আমাদের ন্যাড়া বাগানের ন্যাড়া আমগাছের নিচে শ্রীচৈতন্য অচেতন হয়ে পড়ে ছিল। আমাদের মালি কেষ্ট (আমরা ডাকি কলির কেষ্টা) দেখতে পেয়েছিল প্রথম। প্রথমে চোর ভেবে আচ্ছা করে গরুর দড়ি, যা ব্যবহার করা হয়েছিল গত বছর কোরবানির সময় আর রাখা ছিল বাগানের কোনে একটা ঢাকা দেয়া বালতিতে, দিয়ে বেঁধেছিল বেচারাকে। পরে খবর দিয়েছিল আমার বাবাকে। তা বাবা এসেও প্রথমে চিনতে তো পারেন নি, কিন্তু একজন অচেতন সাধু গোছের লোককে গরুর দড়ি দিয়ে বাঁধা যে ঘোরতর অন্যায় হয়েছে তা বুঝতে পেরেছিলেন। কে বলে কলিযুগে ন্যায়-অন্যায় জ্ঞাণ লোপ পেয়ে যাবে? বলা বাহুল্য আমিও ছুটে গেছিলাম চোর দেখতে। কিন্তু দেখে তো চক্ষু চড়কগাছ এমন সোনার মতোন গায়ের রঙ, সুপারমডেলের মতো নাকমুখের গড়ন আর গেরুয়া ভুসন যার সে চোর এমনটা আমি নিজের চোখে চুরি করতে দেখলেও বিশ্বাস করতে চাইতাম না। সে যাই হোক গরুর দড়ি খুলে শ্রীচৈতন্যকে মুক্ত করা হলো এবং পানি ছিটিয়ে হালকা পলকা চড়িয়ে বহু সাধ্যসাধনা করে তার জ্ঞানও ফেরানো হলো। জ্ঞাণ ফিরলেও বোঝা গেল কথা বলবার মতো অবস্থায় লোকটা মোটেও নেই, চোখদুটো ইটের ভাটার মতো লাল, নিঃশ্বাস অনিয়মিত, কিছু একটা বলতেও চেষ্টা করেছে বেচারা কয়েকবার কিন্তু গলা দিয়ে ঘড়ঘড় শব্দ ছাড়া আর কিছু বেরোয়নি। বাবা বললেন ইমিডিয়েট হসপিটালে শিফট করবার কথা। কিন্তু কলির কেষ্টা মহাবিজ্ঞের মতো এবং চরম অসহিষ্ণুর মতোও বললো "লেবু পানি স্যার...এর ওষুদ হইলো গেলাস গেলাস লেবুপানি... আমি কইতেসি স্যার এ হইলো নেশা ভাঙের কেস। চামে বেশি খাইয়া ফালাইসে তাই এই দশা। আমনে আমারে আধঘন্টা টাইম দেন, দেখেন ক্যামনে ঠিক করি এইডারে।" কোভিডের সময়, সারা দেশে কড়া লকডাউন, রাস্তাঘাট প্রায় ফাঁকা আর আমাদের নবাবজাদা ড্রাইভার মোহাম্মদ এই সময়ে অনির্দিষ্টকালের ছুটি নিয়ে গ্রামে বসে তার দু'দুটো বউ নিয়ে মাস্তি করছে, তাই অগত্যা আমরা কলির কেষ্টার হাতেই একে ঠিক করবার দায়িত্ব দিলাম আপাতত।
শ্রীচতন্যের ঠিকঠাক জ্ঞান ফিরতে সময় লাগবে। ততক্ষণে এই কলির কেষ্টার সম্পর্কে কিছু ধারনা দেয়া যাক। এই চৈতন্যের আগমনের দিন পনেরো আগে আচমকা ঘূর্ণিঝড়ের তোড়ে আমাদের সাধের বাগানটা একেবারে তছনছ হয়ে গিয়েছিল। আমরা ঝড়ের পর বৃষ্টি কমে আসার পরপর বেশ আনন্দ করেই প্রায় মাটিতে নেমে আসা ডালগুলোর নিচ থেকে কাঁচা আম কুড়োনোর সুখ পেয়েছিলাম পুরোপুরি আলো ফুটবার আগেই। কিন্তু আলো ফুটতেই দেখলাম সর্বনাশ। বাগানের বড় গাছগুলো প্রায় সব একেবারে মাঝখান থেকে ভেঙ্গে গেছে আর মোটামুটি পুরো বাগানটাই একটা দোমড়ানো মোচড়ানো যুদ্ধপরবর্তী বদ্ধভুমিতে পরিনত হয়েছে। আমার মা অনেকক্ষণ কাঁদলেনও সখের বাগানটার জন্য। আমরা দুবোন বুঝলাম না ঠিক কি করবো কারন হয়তো অধিক শোকে স্তব্ধ হয়ে পড়েছিলাম। এমনিতেই লকডাউন চলছে তাই ঘরে বন্দি আর ঝড় শুরু হবার আঠারো ঘন্টা আগে থেকে ইলেকট্রিক লাইন বন্ধ। ইলেকট্রিসিটি নেই, ইন্টারনেট নেই, পাওয়ারব্যাংকের চার্জও প্রায় শেষ, সারাক্ষণ অনলাইন থাকা আমাদের দুবোনের অবস্থা দাঁড়ালো ঠিক ঠুঁটো জগন্নাথের মতো। আর বাবা গালে হাত দিয়ে বসে এই সব নিয়ে মহা চিন্তায় পড়ে গেলেন। অবস্থা ক্রমশ আরো খারাপ হলো কারন গ্যাসের লাইন তো আগের দিন থেকেই বন্ধ আর এখন পানির টাংকিও খালি হবার পথে। সে যাই হোক এই তল্লাটে আমার বাবার শুভাকাঙ্খীর অভাব নেই তাই ইলেকট্রিসিটি পাওয়া না গেলেও কেরোসিনের চুলা, দু'গ্যালন কেরোসিন আর পানির ব্যাবস্থাও হয়ে গেল খুব তাড়াতাড়ি। আমরা সবাই মিলে কোমর বেঁধে ছাদ উঠোন সহ সারা বাড়ি পরিষ্কার করলাম। কিন্তু ঝড়ে বিদ্ধস্ত বাগানটা মাড়াতে কেউ সাহস করলাম না। দুদিন এভাবেই কাটলো, তৃতীয় দিন একদম ভোরেভোরে কলির কেষ্টার আগমন ঘটলো আমাদের প্রধান ফটকে। গায়ে চকরাবকরা হাওয়াই শার্ট, রঙচটা জিন্সের প্যান্ট, মাঝারি উচ্চতা, বাঁধানো শরীর ও মুখের গড়ন, চকচকে মেহগনি গায়ের রঙ, ব্যাকব্রাশ করা পরিপাটি চুল, ধুরন্ধর চোখের দৃষ্টি, কাঁধে জলপাই রঙের একটা গাট্টিমতন ব্যাগ আর হাতে একটা আট'ন বছরে ছটফটে রোগাপটকা ছেলে, চেহারায় একেবারেই বামন কেষ্টা। তা কেষ্টা এসে ফরিয়াদ করলো আমার বাবার কাছে যে সে এসেছে গ্রাম থেকে, ঝড়ে তার ফসল সব পুড়ে গেছে, ঘরের চালও উড়ে গেছে, এমনিতেই এই করোনা মহামারিতে তার করুন অবস্থা আর ঝড়ের তান্ডবে এবার মরতেই বসেছে। তাই বহু কষ্টে অনেক বুদ্ধি খাটিয়ে মা মরা একমাত্র ছেলেকে হাতে করে শহরে এসেছে একটা কাজের খোঁজে। বাবা বললেন এমন আচমকা অজানা অচেনা লোককে কি করে কাজ দেবেন। কিন্তু কেষ্টা নাছোড়বান্দা, সে পকেট থেকে তার স্মার্টকার্ডটা বের করে এগিয়ে দিল বাবার দিকে বললো "স্যার, এইডা কোন কথা হইলো? আমার লগে তো স্মার্টকার্ড আসে। একটা কাম দ্যান স্যার। যে কোন কাম। দয়া করেন। আমি কইলাম সিক্স পর্যন্ত পড়সি।" এমন আঁকুতি শুনে বাবার মন গলে গেল। তারপরও ওকে বাইরেই দাঁড় করিয়ে রেখে ভেতরে মায়ের সাথে আলাপ করতে গেলেন। পরে ফিরে এসে বললেন "তা, তুমি বাগান করতে জানো? মানে মালির কাজ করতে পারবে?" কেষ্টা প্রবল আত্মবিশ্বাসের সাথে জবাব দিল "গেরামের ব্যাডা আমি। পারমু না ক্যান? নিশ্চিত পারমু।" এমন দুর্দিনে কাজটা পেয়ে বাপ ব্যাটার ধুরন্ধর চোখগুলোও আনন্দে চিকচিক করে উঠলো। ঠিক হলো ওরা বাপব্যাটায় আউটহাউসে থাকবে আর আজ থেকেই বাগানে কাজ করতে শুরু করবে। বেতনের হিসেব কাজ দেখে পরে ঠিক করা হবে।
কলির কেষ্টার অকাল বোধনে আমাদের রাবেয়া খালা সবচেয়ে বেশি চিন্তিত এবং সেই সাথে অসন্তুষ্টও হলেন। গত তিন বছর ধরে সে আমাদের বাড়ি কাজ করছে, বহুবার চাইবার পরও তাকে আউটহাউজে একটা ঘর দেয়া হয়নি যাতে করে সে তার ছেলেকে নিয়ে থাকতে পারে। তার অবশ্য যৌক্তিক কারন আছে আর তা হলো রাবেয়া খালার ছেলেটি আস্ত একটা নেশাখোর। আর তাছাড়া এই বছর মহামারির অযুহাতে খালার বেতনটাও বাড়েনি অথচ বাবা-মা একজন নতুন লোককে কাজে নিয়োগ করলেন। কলির কেষ্টাকে প্রথম দর্শনেই অপছন্দ হওয়ায় আর কেউ না হোক, আমরা দুবোন ঠিক বুঝলাম রাবেয়া খালার কষ্টটা। আমার ছোট বোন সানুতো বলেই বসলো "এটা কি হলো রোমাপু? বাবা-মা কি শেষে পাগল হয়ে গেছে? এই লোকটা একটা মহা চালবাজ দেখে নিও। বিরাট কোন প্ল্যান নিয়ে এবাড়িতে এসে ঢুকেছে। বাচ্চাটাকেও দেখেছো? আস্ত একটা বদমাসের মতো চোখ মুখ দেখলেই তো ইচ্ছা করে কষে একটা চড় দিই।" সে যাকগে, সমস্যা হলো আমরা কলির কেষ্টাকে যতোটা ধুরন্ধর মনে করেছিলাম সে দেখা গেলো তার চেয়েও ধুরন্ধর। বাগান পরিষ্কারের কাজ পেয়ে সে মোটেও বিচলিত হলোনা, উল্টো বললো "কোন ব্যাপার না স্যার, আপনে কোন রকম কোন টেনশানই নিবেন না। আমারে কাইলকার দিন পর্যন্ত টাইম দেন। পুরা বাগান সাফ করে দিচ্ছি। অল্প কিছু খরচপাতি লাগে... সেটা তেমন বড় কিছু না। সবার আগে বাগান সাফ হওয়া নিয়া কথা।" এই বলে কেষ্টা বেরিয়ে পড়লো আর আধঘন্টার মধ্যে তিনজন গাট্টাগোট্টা দিনমজুর নিয়ে হাজির হলো। কেষ্টা বলতে গেলে কোন কাজেই হাত লাগালোনা। দিনমজুর তিনটে সমানে খেটে গেল। সব বড় ছোট ভাঙ্গা ডালগুলো জড়ো করলো, তারপর পুরো বাগান এমনই পরিষ্কার করলো যে ডালভাঙা প্রায় ন্যাড়া কয়েকটা বড় ফল ও ফুলের গাছ, স্টিলের শক্তপোক্ত দোলনাটা আর কিছু ঘাস ছাড়া আর কিছুই পড়ে রইলো না। যে ছোট ছোট গাছ আর লতাগুলো অক্ষত ছিল সেগুলো পর্যন্ত গোড়া থেকে তুলে ফেললো ওরা। মুখে দু'দিন বললেও তিনদিন টানা কাজ শেষে একটা ভ্যান এলো আর কেষ্টার তত্বাবধানে সমস্ত ডালপালা লাকড়ি জঙ্গল ভ্যানে তুললো মজুর তিনটে। একটা পান খেয়ে খেয়ে দাঁত ও জিভ কালো হয়ে যাওয়া লোকের কাছ থেকে গুনে গুনে পুরো দু'হাজার টাকা নিল বিস্তর আমোদে দাঁত ক্যালাতে ক্যালাতে। একটা টাকাও তো বাবার হাতে দিলো না বরং একেবারে পাঁচ হাজার টাকার বিল করে বসলো তিনজনের মজুরি বাবদ। এই আকালে সারাক্ষণ বাড়িতে থেকে এমন তছনছ একটা বাগান দেখতে থাকা একটা বাড়তি নির্যাতনের মতো, তাই বাবা একরকম খুশি হয়েই টাকাটা দিয়ে দিলেন। আমরা পুরো ঘটনাটাই চোখে চোখে রাখছিলাম, দেখলাম কেষ্টা মজুর তিনটেকে প্রথমে ছত্রিশশো টাকা দিল, মজুর তিনটে যখন কিছুতেই মানছেনা তখন আরো চারশো টাকা দিয়ে ওদের বিদায় করলো। আর নিজে পুরো এক হাজার টাকা মেরে দিল। আমরা দুবোন মালিগিরির নামে এমন ঠিকাদারি কার্যকলাপ চোখের সামনে দেখে পুরো হাঁ হয়ে গেলাম। রাবেয়া খালা রাগে গজরাতে গজরাতে মায়ের জাপানি কাপ সেটের একটা কাপ আর একটা আটপৌরে গ্লাস ভেঙে ফেললো, এমনকি সেদিনের মতো ছাদ ঝাঁট দিতেও অস্বিকৃতি জানালো। বাগান পরিষ্কারের নামে বাগান ন্যাড়া করে ফেলায় মা নির্বাক হয়ে গেলেন প্রথমে তারপর চ্যাঁচিয়ে বাড়ি মাথায় করলেন। কিন্তু বাবা আর কেষ্টা মিলে মাকে বোঝালো যে আরো সুন্দর বাগান তৈরী করা হবে আর এমনিতেও সামনে বর্ষার মৌসুম, নতুন বাগান তরতর করে বেড়ে উঠবে। মা নিরুপায় হয়ে শান্ত হলেন। কিন্তু আমাদের মন কিছুতেই শান্ত হলো না। মনে হলো এই কেষ্টা বাগান টাগানের কিচ্ছুতো পারেই না বরং আমাদের বাগানটাকে ন্যাড়া বানিয়ে, পুরো তিন হাজার টাকা মেরে দিয়ে এখন নিশ্চিন্তে অন্ন ধ্বংসের তালে আছে। হলোও তাই সেদিনের পর থেকে কোন ফুল গাছতো দূর এক মুঠো ঘাসও বিছানো হয়নি এই বাগানে। উপরন্তু দিন তিনেক বাদে কি এক অদ্ভুত কারনে রাবেয়া খালার রাগ পড়ে গেলো আর সে সকাল বিকাল কেষ্টাকে চা খেতেও ডাকতে লাগলো।
শ্রীচৈতন্যকে সেই যে রাবেয়া খালা আর কেষ্টা চ্যাং দোলা করে আউটহাউজে নিয়ে গেছে তারপর থেকে এখন অব্দি কোন খবর পাওয়া যায়নি। মনে হচ্ছে ওর ঠিক হতে আরো একটু সময় লাগবে। ততোক্ষণে কেষ্টার ছেলের কথা এবার একটু বলে নিই। কেষ্টার ছেলে দেখতে পুরোই কেষ্টার মতো, ভীষণ ছটফটেও কিন্তু দেখা গেল সে মোটেও অলস অকর্মন্য ফাঁকিবাজ বা ধাপ্পাবাজ নয়। ওর নাম হলো বাবু, বললো জন্মানোর পর থেকে ওর মা ওকে বাবু বলে ডাকতে ডাকতে ওর নাম 'বাবু'ই হয়ে গেছে। ক্লাস টু পর্যন্ত পড়েছে। থ্রিতেও প্রমোশন পেয়েছিল ভালো রেজাল্ট করে, ক্লাসও করছিল কিন্তু করোনার কারনে একবছরের বেশি সময় ধরে পড়াশুনা বন্ধ। আগের পড়ালেখাও সে প্রায় ভুলেই গেছে গত এক বছরে। এই মারীর সময়টা সে আর গ্রামের অন্য ছেলেরা খেলেই কাটিয়ে দিয়েছে। আরও জানালো বছর চারেক আগে ওর মা পালিয়ে গেছে এক শহরে থাকা নাগরের সাথে। কেষ্টা সকলকে বলে যে ওর মা মরে গেছে ভুতে ধরায় গলায় রক্ত উঠে কিন্তু এ ডাহা মিথ্যে কথা। আমাদের সব শুনে সত্যিই ভীষণ মন খারাপ হলো বেচারার জন্য, ভাবলাম ওর মা ওকে ফেলে চলে না গিয়ে মরে গেলেই বরং ভাল ছিল। তা এই বাবু আসার ক'দিন পর থেকেই মায়ের আঁচলে আঁচলে ঘুরঘুর করতে লাগলো আর সমস্ত ফুট ফরমাসও খাটতে লাগলো।
আমরা দুবোন উদাস হয়ে দোলনায় বসে আছি আর আগডুম বাগডুম ভাবছি তখনই রাবেয়া খালা ছুটতে ছুটতে এলো আর হাঁপাতে হাঁপাতে বলতে লাগলো "হেই ব্যাডার কতা ফুডসে গো আফুরা, তাড়াতাড়ি আসেন। কি কইতাসে কিসসু বুজন যায় না। মনে অয় ইংরাজী কইতাসে।" আমরা এমনিতেই উৎসুক হয়েছিলাম আর এমন খবর শুনে ছুটে গেলাম আউট হাউজে। গিয়ে দেখলাম বাবা মা এমন কি বাবুও পৌঁছে গেছে আমাদের আগে। গিয়ে বুঝলাম আমরা খবরটা বেশ দেরিতেই পেয়েছি। কারন শ্রীচৈতন্য তার কথাবার্তা শেষ করে ততোক্ষণে ঘুমিয়ে পড়েছে। তবে যা শুনলাম অন্যদের কাছে তা হলো এ মোটেও শ্রীচৈতন্য নয়, ওর নাম হলো স্যান্ডি। এখানে কি করে এলো কিছুতেই বুঝতে পারছেনা এখন পর্যন্ত। গতরাতে সে ঘর থেকে একলা বেরিয়েছিল হাঁটতে, তারপর আর কিছু মনে পড়ছেনা। আমরা দুবোন পুরো ক্লাইমেক্সটা মিস হয়ে যাওয়ায় হতাস হয়ে মুখ ঝুলিয়ে নিজেদের ঘরে ফিরে এলাম। এই করোনা মহামারিতে আমরা সত্যি বলতে কি ভীষণ ভিখিরি মতোন হয়ে গেছি। ক্লাস নেই, হ্যাঙ্গআউট নেই, শপিং নেই বা এমনি এমনি ঘুরে বেড়ানোও নেই। কতো আর ভালো লাগে সারাদিন বাবা মায়ের চোখের সামনে থাকতে আর অপার্থিব দুনিয়ায় মুখ গুঁজে থাকতে। সারাক্ষণ ঘরে থাকতে থাকতে আমরা কেমন ত্যানা প্যাঁচানো বাঙালি হয়ে যাচ্ছি দিনদিন। তবু আমরা শেষ পর্যন্ত ভাবলাম কিছু একটা চমকপ্রদ ব্যাপার ঠিক এবার ঘটতে চলেছে।
সন্ধ্যে গড়িয়ে রাত নামলো তবু সেই শ্রীচৈতন্যর মতো দেখতে স্যান্ডির ঘুম ভাঙলো না। পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠতেই বাবু জানালো গতরাতে দুটোর দিকে স্যান্ডির ঘুম ভেঙেছিল এবং তখন তাকে খাবার দাবার খাওয়ানো হয়েছে। খেয়ে দেয়ে সে আবার ঘুমিয়ে পড়েছিল। সকাল ন'টায় ওর ঘুম ভেঙেছে আর চা নাশতা খেয়ে এখন সে বাগানে হাঁটছে। শুনেই ছুটে গেলাম দেখতে কিন্তু আমরা যে খুব উৎসুক হয়ে আছি এটা যেনো ছোকরাটা বুঝতে না পারে তার জন্য পেছনের দরজায় এসে থেমে গেলাম আর দূর থেকে দেখতে লাগলাম। কিন্তু দেখে তো আমরা রীতিমতো তব্দা খেয়ে গেলাম কারন ছোকরা পরে আছে বাবার সাদা পাজামা পাঞ্জাবি, আর যতোটা গতকাল মনে হয়েছিল এ তার চেয়েও সুদর্শন। ছ'ফুটের কাছাকাছি লম্বা, দৃপ্ত সুঠাম গড়ন, সাদা পোষাকে তার রুপ যেনো ঝরে ঝরে পড়ছে এই তেঁতে উঠতে থাকা সকালের রোদে আর সে তাকিয়ে আছে উদাস হয়ে আকাশেরই দিকে। আমরা দুবোন বেশ কিছুক্ষণ হাঁ হয়ে তাকিয়ে থেকে পরে একে অন্যের মুখ চাওয়াচাওয়ি করে শেষে ছুটে নিজেদের ঘরেই ফিরে গেলাম।
চলবে...
No comments:
Post a Comment