মায়ার ঘুম ভাঙলো একটা গুলির শব্দে। ঘুম ভেঙে পাশ ফিরতেই একরাশ উজ্জ্বল আলো এসে চোখ ধাঁধিয়ে দিল আর ধারালো ছুরির মতো মাথাটা এফোঁড় ওফোঁড় করে দিল। চোখে আর মাথায় প্রচন্ড যন্ত্রণা, কিছু একটা ভাবতে চেষ্টা করলো কিছুক্ষণ কিন্তু তাও পারলো না। মাথার যন্ত্রণার সাথে নীল ছাদ দেয়াল আর ফাঁকা আলো... আর কিছু পড়ে নিতে পারলো না আপাতত। কিছু না ভেবে আবার দেয়ালের দিকেই পাশ ফিরলো তারপর দুচোখ বন্ধ করে পড়ে রইলো কিছুক্ষণ আরো। আস্তে আস্তে কিছু শব্দ ভেসে আসতে লাগলো কানে। কয়েকজন লোকের উচ্ছসিত হাসির শব্দ আর কন্ঠস্বর... "Dude! Its gonna be our day! Dig some under u nut! Its a big day afterall"...তারপর আরেকটা কন্ঠস্বর বললো "U r crazy Ron... U r a fuckin demon... m out of all these... rinse on ya"...অন্য আরো একটা কন্ঠস্বর মধ্যস্ততার গলায় বলে উঠলো "Guyz... guyz... stop these pal... it ain't gonna be da way right... U know what i mean... they r after us... they'll be... ever..." চোখ বন্ধ অবস্থাতেই বাইরের কন্ঠস্বরগুলো শুনতে শুনতে আস্তে আস্তে চোখ মেললো মায়া। একটা নীল দেয়াল চোখের সামনে। দেয়ালটা নীল হলো কি করে? ভাবতে ভাবতেই খেয়াল করলো এই নীল দেয়ালটা ঠিক যেন দেয়াল নয়... কেমন টানটান হয়ে থাকা মোটা পর্দার মতো... চিন্তাশক্তিহীন মাথাটা নিয়ে চকিতেই বুঝতে পারলো সে তার ঘরে নয়, আছে একটা তাঁবুর ভেতর। বুঝতে পেরেই মাথাটা এলোমেলো লাগতে শুরু করলো আর কানে আর কিচ্ছু শুনতে পারছিল না। ভারি মাথা আর জড় শরীরটাকে অনেক সাধ্য সাধনা করে দাঁড় করালো তারপর পা টেনে টেনে উজ্জ্বল আলোটার মুখে গিয়ে দাঁড়ালো। প্রখর সূর্যটা ওর দুচোখ যেন অন্ধই করে দিল প্রায়। ধুধু একটা দৃশ্যকে সামনে রেখে কিছু বোঝার কোন চেষ্টা না করেই শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে যত জোরে সম্ভব চিৎকার করতে শুরু করলো মায়া। তাঁবুর বাইরের তিনটি কন্ঠস্বরই নিজেদের কথা থামিয়ে চমকে তাকালো তাঁবুর প্রবেশ দ্বারের দিকে আর দেখলো একটা বিপর্যস্ত শিল্পকর্মই, ওপরের উন্মুক্ত রৌদ্রজ্জল আকাশ, পেছনে অপার সবুজনীল পাহাড়ি দৃশ্যপটে জ্ঞানশূণ্য উন্মাদের মতো তাঁবুর ঠিক বাইরে এসে দাঁড়িয়েছে মায়া, চোখে সময়হীন দৃষ্টিহীন অস্তিত্বের আদিমতম আতংক নিয়ে গগনবিদারী চিৎকার করে যাচ্ছে সমানে, কোমর পর্যন্ত সোজা নেমে আসা ঈশৎ এলোমেলো কদাচ সোনালি উদ্ভাসিত কালো চুল ও খেদহীন বাদামি ত্বকের আবেদনময়ী নারী শরীরে একটা সাদা বয়েস টিশার্ট মাত্র আর তার নিচে ডান উরু বেয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে মাটির দিকে।
তিনটি কন্ঠস্বরই এমন আকস্মিক ক্ষরণধরানো দৃশ্যে ও চিৎকারে হতভম্ব হয়ে গেল প্রথমে তারপর ধুসর টিশার্ট ও গাঢ় জলপাই বেগি প্যান্টস পরা আর ঘাড়ে বিপজ্জনক সংকেতের ট্যাট্যু করা অত্যন্ত ছোট করে ছাটা চুলের এক যুবক ঢুকে পড়লো দৃশ্যপটে আর ছুটে গিয়ে মায়াকে জাপটে ধরে ওর মুখে হাতচাপা দিল ক্ষিপ্রতার সাথে। মায়া উন্মাদ দৃষ্টিতে ঝাপটাঝাপটি করে কিছুক্ষণ কিন্তু একটু শান্ত হয়ে যেতেও লাগলো কি কারনে যেন, তারপর আরেকটু শান্ত হলে ধুসর টিশার্ট পরা যুবক মায়ার মুখটা নিজের বুকে নিয়ে মাথায় অন্তত বিশ সেকেন্ডের মতো হাত বোলালো মুখে ঠিক বাচ্চাদের শান্ত করার কিছু শব্দ করতে করতে। মায়া তখনো জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে ও ছাড়ছে। তারপর যুবকটা ওকে আচমকাই ছেড়ে দিল আর ঢুকে পড়লো তাঁবুর ভেতর আর ভেতর থেকেই চেঁচিয়ে কি বলছিল মায়ার কানে তার কিছুই ঢুকছিল না। ওর চোখ থেকে কয়েক ফোঁটা জল নেমে এলো শুধু ততোক্ষণে। আরো কিছুক্ষণ পর তাঁবুর ভেতর থেকে বেরিয়ে এলো ধুসর টিশার্ট পরা যুবক আর মায়ার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে স্যানিটারি ন্যাপকিনের প্যাকটা এগিয়ে দিল ওর দিকে। এতক্ষণে মায়া যেন একটু পরিষ্কার দেখতে পেল কিছু, গাঢ় বাদামি গভীর আশ্বাসভরা চোখ আর খাড়া নাকওয়ালা শক্ত মুখে খোঁচা খাঁচা দুদিনের না কামানো দাড়িগোঁফের মাঝে পাতলা রুক্ষ ফাটা ফাটা ঠোঁটজোড়া একটুও না নড়েই কিছু একটা বললো তারপর নেমে এসে একটা শুষ্ক কিন্তু উষ্ণ চুমু খেল মায়ার ঠোঁটে। গরম ঠান্ডা মেশানো সামনের নীল লেক পেরিয়ে আসা উপত্যকার হাওয়াটা বয়ে গেল ওদের কান ও চুল স্পর্শ করে। গরম নিঃশ্বাসে অন্তর্গত পুরুষালি গন্ধটা ভীষন চেনা মনে হল ওর আর তাই হয়তো চোখ বন্ধ করে অন্য আরেকটা দৃশ্যপটে ঢুকে পড়লো মায়া।
No comments:
Post a Comment