুব কঠিন"। আমার সেদিন কিছুক্ষণ যেন মনে হলো পৃথিবীটা কাঁপছে আর এই ধ্বংস হতে চলা ছোট্ট পৃথিবীতে শেষবার ছুঁয়ে দেবার মতো কেউ নেই পাশে। আমার বয়স তখন মাত্র পনেরো কি ষোল  তাই হয়তো খুব বেশীই আবেগপ্রবণ ছিলাম। নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করে সেদিন ওকে শুধু বলেছিলাম "হ‍্যাঁ। তা হবে হয়তো। কারন আমি সবক্ষেত্রে ঠকার চিন্তা করি না।" সেদিন ছিল ওর সাথে আমার শেষ আত্মিক আলাপচারিতা। আরও বহুদিন আমাদের দেখা হতো ঘোরা হতো আড্ডায় গানে দুষ্টুমিতে মেতে উঠতাম আমরা কিন্তু বুঝতাম সেই পুরোনো প্রাণ আর নেই কোথাও। তারপর সে চলে গেলো অন‍্য দেশে উচ্চশিক্ষা নিতে। পার হলো আরও কিছুদিন। সেই অচেনা শহরের একলা জীবন, পরিবার, সামাজিক দিক থেকে প্রবল অসম সম্পর্ক (খুবই অদ্ভুত ব‍্যাপার হলো যে এর গড়ে ওঠার কারিগর হিসেবে ওর মা আমাকেই দায়ী করেন আজও) আর নিজের অবহেলিত ইচ্ছেগুলোর টানাপোড়েনের মাঝে একদিন হঠাৎ সে আমাকে লিখলো এক চিঠি। আমি খুব অবাক হলাম কারন চিঠি লেখার রীতি  শেষ হয়েছে আরও বহু আগেই আর আমাদের প্রজন্ম এর জন‍্য কম ভৎসনা তো পায় না। চিঠির উত্তর চিঠিতেই দিয়েছিলাম, শুধু বোঝাতে চেয়েছিলাম সে যেন শোনে শুধু নিজের মনের কথাই। একজন বন্ধু হিসেবে এর চেয়ে ভালো উপদেশ (তারচেয়েও বেশি হল 'মতামত') আর আমার মাথায় তখন আসে নি। এর কিছুদিন পর তার প্রেমিকটি আমাকে জানালো যে তাদের সম্পর্কটি ভাঙ্গার পথে আর অত‍্যন্ত বিদ্বেষপ্রসূত হয়ে জিজ্ঞেস করলো যে আমি তাকে (আমার বন্ধুকে) চিঠিতে কি এমন লিখেছিলাম। আমি উত্তর দিয়েছিলাম যে ওই চিঠিটা আমাদের অত‍্যন্ত ব‍্যাক্তিগত তবে আমার বন্ধু যদি তার প্রেমিককে চিঠিটা পড়তে দেয় আমার তাতে কোনো আপত্তি নেই। জানিনা ভুল করে হলেও ছেলেটি ঠিক কতোটা ঘৃণা করেছিল সেদিন আমাকে। ওই বন্ধুর প্রেমিক কিংবা বন্ধুর মায়ের ভুলগুলো ভাঙ্গাবার বেগ যৌক্তিকভাবেই কোনোদিন বোধ করিনি। আপনি হয়তো ভাবছেন যে এখন কেন বলছি এতোসব তবে? আমার লেখা পড়ে এখন যদি তারা সব জানতে পারে? তা হতেই পারে হয়তো তবে মূল বিচার্য বিষয়টি হলো এখানে আমি গল্প বলতে এসেছি মাত্র তার বেশী কিছু নয় বা তার বেশী কিছু ভাবাটাকে আপাতত গুরুত্ব দিচ্ছিনা। গল্প বলাটাই হলো এখানে মূখ‍্য বিষয়। আপনি আমাকে স্বার্থপর ভাবতে পারেন বা আমাকে কাঠগড়ায় দাঁড় করাতেও পারেন এই বলে যে কেনো আমি কেনো কোনো একটা গল্প বানিয়ে বলছি না, সৃষ্টিশীলদের তো তাই করা উচিত এবং কেন আমি শুধু নিজের জীবনের অভিজ্ঞতাই শুধু ভাগ করে নিতে চাই এবং এই কাজটি করতে গিয়ে অন‍্যদের ব‍্যক্তিগত বিষয়গুলো কি সামনে নিয়ে আসছি না? এর উত্তরে বলি ভালো করে পড়ে দেখুন আমি কিন্তু ওপরের তিনজন চরিত্রের কাউকেই  দোষারোপ করছি না আর গল্পের নাম করে সত‍্যিকারের চরিত্রদেরই টেনে এনেছি এবং বাস্তব ঘটনাই বলছি এমন নিশ্চয়তাও কিন্তু দিচ্ছিনা। আর তাছাড়া একটু ভেবে দেখুন তো আমরা প্রত‍্যেকেই যে অভিজ্ঞতার মধ‍্য দিয়ে জীবন পার করি আর অন‍্যদের বলে বেড়াই তার প্রতিটিই কি কমবেশি একেকটি বানানো গল্প নয়? আর তাই বলেই আমদের সমস্ত জীবন পার করি সমানুভুতিসম্পন্ন মানুষদের খোঁজে যাদের করুনাধারায় বিষ্ণু কিংবা বুদ্ধ কিংবা যিশু কিংবা  মোহাম্মদ কিংবা স্বয়ং নিজেরই অবতার খুঁজে পাবো আর আমাদের প্রতিটি আত্মা সেই আয়নায় নিজের নিষ্পাপ চেহারাটির অপরুপ সৌন্দর্য দেখতে দেখতে তার চুড়ান্ত শান্তি খুঁজে পাবে, বলুন এমনটাই কি না? আমি জানি আপনি এখনো তৃপ্ত নন বরং আমার উত্তরগুলোকে হয়তো নেহাত কোনো দুষ্টের ছলনাময় মায়াজাল কিংবা কোনো গভীর দুরভিসন্ধি ভেবে ক্ষেপে গিয়ে থাকতেও পারেন। আমি আপনাকে আপাতত শান্ত হতেই বলতে পারি। এই অনুগ্রহটুকুই এখন আমার আকাঙ্খিত কারন আমি গল্প বলতে চাই আর লক্ষ্যের বাইরে যাবার ইচ্ছে আমার এখন একেবারেই নেই। 

(ক্রমশ...)



1 comment:

  1. তোর লেখা টা পড়লাম সোনা
    বারবার পড়লাম , প্রথমে ভাবলাম তোকে পারসোনাল ম্যাসেজ করি, পরে ভাবলাম আর কত লুকিয়ে থাকব... তোকে সরি বলব কি বলব না বা কিই বা বলব ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না। আমি তোকে ঠকিয়েছি কি না আমার জানা নেই , আমার ভালবাসা টা কিন্তু মিথ্যা ছিল না, না তোর জন্য না রাসেল এর জন্য। রাসেল এর জন্য ভালবাসা, কষ্ট এক বিন্দু ও কমেনি, তোর জন্য ও না রে। আমার তখন সাহস ছিল না ঘুরে দাড়ানোর। আর তার মাসুল আমি এই ২০ বছর ধরে যা দিয়েছি, দিয়ে চলেছি ... যদি তোকে ঠকিয়ে থাকি, ধরে নে সুদে আসলে তার পাই পাই হিসাব পেয়ে গেছি।
    তোর চিঠি টা আজও যত্ন করে আমার কাছে রাখা আছে । আর বলতে দ্বিধা নেই , ওই চিঠিটার জন্যই আমি বাকি পথ টা লড়ে যেতে পেরেছি।
    তুই আমাকে ক্ষমা করে দিস সোনা। তোকে কেউ আর দোষী ভাবে না রে, কি এক প্রেম করলাম, যে আমাকে নিজের ঘর বাড়ি দেশ থেকে বের করে দতে হল। আমার এই জার্নিটা কিন্তু মনে রাখার মত। অনেক অনেক দোয়া করি, তুই ভাল থাকিস।

    ReplyDelete

English Translation of Bangla Folk Song: Fakir Lalon Shah; চিরদিন পুষলাম এক অচিন পাখি; Forever I Nurtured a Mysterious Bird

 Forever I Nurtured a Mysterious Bird Forever I nurtured a mysterious bird, which never discloses its identity. For this grief, my eyes ...