ছোটবেলায় একটা খুব মজার ব্যাপার মাঝেমাঝে হতো, যখনই কিছু খুব পছন্দ হয়ে যেতো বা হয়তো কিছু একটা কিনে খেতেই ইচ্ছে করতো, এখানে ওখানে টাকা খুঁজে পেতাম। হয়তো ব্যাগের কোন একটা পকেটে কিংবা কোন বইয়ের খাঁজে, এলোমেলো ড্রয়ারের টুকিটাকি জিনিসের মধ্যে। আমার চাহিদাগুলো খুব ছোটছোটই থাকতো আর টাকার নোটগুলোও, তারপরও ওই মূহুর্তগুলো যেন যাদুর মতোই চমকপ্রদ ছিল, এতো বছর পর তা আসলে ঠিক বোঝাতে পারবো না। কলেজে আমার এক বন্ধু আমাকে কি যেন বুঝে বলেছিল যে আমার নাকি কোনদিন আর যাই হোক টাকার অভাব হবে না, বেচারির ওপর শুধু শুধু সেদিন খুব চটে গিয়েছিলাম। টাকাওয়ালা সাহেবরা আর সাহেবদের সু এবং কু পুত্র ও কন্যারা কাছাকাছিই থাকে সমাজে আর ওরা কিনতে চায় সবকিছু... স....বকিছুই, তাও দেখছি ছোট বেলা থেকেই। কলেজে পড়বার সময় কার যেন এক গায়ে হলুদে গিয়ে দেখলাম গলা বসে যাওয়ার পরও তারস্বরে উঁচু স্কেলে একটা কমবয়সি মেয়ে শীতের রাতে কোন গরম পোশাক ছাড়াই গান গাইতে বাধ্য হচ্ছে, যখন তার সুধী দর্শক শ্রোতাদের বেশিরভাগই ব্যস্ত নিজেদের মধ্যে অরুচিকর নাচন কোদনে, কথা বলায়, ছবি তোলায়, হাহা হিহি আর খাওয়া দাওয়ায়। তারপরের দৃশ্য আরও ভয়ংকর, এক প্রায় মাঝবয়সি লোভী চোখের লোক স্টেজে উঠে মেয়েটাকে কচকচে কিছু টাকা বখশিস দিল। ঈশ্বরের কাছে প্রার্থণা করলাম কখনো যেন এমন দিন না আসে আমার জীবনে যে গান গেয়ে পেট চালাতে হয় এই বাংলাদেশে।
সে যাই হোক বিবিএ সেভেনথ সেমেস্টারে যখন পড়ি, এক মামা বললো, "শোন, বিবিএ শেষ করে ঢাকা চলে আসবি। আমাদের এখানে জয়েন করবি, বেতন শুরুতে চল্লিশ হাজার পাবি, গাড়ি পাবি, থাকার ব্যাবস্থাও হয়ে যাবে, তোর কাজ হবে বিদেশি ক্লায়েন্ট হ্যান্ডেল করা। আমার মনে হয় তুই এটা ভালো পারবি। সাইট ঘুরে দেখাবি, ওদেরকে টাইম দিবি।" আমি ভাবতে বসলাম আমার মেজর ফিনেন্স, মার্কেটিং জব করার মতো চটপটে তো নই আর তাছাড়া বিদেশি ক্লায়েন্ট যদি বিরক্তিকর কেউ হয় কিংবা যদি একটু চরিত্রহীণ গোছেরই হয়, তখন কি করবো??? আমি তখন নিতান্তই ছেলেমানুষ ছিলাম। এখন তাই ভাবি। কারন এই ঘটনার চার-পাঁচ বছর পর আমার প্রথম চাকরি পাই যার প্রারম্ভিক বেতন ছিল চল্লিশ হাজার আর এছাড়া অন্য কোন সুযোগসুবিধা ছিল না। তবে আমি চাকরিটা যেদিন পাই সেদিন ছিল জীবনের অন্যতম আনন্দের দিন আর যতদিন করেছি কাজটা আমার খুব পছন্দেরই ছিল। ওই বিবিএ পড়বার সময় খুব ক্লাস মিস দিতাম আর মোবাইল ফোনটাও প্রায়ই সুইচড অফ থাকতো কেন যেন। একদিন এক শিক্ষক বললেন "ক্লাসে আসো না, তোমাকে খুঁজে পাওয়া যায় না, স্টক এক্সচেঞ্জে দুজন ফ্রেশার নিয়েছি, তোমাকে তাই খুঁজছিলাম।"
তখন ভাবতাম না এইসব নিয়ে, আজকাল কাজকর্ম নেই, কাজকর্মে মনও নেই, অন্যসব ভাবনার সাথে সাথে এইসবও ভাবি আনমনে। আর মনে মনে বলি, আরেব্বাস!!! আমি শালা শুধু শুধু 'A life in ART, a life in ART' চেয়ে চেয়ে হেঁদিয়ে মরছি... যেটা যার জীবনের গন্তব্য নয় সেটা নিয়ে সময় নষ্ট করে কি হবে... আমার অস্তিত্ব শিল্পকে বিকর্ষণ করে আর আকর্ষণ করে টাকা... তবে আমার তো টাকার পেছনেই ছোটা উচিত। এইতো কিছু বছর আগে শখ করে সেকেন্ডারি শেয়ার মার্কেটে কিছু টাকা ইনভেস্ট করেছিলাম। আমার বড় ভাইয়ের বহু লক্ষ টাকার ইনভেস্টমেন্টের মার্কেট ভ্যালু যখন অর্ধেকের নিচে নেমে গেলো আর এক দূর্বল মনের প্রতিবেশি যখন টাকার শোকে আত্মহত্যাই করলো, আমার ইনভেস্টমেন্টের বাজারদর লাভের অংকেই স্থিতিশীল ছিল। তাই বুঝলেন তো, এবার থেকে জীবনে টাকাকেই ভালোবাসবো। কারন টাকা আমাকে ভালোবাসে। শিল্পটিল্প নিয়ে আর ভাববোই না। মানুষকেও টাকার অংকে ভালোবাসবো, বলবো, আমি তোমাকে ভালোবাসি কারন আমি তোমার টাকাকে ভালোবাসি। কাউকে কখনো আর বলবো না বা বলতে চাইবো না যে, I love U...coz I love Ur eyes...coz I think U could understand the TrueMe...coz i love the way U stare...coz I love when U act stupid...coz I love Ur artist soul... coz I love Ur poetry or Ur music or Ur painting...
No comments:
Post a Comment